দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ স্বপ্ন দেখছিলেন, মেয়েকে দারুণ করে পড়াবেন। ডাক্তার তৈরি করবেন। কিন্তু কোথা থেকে কী যেন হয়ে গেল! হাইকোর্টের নির্দেশে চাকরি গিয়েছে বাঁকুড়ার ওন্দা ব্লকের মেদিনীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রাক্তন সদস্যা পূর্ণিমা নন্দীর। আদালতের সেই নির্দেশের পরেই পূর্ণিমার ঘরের আলো যেন নিমেষে উবে গিয়েছে।
আদালতের নির্দেশে সম্প্রতি গ্রুপ ডিতে কর্মরত ১৯১১ জনের চাকরি গিয়েছে। আদালত স্পষ্ট জানায়, এই ১৯১১ জনের নিয়োগ ছিল অবৈধ। সেই তালিকায় ১৫৪০ নম্বরে নাম রয়েছে পূর্ণিমার।
ওন্দার ভুলনপুর হাইস্কুলে গ্রুপ ডি কর্মী হিসেবে চাকরি করতেন পূর্ণিমা। সংবাদমাধ্যমের সামনে তিনি জানান, কোর্টের নির্দেশ আসার পর স্কুল থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, আর যেতে হবে না। কান্নায় ভেঙে পড়ে পূর্ণিমা দেবী, চোখ মুছতে মুছতে তিনি বলেন, ‘শালবনিতে পরীক্ষার সিট পড়েছিল। পরীক্ষা দিয়েই চাকরি পেয়েছিলাম। ‘মেয়েটাকে অনেক স্বপন নিয়ে বাঁকুড়া শহরে রেখে পড়াচ্ছিলাম। কিন্তু এখন আমি কী করব।’
পূর্ণিমারর অবশ্য দাবি, তিনি অবৈধভাবে চাকরি পাননি। পরীক্ষা দিয়ে যোগ্য হিসেবেই নিয়োগ পেয়েছিলেন। অসুস্থ ভাসুরকে নিয়ে স্বামী যখন দক্ষিণ ভারতে চিকিৎসা করাতে নিয়ে গিয়েছিলেন, সেই সময়ে কীভাবে শালবনী স্কুলে গিয়ে পরীক্ষা দিয়েছিলেন সেকথাও বলেন পূর্ণিমা।
পূর্ণিমার স্বামী নিশিকান্ত নন্দী বলেন, ‘২০১৩ সালে পূর্ণিমাকে পঞ্চায়েতে দাঁড় করিয়েছিলাম। আমার শ্বশুরের বাধা ছিল। কিন্তু আমি চেয়েছিলাম মানুষের কাজ করতে।’ পূর্ণিমা অবশ্য জানিয়েছেন, ভোটে জেতার দু’বছরের মধ্যেই পঞ্চায়েত সদস্য পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলাম।’
বিজেপি-র বক্তব্য, তৃণমূলের পদ ভাঙিয়েই চাকরি পেয়েছিলেন পূর্ণিমা। এখন যতই বলুন যোগ্যতার চাকরি, সবাই সব বোঝে। ওন্দার বিজেপি নেতা সুদন বসু বলেন, ‘আর কি যোগ্য লোক ছিল না? উনিই কেন চাকরি পেয়েছিলেন?’
এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসায় স্বাভাবিকভাবে অস্বস্তি বেড়েছে ঘাসফুল শিবিরের। ওন্দা ব্লক তৃণমূলের সহ সভাপতি সুবোধ মণ্ডলকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘কীভাবে লাইন করেছেন, সেটা ব্যক্তি লক্ষ্মীকান্ত জানেন। সে ব্যাপারে দল কিছু জানে না। আইন তার নিজের পথে চলবে। আইনের উর্ধ্বে কেউ নয়।’
বিজেপি বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলার সদস্য বিশ্বনাথ দে এই প্রসঙ্গে বলেন, চাকরি পাওয়ার পর সবাই বলেন, ‘যোগ্যতায় পেয়েছি। কিন্তু আসল ঘটনা এখন সামনে আসছে। টাকা দিয়ে যে এভাবে চাকরি হয়, সেটা তো আজ জানা যাচ্ছে।’