কলকাতা : শনিবার সকালে হঠাৎই স্বাস্থ্য ভবনে পৌঁছে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঠিক যেখানে জুনিয়র ডাক্তাররা প্রায় ৯৬ ঘণ্টা ধরে অবস্থান আন্দোলন করছেন। দেখুন ভিডিও
মুখ্যমন্ত্রী ধর্নাস্থলে পৌঁছতেই জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশ উই ওয়ান্ট জাস্টিস স্লোগান তুলতে থাকেন। ঠেলাঠেলি শুরু হয়ে যায়। দেখা যায় তার মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর হাতে মাইক তুলে নিয়েছেন। ডাক্তারদের শান্ত হতে বলেন তিনি। কিন্তু পরিস্থিতির আকস্মিকতায় ব্যাপারটা থিতু হতেই সময় লেগে যায়।
ডাক্তারদের ধর্নামঞ্চের সামনে গিয়ে সাংবাদিক বৈঠকের মাধ্যমে তাঁদের উদ্দেশে বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘আমার নিরাপত্তাজনিত নানা নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তা সত্ত্বেও আমি নিজে ছুটে এসেছি। আপনাদের আন্দোলনকে কুর্নিশ জানাচ্ছি। আমি আপনাদের ব্যথা বুঝি। আমিও ছাত্র আন্দোলন থেকে উঠে এসেছি।’’
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আপনাদের অনুরোধ করতে এসেছি। যদি বলতে দেন খুশি হব’। কিন্তু এর পরেও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি ঠিক করতে সময় লাগে। মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের বলেন, “শান্ত হন। আমিও ছাত্র আন্দোলন থেকে উঠে এসেছি। আপনাদের মাইকটা কি ঠিক করা যাবে? আমি যখন এসেছি তখন আমি কাজ করব”।
কোলাহল কিছুটা কমতে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমাকে পাঁচ মিনিট বলতে দিন। আমার নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও, আমি আমি আপনাদের কাছে ছুটে এসেছি। আমি আপনাদের আন্দোলনকে কুর্ণিশ জানাই।”
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কাল সারারাত ঝড়জল হয়েছে, তাতে আপনাদের যেমন কষ্ট হয়েছে, আমারও কষ্ট হয়েছে। আমি ঘুমোতে পারিনি। আজ তেত্রিশ, চৌত্রিশ দিন হয়ে গেল। আমারও ঘুম হয়নি। কারণ, আপনারা যখন রাস্তায় থাকেন, আমাকেও জেগে থাকতে হয়। কারণ, আপনারা রাস্তায় থাকলে আমাকেও পাহারাদার হিসাবে জেগে থাকতে হয় । এত দুর্যোগের মধ্যে আপনারা অনেক কষ্ট পেয়েছেন। আমি কথা দিচ্ছি, যদি আপনারা কাজে ফিরতে চান, আমি আমার অফিসারদের সঙ্গে তা নিয়ে কথা বলব। আমি একা সরকার চালাই না। মুখ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব রয়েছেন। কারও দোষ থাকলে ব্যবস্থা নেব।
আন্দোলনকারীদের দাবিগুলি সরকার বিবেচনা করবে। আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘যদি আপনারা কাজে ফিরতে চান, আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আপনাদের দাবিগুলি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করব। আমি একা সরকার চালাই না। মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, ডিজি সকলের সঙ্গে আমি আপনাদের দাবি নিয়ে আলোচনা করব। যদি কেউ দোষী হন, শাস্তি পাবেন। সিবিআইকে অনুরোধ করব, দ্রুত তদন্ত শেষ করুন। দোষীদের ফাঁসি হোক। কেউ দোষী থাকলে আমি নিশ্চয় ব্যবস্থা নেব। এটুকু বলতেই আমি এসেছি।’’
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘‘আপনারা আমাদের ঘরের ভাইবোন। আমি কোনও অবিচার হতে দেব না। সব হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতি নতুন করে তৈরি করা হবে। তাতে জুনিয়র ডাক্তার, সিনিয়র ডাক্তার, নার্স, পুলিশ থাকবে। এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আরজি করের রোগী কল্যাণ সমিতি আমি ভেঙে দিলাম। নতুন করে তৈরি করা হবে। বাকি আপনাদের যা দাবি আছে, যদি সত্যি কেউ দোষী হয়, তারা শাস্তি পাবে। কেউ আমার বন্ধু বা শত্রু নয়। যাঁদের আমার বন্ধু বলছেন, আমি তাঁদের চিনিই না। প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাঁরা এসেছেন। সাধ্যমতো পদক্ষেপের চেষ্টা করব। আপনারা কাজে ফিরুন। আমি কোনও আপনাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করব না।’’
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন এ কথাগুলো বলেন, তখন জুনিয়র ডাক্তাররা কার্যত শান্ত হয়েই শোনেন। মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের আশ্বাস দেন, হাসপাতালের প্রশাসনিক ব্যবস্থাতেও তিনি সংস্কারে হাত দিয়েছেন। হাসপাতালে রোগী কল্যাণ সমিতি থেকে রাজনৈতিক নেতাকে সরিয়ে অধ্যক্ষ বা সুপারদের সেই পদে বসানোর আশ্বাস দেন।
ধর্নামঞ্চে আন্দোলনকারীদের যা খাবার দেওয়া হচ্ছে, নির্বিচারে তা না খাওয়ার অনুরোধ করেছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘আপনাদের কাছে আসা মানে নিজেকে ছোট করা নয়। বড় করা। এটা আমার শেষ চেষ্টা । আমি আপনাদের আন্দোলনের সমব্যথী, সমসাথী। ভাল থাকুন। সুস্থ থাকুন। ।’’
মমতা পৌঁছনোর পরেও ধর্নাস্থল থেকে বিচারের দাবিতে স্লোগান ওঠে। বেশ কয়েক মিনিট মাইক হাতেই দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বক্তব্য শুরু করতে পারেননি। ধর্নাস্থলে খানিক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী অনুরোধ করছেন, তাঁকে কথা বলতে দেওয়ার জন্য।
উল্লেখ্য, জুনিয়র ডাক্তারেরা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার তাঁদের প্রতিনিধিদের ডেকে পাঠানো হয়েছিল নবান্নে। ৩২ জন সেখানে গিয়েছিলেন। কিন্তু বৈঠক ভেস্তে যায়। ডাক্তারেরা বৈঠকের সরাসরি সম্প্রচার দাবি করেছিলেন। কিন্তু সরকার তাতে রাজি হয়নি। সে দিন নবান্নের সভাঘরে দু’ঘণ্টার বেশি সময় বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। পরে তিনি বেরিয়ে যান। সাংবাদিক বৈঠক করে মমতা জানান, সুপ্রিম কোর্টে এই সংক্রান্ত মামলা বিচারাধীন থাকায় সরাসরি সম্প্রচার সম্ভব নয়।