দেশের সময়, ঠাকুরনগর: অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ঠাকুরনগর ছাড়ার পর ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠল এলাকা। এবার ঠাকুরনগর হাসপাতালেই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ বাধে। দু-পক্ষের সংঘর্ষে বিজেপি নেতা অশোক কীর্তনিয়া সহ অনেকেই আহত হয়েছেন।
ঠাকুরবাড়ির মাঠে শুরু হওয়া সংঘাতের রেশ গড়াল হাসপাতালে। শুধু তাই নয়, জখমদের হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে সেখানেও হাতাহাতিতে জড়ালেন তৃণমূল এবং বিজেপি কর্মী সমর্থকেরা। এমনকি, তাঁকেও মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর এবং বনগাঁ উত্তরের বিজেপি বিধায়ক অশোক কীর্তনিয়াও। তাঁরা অভিযোগ করেছেন পুলিশের বিরুদ্ধে।
এই ঘটনা প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর বলেন, “যে ভক্তদের মারা হয়েছে তাঁরা যখন মেডিক্যাল করাতে এসেছিলেন তাঁদের নৃশংসভাবে মারা হয়েছে। একজনের হাত ভেঙেছে, একজনের মাথা ফেটেছে। একই বিষয় ঠাকুরবাড়িতে হয়েছিল। পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করছে না।”
তিনি আরও বলেন, “যাঁরা মেরেছে তাঁদের প্রহরা দেওয়া হচ্ছে। কেন পাঁচ হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল?” তবে কার নেতৃত্বে হামলা হয়েছে তা তিনি বলতে পারবেন না বলে জানান।
পাশাপাশি শান্তনু ঠাকুর আরও বলেন, “আমার গায়ে হাত দেওয়া হয়েছে। পশ্চিমবাংলার সংস্কৃতি, গণতন্ত্র, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো সমস্ত কিছু শেষ।” অশোক কীর্তনিয়া দাবি করেছেন, তাঁকে মারা হয়েছে।
হাসপাতালের বেডে শুয়ে তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার মহিলা সভানেত্রী ইলা বাগচি বলেন, “আমাকে মমতাবালা ঠাকুর দায়িত্ব দিয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্দিরে প্রবেশের আগে যেন তাঁর হাতে জল দেওয়া হয়। সেই মোতাবেক আমরা দাঁড়িয়ে ছিলাম। কিন্তু, শান্তুনু ঠাকুরের সমর্থকরা আমার উপর হামলা করে এবং আমি নীচে পড়ে যাই।”
হাসপাতালে মারামারির সময় বেশ কয়েক জনকে আটক করেছে পুলিশ। অন্য দিকে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে বেশ কয়েক জন পুলিশকর্মী আহত হন। সব মিলিয়ে সকাল থেকে শুরু হওয়া রাজনৈতিক উত্তেজনা সন্ধ্যাতেও বহাল মতুয়া অধ্যুষিত ঠাকুরনগরে।
অশোকের অভিযোগ, অভিষেকের অনুগামীরা তাঁকেও মারধর করেছেন। তিনি আহতদের নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন। সেখানে তাঁর গায়ে হাত তোলেন তৃণমূলের লোকজন। পরনের পাঞ্জাবী ছিঁড়ে দেওয়া হয়। সংবাদমাধ্যমের সামনে অশোককে বলতে শোনা যায়, ‘‘আমার শরীরের কোথায় মারেনি বলুন! গণপিটুনি বোঝেন?’’ আহতদের দেখতে হাসপাতালে যান বনগাঁর সাংসদ শান্তনুও। ‘পশ্চিমবাংলার আজকের রাজনীতি, সংস্কৃতি, গণতন্ত্র সমস্ত কিছু শেষ। আমি এত দিন কিছু বলিনি। আজ অভিষেক যেটা পুলিশকে দিয়ে করাল (গন্ডগোল), সেটা সম্পূর্ণ ভাবে একতরফা ঘটনা।’
ঠাকুরনগরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের যাওয়াকে কেন্দ্র করে রবিবার সকাল থেকেই দফায় দফায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে। রবিবার বেলা গড়াতেই সেই উত্তেজনা ব্যাপক আকার নেয়, মতুয়াধামের ঠাকুরবাড়িতে অভিষেকের জন্য তৈরি তোরণ ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে শান্তনু ঠাকুরের অনুগামীদের বিরুদ্ধে। এমনকী বিকেলে অভিষেককে মূল মন্দিরে ঢুকতে বাধা দেওয়ার ঘটনাও দেখা গেছে।
অভিষেক ঠাকুরনগর ছাড়ার পরই তৃণমূল এবং বিজেপির সংঘর্ষ শুরু হয়। বিজেপির অভিযোগ, তৃণমূলের লোকজনের মারে তাদের বেশ কয়েক জন আহত হন। তৃণমূলও পাল্টা মারধরের অভিযোগ করে। দুই পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হন। তৃণমূল ও বিজেপি, নিজেদের কর্মীদের হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেও ধুন্ধুমার পরিস্থিতি বেঁধে যায়।
ঘটনার রেশ সন্ধ্যা পেরিয়ে গেলেও কাটেনি। মতুয়াধামের রেশ গিয়ে পড়ল হাসপাতালে। অভিযোগ, শান্তনুর অনুগামীদের ওপর চড়াও হয়েছে তৃণমূলকর্মীরা। উঠেছে মারধরের অভিযোগও। পুলিশের সামনেই গোটা ঘটনা বলেছে, দাবি করেছেন বিজেপি কর্মীরা।
অন্য দিকে, তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর হাসপাতালে যান। তাঁদের দলের লোকজনকেও মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন। সব মিলিয়ে ঠাকুরনগরে উত্তেজনা চরমে।
যদিও বিজেপির এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল। তাদের দাবি, বিজেপি কর্মীরাই আক্রমণ করেছেন তৃণমূল কর্মীদের ওপর। এদিকে, দু’পক্ষের ধস্তাধস্তির মধ্যে পড়ে বনগাঁ উত্তরের বিজেপি বিধায়ক অশোক কীর্তনিয়া আহত হয়েছেন। এমনকী পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর মধ্যেও ধস্তাধস্তির খবরও পাওয়া গেছে।
ঘটনার খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে পৌঁছন বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর। তাঁর অভিযোগ, পুলিশ তাঁকে মারধর করেছে। পাল্টা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকও সুর চড়িয়েছেন। এদিন প্রথম থেকেই তাঁকে ঢুকতে বাধা দেওয়া চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন অভিষেক।
মতুয়াধামে দাঁড়িয়ে অভিষেক বলেন যে, কেন্দ্রীয় বাহিনীর হাতে আক্রান্ত হয়েছেন মহিলা কর্মীরা। টুইট করে এমনকী হাবড়ার সভা থেকেও শান্তনু ঠাকুর ও বিজেপির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন।
অন্যদিকে, এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে টুইট করেছেন শুভেন্দু অধিকারী। এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন তিনি।