দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ২১ জুলাই তৃণমূলের শহিদ দিবস। বছরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন তৃণমূলের জন্য। ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে বাঁধা গেরুয়া-সাদা-সবুজ মঞ্চের সামনে থেকে এক দিকে প্রায় পার্ক স্ট্রিটের মুখ পর্যন্ত ঠাসাঠাসি দাঁড়িয়ে নেত্রীর তীক্ষ্ণ ভাষণে কর্মী-সমর্থকদের তেতে ওঠার দিন। সেইসঙ্গে মাথার ওপর কখনও চড়া রোদ, কখনও আচমকা মেঘলা হয়ে আসার দিন। আবার ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামলেও ভিজতে থাকার দিন। এটাই একুশে জুলাইয়ের চেনা ছবি। যার শেষ পর্যায়ের প্রস্তুতিও শেষ। ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে তৈরি করা হয়েছে জমজমাট মঞ্চ।
প্রস্তুতি একেবারে শেষের মুখে। অনুষ্ঠানের দু’দিন আগে থেকেই জন সমাবেশ খাস কলকাতায়। একদিকে মঞ্চ বাঁধার কাজ, অন্য দিকে বাইরের জেলা থেকে আগত কর্মী সমর্থকদের দেখভাল। সব মিলিয়ে তৃণমূলের নেতা মন্ত্রীদের ব্যস্ততা তুঙ্গে।
ফের ধর্মতলায় ‘দিদি’র ভাষণ শুনতে আসা জনপ্লাবনে কলকাতার রাস্তাঘাট ভাসতে চলেছে। বিভিন্ন জেলা থেকে কর্মী-সমর্থকরা ঢুকতে শুরু করে দিয়েছে। তাঁদের থাকা খাওয়ার জন্য বিরাট আয়োজন করা হয়েছে। নেতাজী ইন্ডোর স্টেডিয়ামের পাশে ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে দশ হাজার কর্মী-সমর্থকের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেনু একই। ডিমের ঝোল, ডাল, ভাত। এপর্যন্ত ৪০ পেটি ডিম আনা হয়েছে সেখানে। ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্র। জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম থেকে আসা কর্মী-সমর্থকরা থাকবেন এখানে । ভোর পাঁচটা থেকেই তাঁরা আসতে শুরু করেছেন। সময় কাটাতে অনেকেই তাস খেলছেন।
শেষ মুহূর্তের প্রচারের জন্য তৃণমূলের তাস অকেজো ট্রাম। প্রায় বছর দুইয়ের বেশি সময় অকেজো পড়েছিল টালিগঞ্জ-বালিগঞ্জ রুটের ২২৩ নম্বর ট্রাম। সেই ট্রামকে নতুন রূপে সাজিয়ে রাস্তায় নামানো হয়েছে। শাসক দলের প্রচারের জন্য ওই ট্রাম রাস্তায় নামলেও তাতে চড়তে পারবেন সাধারোন মানুষও।
গত দু’বছর সংক্রমণ ঠেকাতে কলকাতার বুকে নিজেদের সবচেয়ে বড় বাৎসরিক জমায়েত বাতিল করেছিল তৃণমূল। এবছর তাই আয়োজনে বাড়তি নজর দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের সব প্রান্ত থেকে তৃণমূল নেতা-কর্মীরা হাজির হবেন ধর্মতলায়। সবথেকে বড় আয়োজন করা হয়েছে কসবার গীতাঞ্জলি স্টেডিয়ামে। মালদা, মুর্শিদাবাদ ও দক্ষিণ দিনাজপুরের কুড়ি হাজার নেতা-কর্মী-সমর্থক থাকবেন। করা হয়েছে মেডিক্যাল ক্যাম্প, মোবাইল চার্জিং পয়েন্ট। একলক্ষ মাস্ক ও স্যানিটাইজারের শিশি আনা হয়েছে। যা বিলি করা হচ্ছে। এখানেও ওই বাঁধা মেনু।
সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায় নিজে খতিয়ে দেখছেন, কোনও সমস্যা হচ্ছে কীনা। মঙ্গলবার তিনি গীতাঞ্জলি স্টেডিয়ামে গিয়ে কর্মীদের খোঁজখবর নিয়েছেন। খাওয়া-দাওয়ায় কোনও সমস্যা হচ্ছে কীনা, তাও খোঁজ নিয়েছেন। তৃণমূল কর্মীদের এদিন পাঞ্জাবি উপহার দেন অভিষেক। এই পাঞ্জাবি পরেই একুশের সমাবেশে অংশ নেবেন কর্মী সমর্থকরা। প্রতিবারই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে পাঞ্জাবি উপহার দেওয়া হয়। এবারও তার ব্যাতিক্রম হয়নি। তবে মহিলা কর্মী সমর্থকদের জন্যও পোশাকের ব্যবস্থা করা হয়েছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে পাঞ্জাবি পেয়ে উচ্ছ্বসিত তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা।
ধর্মতলায় দু’বছর পরে মঞ্চে উঠে বক্তৃতা রাখবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা কড়াকড়ি করা হচ্ছে। তাঁর প্রবেশের জন্য থাকবে আলাদা গেট। যে রাস্তা দিয়ে তিনি কালীঘাট থেকে ধর্মতলায় যাবেন, সেখানেও থাকবে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেখানে বসবেন তার পাশেই থাকবে সাংসদ-বিধায়কদের সঙ্গেই আমন্ত্রিতদের বসার জায়গা।
মূল মঞ্চের ঠিক পিছনেই চ্যানেল করা হয়েছে গার্ডরেল দিয়ে। মঞ্চের নিরাপত্তা খতিয়ে দেখছেন পুলিশ। ভিক্টোরিয়া হাউসে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। যানজট এড়াতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ২১ তারিখের জন্য কলকাতার একাধিক রাস্তাকে ভোর থেকে রাত পর্যন্ত ওয়ান ওয়ে হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
সব মিলিয়ে কর্মী-সমর্থকদের উন্মাদনা, আর নেতা-নেত্রীদের ব্যস্ততা নিয়ে তৃণমূলের অপেক্ষা ২১ জুলাইয়ের।