দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ চাকরির দাবিতে বিক্ষোভে অনড় টেট উত্তীর্ণরা। টানা ১৭ ঘণ্টা অবস্থানে টেট পরীক্ষার্থীরা। রাত কেটেছে রাস্তায়। পথেই সামান্য গড়িয়ে নেওয়া। সকাল থেকে ফের স্লোগানে স্লোগানে ভরেছে করুণাময়ী চত্বর। এক চাকরি প্রার্থীর কথায়, “যতক্ষণ না নিয়োগপত্র হাতে পাচ্ছি, আমাদের অবস্থান চলবে।”
সকালেও নিজেদের অবস্থান থেকে এক চুলও নড়লেন না টেট চাকরিপ্রার্থীরা। সল্টলেটে করুণাময়ীর প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অফিসের সামনে এখনও ধর্নায় বসে রয়েছেন ২০১৪ সালের টেট উত্তীর্ণরা। তাঁরা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, পুলিশ অবস্থান তুলতে এলেও উঠবেন না। চাকরিতে নিয়োগ নিয়ে নিশ্চিত আশ্বাস না পাওয়া অবধি এই আন্দোলন চলবে।
সোমবার দুপুর ২টো থেকে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন ওই চাকরিপ্রার্থীরা। মঙ্গলবার সকালেও পর্ষদের অফিসের সামনে বসে রয়েছেন তাঁরা। নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় তাঁরা অংশ নেবেন না, সেটাও জানিয়ে দিয়েছেন। তাঁদের সরাসরি নিয়োগ করতে হবে।
গতকাল থেকেই টেট উত্তীর্ণদের অবস্থান-বিক্ষোভে কার্যত রণক্ষেত্র হয়ে উঠেছে সল্টলেকের প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ ভবন চত্বর। রীতিমতো রাস্তায় শুয়ে পড়ে বিক্ষোভ দেখান আন্দোলনকারীরা। অভিযোগ, বহু আশ্বাস সত্ত্বেও, দেড় বছর ধরে আন্দোলন করেও প্রাপ্য চাকরি পাননি তাঁরা।
দীর্ঘদিন ধরেই নিয়োগের দাবিতে আন্দোলন চালাচ্ছেন ২০১৪ সালের টেট উত্তীর্ণ প্রার্থীরা। ২০২০ সালে মুখ্যমন্ত্রী নিজে সাংবাদিক বৈঠক করে তাঁদের নিয়োগের কথা ঘোষণাও করেন। প্রথমে ১৬ হাজার ৫০০ পদে নিয়োগের কথা ছিল, পরে আরও কিছু পদে নিয়োগ হবে।
অভিযোগ, তার পরে দু’বছর পেরিয়ে গেলেও নিয়োগ সম্পন্ন হয়নি, উপরন্তু ২০১৪ ও ২০১৭ সালের টেট উত্তীর্ণদের যুগ্মভাবে ১১ হাজার পদে নিয়োগের কথা ঘোষণা করে বসে সরকার। ২০১৭ সালের প্রার্থীরা ঢুকে যাওয়ার ফলে ২০১৪ সালের টেট উত্তীর্ণদের চাকরির সুযোগ কমে যাচ্ছে বলে দাবি তাঁদের।
বিকেল সাড়ে ৫টার পর করুণাময়ী মেট্রো স্টেশন থেকে এপিসি ভবনের সামনে চলে আসেন আন্দোলনকারীরা। গানে, স্লোগানে চাকরিতে নিয়োগের দাবি জানান তাঁরা। আজ সকাল থেকে ফের স্লোগানে স্লোগানে ভরেছে করুণাময়ী চত্বর। পুলিশ জানিয়েছে, যেখানে অবস্থান চলছে সেখানে ১৪৪ ধারা জারি আছে। বিধাননগর কমিশনারেট থেকে প্রচুর মহিলা পুলিশকর্মীও মোতায়েন করা হয়েছে।
পার্লামেন্টের স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে যোগ দিতে সোমবার দিল্লি রওনা দিয়েছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি সাংসদ দিলীপ ঘোষ । দিল্লির উদ্দেশে রওনা দেওয়ার আগে কলকাতা বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে টেট পরীক্ষার্থীদের রাতভর অবস্থান নিয়ে সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন তিনি। একইসঙ্গে দিলীপের খোঁচা, যেভাবে রাজ্য সরকার এগোচ্ছে তাতে ততদিন ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে না নিয়েই সংশয় আছে। একইসঙ্গে প্রশ্ন তোলেন চাকরি প্রার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়েও ৷
২০১৪ সালের টেট উত্তীর্ণদের রাতভর বিক্ষোভ নিয়ে দিলীপ ঘোষ বলেন, “আট ন’ বছর ধরে তাঁরা অপেক্ষা করছেন। পরীক্ষার পাশ করেছেন তাঁরা, চাকরি পাওয়াটা তো তাঁদের অধিকারের মধ্যে পড়ে। ধীরে ধীরে বয়স চলে যাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের মধ্যে একটা চিন্তা আছে ভবিষ্যৎ নিয়ে। অথচ সরকারের তরফে কোনও হেলদোল নেই। কেউ কোনও কথা দিচ্ছে না। খালি নাটক হচ্ছে। কেউ একটু ফোনে কথা বলে নিচ্ছে। কেউ দু’জনকে ডেকে নিয়ে নাটক করছে। এখন যা পরিস্থিতি এই সরকার থাকবে কি না, ক’দিন থাকবে, সরকারের নেতারা কে কোথায় থাকবে সরকার বেশি চিন্তিত। এতে পরীক্ষার্থীদেরও উদ্বেগ বেড়েছে। জানি না কতদিনে কী হবে। আদৌ চাকরি হবে কি না!”
তৃণমূলের বিধায়ক তাপস রায় এই নিয়োগ নিয়ে বলেন, “বোর্ড এবং সরকার শিক্ষা দফতর পুরো বিষয়টাকে নিশ্চিতভাবে আমার মনে হয় খতিয়ে দেখছে। যেটা যথাযথ সেটাই হওয়া উচিৎ সেটাই করা উচিৎ।” সোমবার থেকে করুণাময়ীতে ধরনায় বসেছেন ২০১৪ সালে টেট পাশ করা নট ইনক্লুডেড চাকরি প্রার্থীরা। দ্রুত নিয়োগের দাবি তো তাঁদের রয়েছেই। একইসঙ্গে তাঁরা সদ্য প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি মেনে ইন্টারভিউ দিতেও নারাজ। নতুন বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ২০১৪ সাল ও ২০১৭ সালে টেট উত্তীর্ণদের ইন্টারভিউ হবে একসঙ্গে। এখানেই আপত্তি ২০১৪ সালে পাশ করা চাকরিপ্রার্থীদের।
তাঁরা জানান, ইতিমধ্যেই দু’বার তাঁদের ইন্টারভিউ হয়েছে। এত বছর ধরে নিয়োগের অপেক্ষা করতে করতে কারও বয়স পেরিয়ে গিয়েছে ইন্টারভিউয়ে বসার। ফলে নতুন করে আর তাঁরা ইন্টারভিউ দিতে নারাজ। এই নিয়েই সোমবার রাতভর করুণাময়ীতে বসেছিলেন তাঁরা। মঙ্গলবার সকালেও অবস্থান চলছে। তাঁদের সাফ দাবি, ইন্টারভিউ দেবেন না। এক বিক্ষোভকারী জানান, “প্রাক্তন পর্ষদ সভাপতির পথেই তো বর্তমান পর্ষদ সভাপতিও চলছেন। উনি কেন বুঝতে পারছেন না আমরা দীর্ঘ আট বছর ধরে বঞ্চিত। কেন উনি ২০১৭’র সঙ্গে ২০১৪দের ইন্টারভিউ দিতে বলছেন? দু’টো সম্পূর্ণ আলাদা।”