দেশেরসময় ওয়েবডেস্কঃ শুরু হয়ে গেল বাঙালির প্রাণের পুজো দুর্গাপুজো। আজ থেকেই উৎসবের ঢাকে কাঠি পড়ল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে। একপশলা বৃষ্টি-শেষে রেড রোডে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান। মঞ্চ থেকে সকলকে শুভেচ্ছা জানালেন মমতা। ধন্যবাদ জানালেন ইউনেস্কোকে। উপস্থিত ছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। ছিলেন অধ্যাপক তপতী গুহঠাকুরতা। মন্ত্রী আমলা থেকে টলিউডের কলাকুশলীরা। সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে পুজো শুরুর বার্তা দিলেন মমতা।
রাজ্য সরকারের তরফে দুর্গাপুজোর শোভাযাত্রার অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় । তিনি বাংলার ক্রীড়াজগতের আইকনও বটে। সৌরভ থাকা মানেই অনুষ্ঠানের ঔজ্জ্বল্য বেড়ে যাওয়া, এক নিমেষে প্রচারের সার্চলাইট তাঁর দিকে পড়ে।
বৃহস্পতিবারের বিকেলের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলার আগেই বলতে ওঠেন সৌরভ। তিনি এদিন ইউনেস্কোর প্রতিনিধিদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছেন, ‘‘ফ্রান্সের প্রতিনিধি এখানে এসেছেন। ফ্রান্স মানেই ফুটবলের শহর। আমাদের এখানেও তিনটি বড় ক্লাব রয়েছে, মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল ও মহামেডান স্পোর্টিং। তাদের ক্যারিশমাও কম নয়। আমরা চাই ফরাসী ফুটবলের সৌন্দর্যও ফিরুক আমাদের শহরে।’’
সৌরভ অনুষ্ঠানে আরও বলেন, ‘‘দুর্গাপুজো এমন এক উৎসব যা সাত থেকে ৭০ বছরের প্রবীন মানুষকেও আনন্দে ভরিয়ে দেয়। যিনি একেবারে আর্থিকভাবে দূর্বল, কিংবা বিত্তশালী, তাঁদের মধ্যেও আনন্দ ভরিয়ে দেয় এই উৎসবের মাদকতা। এই উৎসব সব বিভেদ দূর করে দেয়, ভালবাসায় ভরিয়ে তোলে সবকিছুকে। উৎসবের মতোই খেলাধুলোও ভৌগোলিক দুরত্বও কমিয়ে দেয় নিমেষে।’’
ভারতের প্রাক্তন নামী অধিনায়কের মন্তব্য, ‘‘আমি বিশ্বের নানা প্রান্তে গিয়ে দেখেছি উৎসবের বাহার। ব্রাজিলে এক ধরনের উৎসব, মেক্সিকোতে আরেকরকম। আমাদের বিভিন্ন শহরেও নানা উৎসবের রেশ, তার মধ্যেও দুর্গাপুজোর সেরার স্বীকৃতি আমাদের মন ভরিয়ে তোলে, আমাদের মনে গর্ববোধ জাগায়।’’
সৌরভ বুঝিয়ে দিয়েছেন, তিনি ভারতীয় খেলাধুলোর একমেবদ্বিতীয়ম এক মহানক্ষত্র। যিনি বাংলার উৎসবের সংজ্ঞা ব্যাখ্যা সহকারে বুঝিয়ে দিতে পেরেছেন ইউনেস্কো প্রতিনিধিদের।
বৃহস্পতিবার দুপুরে শঙ্খধ্বনি, উলুধ্বনি, ঢাকের তালে ধুনুচি নাচ একের পর এক অনুষ্ঠানের রঙিন আবহে মেতে উঠল তিলোত্তমা কলকাতা।
রাজপথে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সঙ্গে বিপুল মানুষের সমাগম। ঠিক একমাস পর ১ অক্টোবর দুর্গাপুজোর মহাষষ্ঠী। আর আজ রাজপথে এই দৃশ্যই যেন আগাম দেখে ফেলল কলকাতা। কার্যত একমাস আগেই পুজো শুরু হয়ে গেল। এই মানুষের মনে হওয়াকেই যেন শুনতে পেলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। তাই আজ থেকেই পুজো শুরু হয়ে গেল বলে রাজপথ থেকে জানিয়ে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় থেকে উপস্থিত সমস্ত শিল্পীদের তথা ইউনেস্কোর প্রতিনিধি দলকে ধন্যবাদ জানিয়ে মমতা বলেন, “আমার সমস্ত শিল্পীদের ধন্যনাদ জানাই। আমি সৌরভকে বিশেষ ধন্যবাদ জানাই। ও আমার ছোট ভাই। ও এসে উপস্থিত হয়েছে। আমাদের সমস্ত আই এ এস’রা এসেছেন।” অধ্যাপক তপতী গুহঠাকুরতাকেও ধন্যবাদ জানিয়ে মমতা বলেন, “আমি তপতী দেবীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। ওনারা সোশ্যাল রিসার্চে কাজ করেন। আমরা স্যালুট করছি ইউনেস্কো টিমকে।”
মমতার কথায়, “ধর্ম যার যার,উৎসব সবার। এক্ষেত্রে ইউনেস্কো থেকে সাহায্য পেয়েই ভাল লাগছে। আমরা আজ সারা বাংলা জুড়ে মিছিল করেছি। সবাইকে তাই ধন্যবাদ। ইউনেস্কো আমাদের বিশেষ স্বীকৃতি দেওয়ায় আমরা খুশি। ২৪ সেপ্টেম্বর তারা ফের আসবেন। বেশ কয়েকটা ক্লাবে যাবেন। ঠাকুর দেখবেন।”
এদিন সংবাদমাধ্যমকে তপতী গুহঠাকুরতা বলেন, “আমার ইউনেস্কোর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ছিল না। ভারত সরকারের মিনিস্ট্রি অব কালচার আমাকে বলেছিল এটা করতে। তাদের হয়ে আমরা কাজটা করেছিলাম। বাংলার হয়েও কাজটা করেছিলাম। কাজটা ছিল কলকাতার দুর্গাপুজোকে ইউনেস্কোর ইনট্যানজিবল কালচারাল লিস্টে স্থান দেওয়া। সার্ভে আমি বহু বছর ধরে করেছি, আমার নিজের কাজের জন্য। তবে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৯ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত আমাদের সময় নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল।”
তপতী গুহঠাকুরতা আরও জানান, ইউনেস্কোর নজরে মূল যে বিষয়টি ছিল, তা হল এই দুর্গাপুজোর সর্বজনীন রূপ। এটা বিভিন্ন সম্প্রদায়কে নিয়ে এক মিলনক্ষেত্র হয়ে ওঠে। নানা শিল্প, নানারকমের শিল্পকর্মীদের নিয়ে হয় এই উৎসব। এটা ধর্মীয় উৎসবের জায়গা থেকে উঠে এসে সামাজিক সাংস্কৃতিক উৎসব, তার উপরে জোর দেওয়া হয়।