
দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ফ্ল্যাট থেকে উঁকিঝুঁকি, অনেক লুকোচুরি, মামলামোকদ্দমার পর অবশেষে রাত একটায় শিক্ষক দুর্নীতি মামলায় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি তথা তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যকে গ্রেফতার করল ইডি। বয়ানে অসঙ্গতি এবং জেরায় অসহযোগিতার অভিযোগ এনে সোমবার রাতেই পলাশিপাড়ার বিধায়ককে গ্রেফতার করা হয়েছে। ইডির তরফে সোমবার মানিককে সিজিও কমপ্লেক্সে রাতভর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু সেই সময় তিনি ইডি আধিকারিকদের তদন্তে সহযোগিতা করেননি বলে অভিযোগ উঠেছে।

তারপরেই কৌতূহল তৈরি হয়েছে, মানিক যে রক্ষাকবচ পেয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্ট থেকে, তার কী হল?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়েই জানা গেল, ওই রক্ষাকবচের মামলা, মেয়াদ ইত্যাদি প্রভৃতি দেখে নিয়েই তৃণমূল বিধায়ককে (Manik Bhattacharya) গ্রেফতারের পথে এগিয়েছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট।

নিয়োগ-দুর্নীতি মামলায় মানিক কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে যে নথি জমা দিয়েছিলেন, সেখানে একাধিক গরমিল রয়েছে বলে ইডি সূত্রে খবর। সে কারণেই এই জিজ্ঞাসাবাদ চলছিল। শেষে গ্রেফতার করা হল তাঁকে।
প্রসঙ্গত, গত ২৭ সেপ্টেম্বর বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছিলেন, সেই রাতেই সিবিআইয়ের মুখোমুখি হতে হবে মানিককে। কিন্তু মানিক সেদিন দিল্লিতে। তারপর শর্তসাপেক্ষে প্রথমে দুদিন ও পরে দশ দিনের রক্ষাকবচ পান মানিক।
সেই রক্ষাকবচের মেয়াদ শেষ হয় গতকাল ১০ অক্টোবর। আর ইডি তাঁকে গ্রেফতার করেছে ক্যালেন্ডারে ১১ অক্টোবর পড়ার পর। যদিও ইডির ক্ষেত্রে মানিককে (Manik Bhattacharya) গ্রেফতারে কোনও বাধা ছিল না। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ শুধুমাত্র প্রযোজ্য ছিল সিবিআই মামলার ক্ষেত্রেই।

গতকাল বিকেলে মানিককে ডেকেছিল ইডি। কিন্তু কেন্দ্রীয় এজেন্সি সূত্রে খবর, নির্ধারিত সময়ের বেশ কয়েক ঘণ্টা পর মানিক পৌঁছন সিজিও কমপ্লেক্সে। তারপর রাত একটার সময়ে মানিককে গ্রেফতার করা হয়। মঙ্গলবার তাঁকে আদালতে তোলা হবে।
মানিকের গ্রেফতার প্রসঙ্গে আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘‘মানিক মরিয়া হয়ে চেষ্টা করেছেন সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে তদন্ত এড়াতে। তদন্তে সহযোগিতা করেননি। ইডি হেফাজতে নিয়ে ভাল করেছে। এঁদের হেফাজতে নিয়েই তদন্ত করা দরকার। আশা করা যায়, এর পর আরও অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হবে।’’

এর আগে হাই কোর্ট এই মামলায় তদন্তভার দিয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই-কে। টেট-কাণ্ডে কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করেই সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিলেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অপসারিত সভাপতি মানিক। প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগ-দুর্নীতি মামলায় শুনানি শেষ হলেও সুপ্রিম কোর্ট রায় ঘোষণা স্থগিত রাখে।

পাশাপাশি শীর্ষ আদালত এ-ও জানিয়ে দিয়েছিল, প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগ-দুর্নীতি মামলায় রায় ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত মানিককে কোনও ভাবেই গ্রেফতার করতে পারবে না সিবিআই। তবে, টেট মামলায় সিবিআই তদন্ত করার যে নির্দেশ কলকাতা হাই কোর্ট দিয়েছিল, তাতেও স্থগিতাদেশ দেয়নি দেশের শীর্ষ আদালত। কিন্তু এর মধ্যেই মানিককে গ্রেফতার করল ইডি।

