তিনি আবার দেশে ফিরে আসবেন। দেশে ফিরেই মুহাম্মদ ইউনূসের বিচার করবেন। জোর গলাতেই এই কথা জানালেন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে তাঁর দেশের ফেরার জন্য সবাইকে অপেক্ষা করতে হবে বলেও জানান তিনি।
দেশের সময় ওয়েবডেস্ক : আজ অর্থাৎ মঙ্গলবার গোটা বাংলাদেশে হরতাল পালনের ডাক দিয়েছে আওয়ামী লিগ। গতবছর ৫ অগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর বাংলাদেশের সাবেক শাসকদল আগামীকালই প্রথম গোটা দেশে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনের কর্মসূচি পালন করতে চলেছে।
হরতালের আগে সোমবার রাতে আওয়ামী লিগের সোশ্যাল মিডিয়ার নিয়মিত প্রোগ্রাম ‘দায় মুক্তি’-তে যোগ দেন দিল্লিতে অবস্থানরত সাবেক প্রধানমন্ত্রী তথা আওয়ামী লিগ নেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সেই অনুষ্ঠানে আওয়ামী লিগের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি জানি আপনারা খুবই দুর্যোগের মধ্যে আছেন। তার মধ্যেও আমাদের আন্দোলন কর্মসূচি সফল করতে হবে। আমি সবাইকে বলছি, হরতালকে সফল করে তুলুন। আমি সকলকে বলছি মানুষের কাছে যান এবং তাদের পাশে নিয়ে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ুন।’
হাসিনা এদিন, গণঅভ্যুত্থানের সময় আন্দোলনকারীদের আক্রমণে নিহত বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মীর স্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন। সেখানেই তিনি হরতালের প্রসঙ্গ টানেন।
প্রসঙ্গত, গত ৩১ জানুয়ারি আওয়ামী লিগ ফেব্রুয়ারি মাস ব্যাপী আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করে। সেই কর্মসূচি শুরু হয় ৫ ফেব্রুয়ারি। সেদিন থেকে দফায় দফায় লিফলেট বিলি, দেওয়াল লিখন এই সব কর্মসূচি চালায়। এরই মাঝে বাংলাদেশের অন্তবর্তী সরকার ‘অপারেশন ডেলিভ হান্ট’ নামে গ্রেফতারি অভিযান শুরু করেছে। রবিবার পর্যন্ত সেই অভিযানে পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষকে গ্রেফতার করা হয়।
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে ও আওয়ামী লিগেরও অভিযোগ, ধৃতদের প্রায় ৯০-৯৫ শতাংশ তাদের দলের সাধারণ নিরীহ কর্মী-সমর্থক। তাঁরা কেউ দেওয়ালে জয় বাংলা লিখেছেন, কেউ জয় হাসিনা লিখেছেন, কেউ জয় বঙ্গবন্ধু লিখেছেন। এই সমস্ত অপরাধে তাদের পুলিশ গ্রেফতার করেছে। এভাবে আওয়ামী লিগের আন্দোলনকে ভেস্তে দিতে চাইছে অন্তর্বর্তী সরকার, অভিযোগ শেখ হাসিনারও।
তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে দমন-পীড়নেরও অভিযোগ আনেন। সেই সঙ্গে দলের নেতা-কর্মীদের বলেন, যার পক্ষে যেভাবে সম্ভব এই হরতাল কর্মসূচি সফল করতে হবে। আওয়ামী লিগের একাধিক নেতা জানাচ্ছেন, তাঁরা বিভিন্ন রকম কৌশল নিয়েছেন। যাতে এই হরতাল সম্পূর্ণ হয়। তাঁরা মানুষজনকে অনুরোধ করেছেন, শুধু দোকান হাট-বাজার বন্ধ নয়, কেনাকাটা মঙ্গলবার বয়কট করতে। তাঁদের বক্তব্য ইউনুস সরকার যে পরিস্থিতি তৈরি করেছে তাতে মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক অধিকার কোনওটাই থাকছে না। এই পরিস্থিতিতে সকলকে পাশে নিয়ে আওয়ামী লিগ আন্দোলন করতে চাইছে। সেই কারণেই অপারেশন ডেভিল হান্ট শুরু করেছে ইউনুস সরকার।
হাসিনা এদিন বার বার ইউনুস সরকারের বিরুদ্ধে সরব হন। বলেন, ‘এটা কেমন সরকার যারা বিচার-আইন কোনওকিছুই মানছে না। গণ অভ্যুত্থানের সময় পুলিশ কর্মী ও আওয়ামী লিগের নেতা-কর্মীদের হত্যার ঘটনায় অভিযুক্তদের সরকার যে দায়মুক্তি দিয়েছে অর্থাৎ তাদের বিরুদ্ধে কোনও মামলা হবে না বলেছে, হাসিনা সেই সিদ্ধান্তে তীব্র সমালোচনা করেন।’ আরও বলেন, ‘আমি একদনি দেশে ফিরবোই। দেশে ফিরে এই অন্যায়-অবিচারের বিচার করব। ইউনুস ও তাঁর অনুগতদের কাঠগড়ায় তুলব। এবং যারা আজকে বিচারহীনতার শিকার, তাদের প্রত্যেককে বিচার পাইয়ে দেব।’
জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের বিচার দেবেন শেখ হাসিনা। আর সেই বিচার দিতে বাংলাদেশেও ফিরবেন তিনি। কিন্তু কবে? তা অবশ্য জানা নেই। এদিন দেশজুড়ে চলা হাসিনা-বিরোধী আন্দোলনে মৃত পুলিশ পরিবারের কর্মীদের এমনটাই আশ্বাস দিলেন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভিডিয়ো কলের মাধ্যমে তাদের সঙ্গে কথা বললেন তিনি। বিচার যে পাবে তারা, সেই আশ্বাসটা দিলেন তিনি।
তাঁর কথায়, ‘ওরা যতই দায়মুক্তি দিক, হত্যার কখনও দায়মুক্তি হয় না। হত্যার বিচার হয়। আমি আসি, অবশ্যই বিচার দেব। আমার বাবা-মা, ভাইকে যারা হত্যা করেছিল, তাদেরও দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আমি এসে বিচারের ব্যবস্থা করেছিলাম।’
এরপর নিহত পুলিশ কর্মীদের পরিবারের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘সন্তানদের দেখাশোনা করুন। আমি পাশে থাকব। এর বিচার হবে। এত অরাজকতা, অন্যায়, অবিচার আল্লাহ সইবেন না।’
উল্লেখ্য, দেশছাড়ার পরেও মাঝে মধ্যেই বাংলাদেশের নাগরিক, দলীর নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ভিডিয়ো বার্তা দিয়ে থাকেন শেখ হাসিনা। সম্প্রতি, হাসিনার এমন ফোন মাধ্যমে দেশের নাগরিক-কর্মীদের উদ্দেশে বার্তা দেওয়ার প্রসঙ্গে ক্ষেপে গিয়েছিল ইউনূসের তদারকি সরকার। হাসিনার বিরুদ্ধে বিজ্ঞপ্তিও জারি করেছিল তারা।
সেদেশের অন্দরে অস্থিরতার মাঝেই তৈরি হচ্ছে নির্বাচনী আবহ। কেউ না মুখ খুললেও, বাংলাদেশে যে খুব শীঘ্রই জাতীয় নির্বাচন হতে চলেছে বলেই মত ওয়াকিবহাল মহলের। এমনকি, এই নির্বাচন নিয়ে বর্তমান তদারকি সরকারের উপর নানা ভাবে চাপ তৈরি করছে বিএনপি। ফলত, এই রাজনৈতিক আবহেই নিজেদের পালে হাওয়া দেওয়ার চেষ্টা করছে হাসিনার দল আওয়ামী লীগ। দেশের অন্দরে নানাবিধ কর্মসূচি শুরু করে দিয়েছে তারা। জনমানসে ফের একবার প্রাসঙ্গিক হতে আঁটছে পরিকল্পনা।