
নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন ছেড়ে এসইউভি শিলিগুড়ি শহরের ভিতরের পথ এড়িয়ে বাইপাস ধরে। সেবক রোড ধরে জঙ্গল, মহানন্দা রেঞ্জের। ছায়াঘন জাতীয় সড়ক সোজা চলে গিয়েছে। কিছু দূর যাওয়ার পর তিস্তা সঙ্গী হয়। অগাস্টের ভরা বর্ষায় তাঁর উথালপাতাল চেহারা। ডানদিকে করোনেশন ব্রিজকে রেখে গাড়ি চলে উপর দিকে। রাম্বি বাজার পর্যন্ত টানা। এখানে মনটা চা-চা করলে দাঁড়িয়ে পড়তে হবে। সঙ্গে গরম ভেজ মোমো। স্বাদ মুখে লেগে থাকে অনেকক্ষণ। পথে মংপু। রবি ঠাকুরের পাহাড়ি আস্তানা। বাগানে ঝরাপাতা আর পাতাবাহারের সমাহার। চারিধারে প্রাচীন গাছ, সিনকোনা বাগান, অজানা পাখির শিস। কবিতাগুলো বুঝি আপনিই আসে।
গন্তব্য সিটং।
উত্তরবঙ্গে পাহাড়ে ভ্রমন মানেই ভ্রমন পিপাসুদের কাছে আগে দার্জিলিঙ এবং তার আশেপাশের কিছু পাহাড় ছিল গন্তব্য। কিন্তু ধীরে ধীরে এখন আরো বেশ কিছু পাহাড়ের সৌন্দর্য ভ্রমনার্থীরা আবিষ্কার করেছেন। তারমধ্যেই অন্যতম হল সিটং। মংপু থেকে সাড়ে আট কিলোমিটার। দার্জিলিং-এর বিখ্যাত কমলালেবুর সিংহভাগই উৎপন্ন হয় সিটং-এ। দেখুন ভিডিও
এটি পাহাড়ে ঘেরা এবং সবুজে ঢাকা এক লেপচা জনপদ। পথে দেখা রিয়াং নদীর সঙ্গে। স্থানীয়দের প্রিয় পিকনিক স্পট। তরুণতরুণীদের ভিড়। তাদের উচ্ছ্বাস মিশে যায় রিয়াংয়ের কলকল ধ্বনিতে। সিটং চার হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। একটা ছড়ানো উপত্যকায়। চারপাশ খোলা। দূর-দূর পর্যন্ত যতটুকু চোখ যায় শুধুই পাহাড়। ধাপে ধাপে ঘরবাড়ি। অনেকটা আকাশ।
আবার একে কমলালেবুর উপত্যকার নতুন ঠিকানাও বলা যায়। তবে সঠিক সময়ে গেলে তার দর্শন মিলবে। সেটা হল শীতকাল। কার্শিয়াং-এর অন্তর্ভুক্ত এই পাহাড়ে সারাদিন ধরে চলে মেঘের খেলা। পাহাড় ও মেঘ লুকোচুরি খেলায় মেতে থাকে সারাদিন। আর চারদিকে পাহাড়ের ধাপে ধাপে রয়েছে চা বাগান। যেন সবুজ গালিচা পাতা ! চারদিকে দৃষ্টি ঘোরালে এই অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অদ্ভুত শান্তি মেলে।
এরপর রয়েছে ঘুরে বেড়ানোর পালা। আশেপাশের লেপচা গ্রাম, পাঁচ পোখরি, নামথিং পোখরি, কবিগুরুর স্মৃতিতে রয়েছে টেগোর মিউজিয়াম যেটা মংপুতে।
এখনকার সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান হল আলধারা ভিউ পয়েন্ট। ভাগ্য ভালো থাকলে এখান থেকে দেখা মিলবে তুষার ধবল কাঞ্চনজঙ্ঘার। এখানে নানারকম পাখিরও দেখা মেলে। তবে আবার চাইলে একটু জঙ্গলেও ট্রেক করা যায়। এই পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে একেবেঁকে চলে গেছে ছোট্ট রিয়াং নদী।
সিটং ভ্রমণের সেরা সময় নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি। যখন এই পাহাড়ের কোলের গাছগুলি কমলালেবুতে ভরে যায়। এখন এখানে প্রচুর হোমস্টের ব্যবস্থা রয়েছে। যেগুলো মধ্যবিত্তের সাধ্যের মধ্যেই। এই রকমই এক হোমস্টে কমল গুরুঙ্গ হোমস্টে। চা বাগানে মোড়া এই হোমস্টের বারান্দা থেকেই লেন্ডস্কেপে আঁকা প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের সাক্ষাত মিলবে। তাছাড়াও ওদের আন্তরিক আতিথেয়তা মুগ্ধ করবে। এখানে সেই হোমস্টের কিছু চিত্র তুলে ধরা হলো।
অনেক দিক থেকেই এই পাহাড়ি জনপদে যাওয়া যায়। তবে শিলিগুড়ি থেকে সেবক হয়ে মাত্র ৫৫ কিলোমিটার রাস্তা পেরিয়ে এখানে আসা যায়। শিলিগুড়ি থেকে রামভি ও মংপু হয়েও আসা যায়। এবার পুজোর ছুটিতে ঘুরে আসুন সিটং ।
 
                