গত মাসে হাসিনার নয়াদিল্লি সফরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে শীর্ষ বৈঠকের পরে মোট দশটি সমঝোতা চুক্তি সই হয়েছে। তবে সূত্রের মতে, আলোচনার সবচেয়ে বড় দিকটি হল তিস্তা নিয়ে পদক্ষেপ।
ওয়েবডেস্কঃতিস্তা নদীর বাংলাদেশের অংশে জলাধার নির্মাণ করে সেচ ও পানীয় জলের সমস্যা নিরসন এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রস্তাবিত মহা পরিকল্পনা নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঢাকায় সাংবাদিক বৈঠকে তিনি জানিয়েছেন, ভারতের পাশারপাশি চিনও এই প্রকল্পে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তবে সবদিক বিবেচনা করে তাঁর পছন্দ ভারত। তিনি প্রকল্প বাস্তবায়নের ভার পড়শি দেশকে দিতে চান।
তাৎপর্যপূর্ণ হল, হাসিনা এই ঘোষণা করেছেন চিন সফর শেষে দেশে ফেরার তিনদিনের মাথায়। তাঁর বেজিং সফরে তিস্তা নিয়েও কথা হয়। চিনে যাওয়ার দিন পনেরো আগে ভারত সফরে এসে দিল্লিতেও এই প্রকল্প নিয়ে কথা বলে যান তিনি। সেই আলোচনার প্রেক্ষিতে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর যৌথ ঘোষণাপত্রে বলা হয় ভারতের একটি কারিগরি দল খুব শিগগির ঢাকা সফর করে তিস্তা মহা পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত কথা বলবে।
তিস্তা নিয়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে জটিলতা তৈরি হয় ওই নদীর জলবণ্টন চুক্তি ঘিরে। নদীটি ভারত থেকে বাংলাদেশের প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশকে দেওয়ার মতো যথেষ্ট পরিমাণ জল নেই বলে এই ব্যাপারে চুক্তিতে সায় দেননি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, বাংলাদেশকে জল দিলে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর প্রান্তের মানুষ সমস্যায় পড়বেন।
তারপরও তিস্তার জলের ন্যায্য পাওনা আদায়ে কূটনৈতিক উদ্যোগ চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ঢাকা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে তিস্তা অববাহিকায় বিরাট জলাধার তৈরি করে বৃষ্টির জল ধরে রাখার প্রকল্প রচনা করেছে। সেই তিস্তা মহা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আগ্রহী চিন। ঢাকায় চিনের রাষ্ট্রদূত একাধিকবার এই ব্যাপারে তাঁর দেশের আগ্রহের কথা ঘোষণা করেছেন।কিন্তু বেজিংয়ের আগ্রহে আপত্তি আছে ভারতের।
উত্তরবঙ্গে শিলিগুড়ির কাছে ‘চিকেন নেক’ বলে চিহ্নিত অংশ যা ভারতের নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত স্পর্শকাতর সেখান থেকে মাত্র একশো কিলোমিটার দূরে বাংলাদেশের রংপুর। যেখানে বাস্তবায়িত হওয়ার কথা তিস্তা মহা পরিকল্পনা। নিরাপত্তার কারণেই ভারত চায় না সীমান্তের অপারে চিনের এমন সক্রিয় উপস্থিতি। এই ব্যাপারে ভারতের আপত্তি বাংলাদেশের অজানা ছিল না।
শেখ হাসিনার গত মাসের দিল্লি সফরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ফের এই বিষয়ে কথা হয়। সেই সফরে ভারতের তরফে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বাস দেওয়া হয়, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ভারত আগ্রহী। এজন্য প্রয়োজনীয় অর্থ ও কারিগরি সহায়তা নয়াদিল্লি দিতে প্রস্তুত। দিল্লি সফর শেষে দেশে ফিরে গিয়ে হাসিনা ভারতের এই বিষয়ে আগ্রহের প্রশংসা করে তখনই বলেছিলেন তিস্তা মহা পরিকল্পনা দিল্লি করে দিলে মন্দ কী। চিন সফর শেষে দেশে ফিরেও ভারতকে দিয়েই ওই প্রকল্প বাস্তবায়নে নিজের আগ্রহের কথা বলেছেন হাসিনা।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণা ভারতের জন্য অত্যন্ত স্বস্তিদায়ক। কারণ, ভারতের আপত্তি ছিল চিনকে নিয়ে। অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্যও এই ঘোষণা স্বস্তির। তিস্তার জল দিতে বারে বারে আপত্তির কথা জানিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। অন্যদিকে, মনমোহন সিংহের পর নরেন্দ্র মোদীও তাঁকে এই ব্যাপারে রাজি করাতে ব্যর্থ হয়েছেন।
হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী, তিস্তা মহা পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে ভারতের উপর জল নির্ভরতা অনেটাই কমবে। কারণ, বড় জলাধারে বৃষ্টির জল ধরে রাখা গেলে বাংলাদেশের উত্তর প্রান্তের জেলা রংপুর ডিভিশনের সেচ ও পানীয় জলের সমস্যা অনেকটাই মিটে যাবে। তাৎপর্যপূর্ণ হল, হাসিনার গতমাসের দিল্লি সফরে রং পুরেই ভারতীয় হাই কমিশনের একটি শাখা অফিস খোলার সিদ্ধান্ত হয়। মনে করা হচ্ছে তিস্তা মহা পরিকল্পনার কাজে ভারতের নজরদারি নিশ্চিত করতেই এই সিদ্ধান্ত হয়।
তিস্তা প্রকল্পের ক্ষেত্রে ভারতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে, এ কথা ঘোষণার পাশাপাশি হাসিনা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের দক্ষিণে বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনার জন্য চিনকে আহ্বান করা হয়েছে। তারা পরিকাঠামো ক্ষেত্রে অর্থ বিনিয়োগ করবে। আপাতত বাংলাদেশ-চিন মৈত্রী সেতু তৈরি করবে বেজিং।