শুক্রবার সকাল থেকেই ফের একাধিক তৃণমূল নেতা, মন্ত্রীর বাড়িতে ইডি হানা। তৃণমূল নেতা তাপস রায় থেকে শুরু করলে দমকল মন্ত্রী সুজিত বসুর বাড়িতে তল্লাশি চালাচ্ছে ইডি আধিকারিকরা। সন্দেশখালির ঘটনার পর ফের রাজ্যে ইডি হানা। ইডি হানা নিয়ে তৃণমূল নেতৃত্বকে কটাক্ষ করলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
কী বললেন শুভেন্দু?
শুভেন্দু এদিন জানান, ইডি আধিকারিকরা তথ্য প্রমাণ পেয়েছে বলেই আজকেই পুণ্য দিনে পুণ্য কাজ করতে বেরিয়ে পড়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু সরাসরি পুর নিয়োগ দুর্নীতিতে যুক্ত। শুভেন্দু বলেন, ‘ সুজিত বসুর দুই ঘনিষ্ঠ আত্মীয়, দুই শ্যালকের দুই স্ত্রী কামারহাটিতে পুরসভায় চাকরি পেয়েছে। ব্যাগ গোছানো শুরু করুন। সঙ্গে শীতের জিনিসও রাখবেন।’
দেখুন ভিডিও
পালটা দিলেন কুণাল
ইডি হানা নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া দিলেন তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ। কুণাল ঘোষ এদিন বলেন, ‘ ইডির তল্লাশি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। গোটা ঘটনাটা ঘটছে বিজেপির অঙ্গুলি হেলনে। বিজেপির তৈরি করে দেওয়া প্রতিহিংসার রাজনীতির স্ক্রিপ্টের উপর দাঁড়িয়ে।’ তাঁর কথায়, রাজনীতির ময়দানে বিজেপি হেরে যাচ্ছে, হেরে গিয়েছে, সেই কারণেই কেন্দ্রীয় এজেন্সি দিয়ে এঁদেরকে উৎপাত করা হচ্ছে। তৃণমূলের মন্ত্রী শশী পাঁজা এই ঘটনার প্রতিবাদ জানান। শশী এদিন জানান, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকেই এই ঘটনা হচ্ছে। এটা বাংলার মানুষের কাছে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। বিজেপির তরফে এই এই ঘটনা ঘটানো হচ্ছে, এটা জলের মতো পরিষ্কার।
রাজ্যের দমকলমন্ত্রী সুজিত বসুর এলাকায় বৃহস্পতিবার সকাল সকাল যেন ভোটের তৎপরতা। হাতে লাঠি, কাঁধে বন্দুক ঝুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা। এলাকায় জমায়েত করতে দেওয়া হচ্ছে না। কোথাও সামান্য ভিড় জমতে দেখলেই তাঁরা এগিয়ে যাচ্ছেন। গিয়ে জিজ্ঞাসা করছেন জমায়েতের কারণ। তার পর জমায়েত এলাকা থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এলাকায় সকাল থেকে অনবরত টহল দিচ্ছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। রাজ্যে বিধানসভা কিংবা পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময়ে এই ছবি দেখা যায়। বহিরাগতের প্রবেশ ঠেকাতে এবং ভোটারদের মনোবল বৃদ্ধি করতে এ ভাবেই অস্ত্র নিয়ে টহল দেয় কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা।
সকাল থেকে দেখা গিয়েছে, এলাকায় টহল দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা। তাঁদের সঙ্গে লাঠি, বন্দুক ছাড়াও রয়েছে টিয়ার গ্যাসের সেল। কোথাও জটলা দেখলেই তাঁদের প্রশ্ন, ‘কেন এখানে দাঁড়িয়ে আছেন?’ অর্থাৎ, কোথাও লোক জড়ো হতে দিতে চাইছে না ইডি। এমনকি, মন্ত্রীর বাড়ির সামনে কাউকে অকারণে বসে থাকতে দেখলেও সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
সন্দেশখালিতে তাঁদের অভিযোগ ছিল, শাহজাহানের বাড়িতে ঢোকার আগেই বাইরে ৮০০ থেকে ১০০০ লোক জড়ো হয়ে গিয়েছিল। ইডির অনুমান, ভিতর থেকে ফোন করে অনুগামীদের ডেকেছিলেন শাহজাহান নিজে। তার পর পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে গিয়েছেন। সে দিন বিক্ষুব্ধ জনতার হাতে মার খেতে হয়েছিল ইডি আধিকারিকদের। তিন জনকে হাসপাতালেও ভর্তি করানো হয়েছিল। শাহজাহানের খোঁজ মেলেনি এখনও।
শ্রীভূমি সুজিতের এলাকা। সেখানে তিনি যথেষ্ট প্রভাবশালী। ফলে তাঁর অনুগামীর সংখ্যাও এলাকায় কম নয়। সন্দেশখালির মতো সুজিতের জন্যও শ্রীভূমিতে ইডির বিরুদ্ধে লোক জড়ো হয়ে যেতে পারে, আগেই তার জন্য প্রস্তুত হয়ে এসেছে কেন্দ্রীয় সংস্থা। যাঁরা এলাকায় টহল দিচ্ছেন, তাঁদের প্রত্যেকের মাথায় রয়েছে হেলমেট। কেউ আক্রমণ করলে মাথায় যাতে গুরুতর আঘাত না লাগে, তার জন্য এই ব্যবস্থা।
সন্দেশখালির ঘটনার এক সপ্তাহের মধ্যেই রাজ্যে ফের ইডি হানা। শুক্রবার সকাল থেকে রাজ্যের দমকল মন্ত্রী সুজিত বাড়ির শ্রীভূমির দুটি বাড়িতে, বরাহনগরের তৃণমূল বিধায়ক তাপস রায়, উত্তর দমদম পুরসভার কাউন্সিলর সুবোধ চক্রবর্তীর বাড়িতে ইডি হানা দেয়। ইডি আধিকারিকদের সঙ্গে ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা।
সন্দেশখালিতে তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহান বাড়িতে তল্লাশি চালানোর সময় আক্রান্ত হতে হয়েছিল ইডি আধিকারিকদের। সেই কারণে এদিন বাড়তি সতর্কতা নিয়েছেন কেন্দ্রীয় জওয়ানরা। আত্মরক্ষার স্বার্থে বাড়তি সাজসজ্জা দেখা গিয়েছে তাঁদের। মাথায় হেলমেট, ঢাল নিয়ে এদিন আসেন কেন্দ্রীয় জওয়ানরা।
রাজ্যে পুর নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তে সুজিত বসুর বাড়িতে ইডির হানা। শুক্রবার সাতসকালে দমকলমন্ত্রী সুজিত বসুর দুটি বাড়িতে তল্লাশি অভিযান শুরু করেছে ইডি। সকাল ৭টা নাগাদ লেকটাউনের দুটি বাড়িতে আচমকা হাজির হন ইডির আধিকারিকরা। মন্ত্রীর বাড়ি বাইরে রয়েছে বিশাল কেন্দ্রীয় বাহিনী।
শুক্রবার সুজিত বসু ছাড়াও উত্তর দমদম পুরসভার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর সুবোধ চক্রবর্তীর বাড়িতে হানা দিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। অন্যদিকে বরাহনগরের তৃণমূল বিধায়ক তাপস রায়ের বউবাজারের বাড়িতেও হাজির ইডির আধিকারিকরা।
উল্লেখ্য, প্রসঙ্গত, ২০১৪ ও ২০১৬ সাল থেকে পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে রাজ্যের আরও একাধিক পুরসভায় তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে ইডি ও সিবিআই। নজরে রয়েছে দক্ষিণ দমদম পুরসভাও। ২০১৬ সালে দক্ষিণ দমদম পুরসভার উপ পুরপ্রধান ছিলেন সুজিত বসু। গত বছর আগস্টে সিবিআই তাঁকে তলব করেছিল।