Sikkim News: বিপদের আঁচ পেয়েও ব্যবস্থা নেয়নি সিকিম সরকার! উত্তরাখণ্ড হতে চলেছে উত্তরবঙ্গ,শঙ্কা বিশেষজ্ঞদের

0
558

দেশের সময়: বিপদের আঁচ মিলেছিল প্রায় দু’বছর আগে। কিন্তু তারপরও ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি করেছে সিকিম সরকার। সব কিছু জানার পরও কেন্দ্রের উদাসীনতা স্পষ্ট। আর তারই জেরে সিকিমে এই ভয়াবহ বিপর্যয়। লোনক হ্রদ ফাটার ঘটনায় সামনে এসেছে গাফিলতির একাধিক নজির।

এই পরিস্থিতিতে নিজেদের দায় এড়াতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী প্রেম সিং তামাং (গোলে)। তিনি তাঁর পূর্বসূরি অর্থাৎ সিকিমের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী পবন চামলিংয়ের ঘাড়ে দোষ চাপাতে মরিয়া। গোটা রাজ্য যখন বিপর্যস্ত, হাজার হাজার মানুষ আশ্রয়হীন, খাবার, জল পাচ্ছেন না, তখন সিকিমের মুখ্যমন্ত্রীর এ হেন ভূমিকায় ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়েছে।

প্রতিবাদে সরব হয়েছে রাজ্যের বিরোধী দল সিকিম ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট। এদিকে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিপদের এখানেই শেষ নয়। আগামী দিনে আরও ভয়ঙ্কর কিছু ঘটতে চলেছে। এটা সবে শেষের শুরু। লোনক হ্রদ ফেটে গোটা সিকিম যখন লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছে, ঠিক তখনই নতুন করে আরও একটি বিপদ মাথাচাড়া দিয়েছে। উপগ্রহ চিত্রে ধরা পড়েছে ছাঙ্গু থেকে মাত্র ১২ কিমি দূরে থাকা সাকো চো নামে একটি হ্রদ অত্যন্ত বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে।

হিমবাহ গলা জলে পুষ্ট এই হ্রদটিও যেকোনও মুহূর্তে আউট বার্স্ট করতে পারে। সেক্ষেত্রে ভয়ঙ্কর বিপদ হবে। বিশেষ করে সিকিমের পাশাপাশি ডুয়ার্সও মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়বে। কারণ, ওই হ্রদ থেকে যেসব নদী সৃষ্টি হয়েছে, সেগুলির সঙ্গে যোগ রয়েছে ডুয়ার্সের নদীগুলির। ফলে সাকো চো হ্রদটি যদি কোনওভাবে ফেটে যায়, তা হলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ডুয়ার্স পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা। পরিবেশ বিজ্ঞানী ও ভূপ্রকৃতি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।

এখনও সজাগ না হলে আগামী দিনে উত্তরাখণ্ড হতে চলেছে সিকিম ও উত্তরবঙ্গে একটি বড় অংশ। পাহাড় ফাটিয়ে সেভক থেকে রংপো পর্যন্ত তৈরি হচ্ছে রেলপথ। এই প্রকল্পের জন্য ভবিষ্যতে খেসারত দিতে হবে না তো? সেই প্রশ্নও তুলে দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোলের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান সুবীরেশ সরকার বলেছেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পাহাড় কেটে টানেল বানিয়ে তার ভিতর দিয়ে রেলপথ করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের এখানকার মতো ওই জায়গাগুলি এতটা বিপজ্জনক নয়। মনে রাখতে হবে, এখানকার পাহাড় এমনিতেই নবীন। এবং ভঙ্গুর। ফলে যেভাবে একের পর এক পাহাড় ফাটিয়ে টানেল তৈরি করা হচ্ছে, তার পরিণাম ভয়াবহ হতে পারে। এমনিতেই শিলিগুড়ি-সিকিম ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক অত্যন্ত ধসপ্রবণ। ফি বছর বর্ষাতেই ধসের জেরে গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তাটি অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। সিকিমের এই বিপর্যয়ের জেরে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক মেল্লি থেকে তিস্তা বাজার পর্যন্ত কার্যত নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে।

বহু জায়গায় বসে গিয়েছে জাতীয় সড়ক। পূর্ত ও সেচ দফতরের ইঞ্জিনিয়াররা সরেজমিনে এলাকা পরিদর্শন করে জানিয়ে দিয়েছেন, তিস্তার জল নামলেই বিশাল এলাকা জুড়ে ওই জাতীয় সড়ক হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়তে পারে।

একাধিক ভূতাত্ত্বিক সমীক্ষায় আগেই দেখা গিয়েছিল, উত্তর সিকিমের লাচেনে দক্ষিণ লোনক হ্রদটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। হিমবাহ গলা জলে পুষ্ট যে ক’টি হ্রদ রয়েছে সিকিমে, তার মধ্যে বিপর্যয়প্রবণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় এই হ্রদটিকে। বিশেষজ্ঞরা সাফ জানিয়ে দেন, দক্ষিণ লোনকে হিমবাহ অস্বাভাবিক হারে গলছে। ফলে আয়তনে বাড়ছে হ্রদটি।

একইসঙ্গে ওই হ্রদে জলের চাপ বাড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে যে কোনওদিন হ্রদটি ফেটে যেতে পারে। এরপরই বিশেষজ্ঞরা প্রস্তাব দেন, দ্রুত ওই লেকের জল বেরনোর পথ তৈরি করতে হবে। কারণ, লোনক হ্রদে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট জল নিষ্কাশনের যে পথ ছিল, তা পাথর, বালি-মাটিতে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে হিমবাহ ক্রমাগত গললেও হ্রদ থেকে জল বেরতে পারছে না। এরপরই বছর দু’য়েক আগে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, বেশি ঘনত্বযুক্ত পলিথিনের পাইপের মাধ্যমে লোনক হ্রদ থেকে জল নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হবে।

সেই প্রকল্পের কাজ শুরুও করা হয়। কিন্তু তা কার্যকরী হয়নি। এরপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, লোনক হ্রদের উপর নজরদারি চালানোর জন্য কিছু ক্যামেরা বসানো হবে। লাগানো হবে সেন্সর। যাতে হ্রদে যদি কোনও কারণে জলের চাপ আচমকা বেড়ে যায়, ওই সেন্সর বিপদসঙ্কেত দেবে।

অন্তত বিপর্যয়ের ঘণ্টা দেড়েক আগে ওই সঙ্কেত পাওয়া যাবে। ফলে তড়িঘড়ি ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে। এই কাজের জন্য সুইৎজারল্যান্ডের একটি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি হয়। মাস দু’য়ের আগে লোনক হ্রদের চারদিকে কিছু ক্যামেরা বসানো হয়। সেই ক্যামেরাতেই ধরা পড়ে, হ্রদটি অত্যন্ত বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে রয়েছে। কিন্তু তারপরও কেন ব্যবস্থা নেওয়া হল না, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়ে।

জানা যাচ্ছে, বিপর্যয়ের দিন ক্যামেরা বন্ধ ছিল। বিদ্যুৎ না থাকার কারণেই ক্যামেরা চলেনি। তাছাড়া সেন্সর বসানোই হয়নি। কারণ, কেন্দ্রীয় সরকারই চেয়েছিল দু’দফায় ওই কাজ করতে। প্রথম দফায় ক্যামেরা। দ্বিতীয় দফায় সেন্সর। এই গাফিলতির কারণেই এত বড় বিপর্যয়। এদিকে, লোনক লেক ফাটার পিছনে একাধিক কারণ থাকতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, হ্রদটি ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায় অবস্থিত। বারবার ভূমিকম্পের ফলে হ্রদ-বিপর্যয় ঘটতে পারে। 

এক্ষেত্রে বিপর্যয়ের আগের চারদিনে নেপালে বেশ কয়েকবার ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটেছে। তার প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। অন্য অংশের দাবি, হ্রদের নীচে ভূগর্ভস্থ মাটির স্তরের ভারসাম্য নষ্ট হলেও এমন বিপর্যয় ঘটা অস্বাভাবিক নয়। আবার মেঘ ফাটা বৃষ্টির কারণেও জলের চাপ বেড়ে গিয়ে এমন ঘটনা ঘটতে পারে। সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী প্রেম সিং তামাং বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে মেঘ ফাটা বৃষ্টির তত্ত্বেই সিলমোহর দিয়েছেন। যদিও আবহাওয়া দফতরের রেকর্ড তা বলছে না।

সিকিমের আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোপীনাথ রাহা বিপর্যয়ের পরই জানিয়ে দেন, মেঘ ভাঙা বৃষ্টির কারণে এই বিপর্যয় ঘটেনি। কারণ, যেসময় ওই হ্রদ বিপর্যয় হয়, তার আগে ২৪ ঘণ্টায় উত্তর সিকিমে সর্বোচ্চ ৩৯ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড হয়েছে। ফলে এই পরিমাণ বৃষ্টিকে কখনওই মেঘ ভাঙা বলা যায় না। কোনও এলাকায় এক ঘণ্টার মধ্যে যদি ১০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হয়, তাহলেই তাকে মেঘ ভাঙা বৃষ্টি বলা যেতে পারে। কিন্তু এক্ষেত্রে তেমনটা মোটেই হয়নি।  

উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোলের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান সুবীরেশ সরকার অবশ্য আবহাওয়া দফতরের পরিকাঠামো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর দাবি, উত্তর সিকিমে সব জায়গায় বৃষ্টিপাত মাপার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেই। ফলে ৩৯ মিলিমিটার যে বৃষ্টিপাতের কথা বলা হচ্ছে, সেটা হয়তো লোনকের নয়। লোনকে ঠিক কতটা বৃষ্টি হয়েছে, সেটা জানা জরুরি। তাহলেই বলা যাবে, আদৌও মেঘ ভাঙা বৃষ্টির কারণেই এই বিপর্যয় কি না।

এদিকে, ছাঙ্গুর উপরে সাকো চো হ্রদের পরিস্থিতি বিচার করে সিকিম প্রশাসনের তরফে জারি করা হয়েছে হাই অ্যালার্ট। এনিয়ে রীতিমতো আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। বিপদ এড়াতে মঙ্গন জেলায় অবস্থিত এই লেকের কাছাকাছি অঞ্চল ছাঙ্গু, চেলা ও ইয়ংথং থেকে বাসিন্দাদের নিরাপদ দূরত্বে সরানো হয়েছে। ছাঙ্গু ও নাথুলা যাওয়ার উপর জারি করা হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, অনির্দিষ্টকালের জন্য ওই রুটে পারমিট ইস্যু করা বন্ধ থাকবে। এদিকে, বর্তমান পরিস্থিতিতে সিকিমে যাতে কেউ বেড়াতে না আসেন, সে ব্যাপারে নির্দেশিকা জারি করেছিল সেরাজ্যের সরকার। এনিয়ে ব্যাপক উদ্বেগ ছড়ায়।

কারণ, এবার পুজোয় সিকিমে পর্যটকদের ঢল নামার কথা ছিল। বেশিরভাগ জায়গাতেই হোটেল, রিসর্টে বুকিং ছিল প্রায় একশো শতাংশ। বিপর্যয়ের পর থেকে পর্যটকরা অনবরত ফোন করছিলেন হোটেলগুলিতে।

লাগাতার ফোন আসছিল ট্যুর অপারেটরদের কাছেও। তাঁদের একটাই বক্তব্য, যদি পরিস্থিতি ঠিক না থাকে, তাহলে যেন তাঁদের বুকিং বাতিল করে যতটা সম্ভব টাকা ফেরত দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে তাঁরা কাছেপিঠে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করতে পারবেন এখনও। কিন্তু এরপর দেরি হয়ে গেলেও সেটাও আর সম্ভব হবে না। ট্যুর অপারেটররা পর্যটকদের একটু ধৈর্য্য ধরতে বলছিলেন।

ফলে সিকিমে ঘুরতে যাওয়ার বুকিং বাতিল কোনওমতে আটকে রাখা গিয়েছিল। কিন্তু সিকিম সরকার নির্দেশিকা জারি করে সেরাজ্যে যেতে নিষেধ করে দেওয়ায় বুকিং বাতিলের ঢল নামে। এতে মাথায় হাত পড়ে ট্যুর অপারেটরদের। অবশেষে বাধ্য হয়ে শুক্রবার রাতে সিকিম সরকার ফের একটি নির্দেশিকা জারি করেছে। তাতে বলা হয়েছে, পশ্চিম সিকিম ও দক্ষিণ সিকিম সেফ আছে। ফলে পর্যটকরা যদি এই জায়গাগুলিতে ঘুরতে আসতে চান, তাহলে আসতে পারেন।

সেক্ষেত্রে দার্জিলিং ও কালিম্পং হয়ে তাঁদের সিকিমে আসার জন্য বিকল্প রুটের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এতে পর্যটকদের মধ্যে খানিকটা উদ্বেগ কেটেছে। যদিও বিপর্যয়ের ধাক্কা সামলে পুজোর আগে সিকিম কতটা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে, সংশ্লিষ্ট মহলের।

সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী প্রেম সিং তামাং বলেছেন, বিপর্যয়ে হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে ক্ষতির পরিমাণ এখনই নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। সংশ্লিষ্ট কমিটি রিপোর্ট দেওয়ার পরই তা বলা যাবে। তবে উত্তর সিকিম পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন। সেখানে তিন কিমি রাস্তা পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। একাধিক গ্রাম ধুলিসাৎ। 

এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যাওয়ার রাস্তা উধাও। তিস্তার উপর থাকা ১৩টি সেতু ভেঙে গিয়েছে। এরমধ্যে লাচেনেই উড়ে গিয়েছে ৮টি সেতু। শনিবার পর্যন্ত সিকিমে ১৯টি দেহ উদ্ধার হয়েছে। তবে বহু জায়গায় এখনও ধ্বংসস্তূপ সরানো যায়নি। ফলে মৃতের সংখ্যা আরও অনেকটাই বাড়তে পারে। সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত ১০৩ জন নিখোঁজ। তাঁদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। সব মিলিয়ে ২৫ হাজার মানুষ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। সাড়ে তিন হাজার মানুষকে ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। ২৬টি জায়গায় ক্যাম্প চলছে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে কথা হয়েছে। তাঁরা প্রত্যেকেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে দ্রুত পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সম্ভব হবে। এদিকে সিকিমে বিপর্যয়ের জেরে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত এরাজ্যে তিস্তায় ভেসে আসা মোট ২২টি দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, শুক্রবার পর্যন্ত তারা মোট ২৭টি দেহ উদ্ধার করেছে। এরমধ্যে শুক্রবারই উদ্ধার হয়েছে ১১টি দেহ। কোচবিহারে শুক্রবার পর্যন্ত উদ্ধার হয়েছে ৭টি দেহ। তিস্তার জলের স্রোতে বাংলাদেশেও দেহ ভেসে গিয়েছে।

শুক্রবার বাংলাদেশের লালমণিহাটে দু’টি দেহ উদ্ধার হয়। ফ্ল্যাগ মিটিং করে দেহ দু’টি বিএসএফকে ফিরিয়ে দেয় বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী।

এদিকে, ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন থাকায় চিন্তা বাড়ছে কেন্দ্রের। কারণ, এই রাস্তাটি কৌশলগত কারণে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এমনিতেই চিন সীমান্তে লাল ফৌজ ওঁত পেতে বসে রয়েছে। যদি কোনও মুহূর্তে তারা আগ্রাসন দেখায়, তাহলে সিকিম লাগোয়া চিন সীমান্তে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সংখ্যা বাড়াতে হবে। পাঠাতে হবে আধুনিক সমরাস্ত্র। তাছাড়া বর্তমানে চিন সীমান্তে যে ভারতীয় সেনারা মোতায়েন রয়েছেন, তাদের জন্য রসদও প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে ১০ নম্বর জাতীয় সড়কটিই একমাত্র ভরসা। বিপর্যয়ের জেরে জরুরি পরিষেবা চালু রাখার জন্য যে ক’টি বিকল্প রাস্তা খোলা হয়েছে, সেগুলি দিয়ে সেনাবাহিনীর ভারী গাড়ি কিংবা ট্যাঙ্কার নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। ফলে বিষয়টি ভাবাচ্ছে কেন্দ্রকে। 

অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে যাতে ১০ নম্বর জাতীয় সড়কটি পুনর্গঠন করা যায়, তার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু রাস্তাটির যা হাল হয়েছে, তাতে কতদিনে তা যান চলাচলের উপযুক্ত করা সম্ভব হবে তা নিয়েও রয়ে গিয়েছে বড়সড় প্রশ্ন। ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর মাথাব্যথার আরও একটি অন্যতম কারণ বরদং সেনাছাউনি তিস্তার গ্রাসে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া। এই ছাউনিটি মূলত ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার হত।

তাছাড়া এখানেই জওয়ানদের বিশেষ ট্রেনিং হত। চিন সীমান্তে হঠাৎ করে বাড়তি সেনা মোতায়েন থেকে শুরু করে নানা বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিত এই সেনা ছাউনি। কিন্তু সেটি পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ায় কপালে ভাঁজ পড়েছে সেনাবাহিনীর। তাদের চিন্তার আরও একটি কারণ, তিস্তায় ভেসে যাওয়া অস্ত্রশস্ত্র ও বিস্ফোরক। সেনাবাহিনীর ৪১টি ট্রাক তিস্তায় ভেসে গিয়েছে বলে খবর।

ফলে কী করে এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হবে, সেটাই চিন্তার। উদ্বেগের আরও একটি কারণ, তিস্তার উপর থাকা সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গে সবক’টি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রই এই বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে চুংথাম পাওয়ার প্রোজেক্টের। এটি ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন।

সিকিমের সবচেয়ে বড় জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র। তিস্তার গ্রাসে গোটা জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রটিই কার্যত ধুয়েমুছে সাফ হয়ে গিয়েছে। অন্যান্য কেন্দ্রগুলিতেও ক্ষতির পরিমাণ মোটেই কম নয়। এনএইচপিসি কর্তৃপক্ষ স্বীকার করে নিয়েছে, এই পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে তারা। কারণ, এখনও প্রকল্পের গেট বন্ধ করা যাচ্ছে না। কারণ, তিস্তার জলের সঙ্গে বোল্ডার ধেয়ে আসছে। ওই বোল্ডারে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের মেশিনপত্র। এমনিতেই প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। এরপর নতুন করে ক্ষতি হলে আর কিছু অবশিষ্ট থাকবে না। এদিকে প্রকল্পের গেট বন্ধ না করলে জল ধরে রাখা সম্ভব হবে না। সেক্ষেত্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনও করা যাবে না। সাতদিনের আগে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করা সম্ভব নয় বলেই মনে করছে এনএইচপিসি কর্তৃপক্ষ। সেটাই যদি হয়, তাহলে বিদ্যুতের যে একটা বড় ঘাটতি দেখা দেবে তাতে কোনও সন্দেহ নেই।

এই পরিস্থিতিতে সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী প্রেম সিং তামাং বলেছেন, চুংথাম বাঁধের কাজ ঠিকমতো হয়নি। নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ হয়েছে। সেকারণেই জলের চাপ রাখতে পারেনি ওই বাঁধ। ভেঙে গিয়েছে। ফলে এতবড় বিপর্যয় ঘটেছে সিকিমে। চুংথাম বাঁধটি পবন চামলিং মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন তৈরি হয়েছিল। ফলে প্রেম সিং ঘুরিয়ে পবন চামলিংয়ের দিকেই আঙুল তুললেন বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।

এনিয়ে চামলিং এখনও মুখ খোলেননি। কিন্তু ফোঁস করেছে তাঁর দল সিকিম ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট। ওই দলের মুখপাত্র জে বি দার্নাল বলেছেন, পুরোপুরি ভিত্তিহীন অভিযোগ করা হচ্ছে। আসলে মুখ্যমন্ত্রী নিজের কাঁধ থেকে দায় ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করছেন। সিকিমের পরিবেশবিদরা অনেক আগে থেকেই লোনক লেক নিয়ে সতর্ক করেছিলেন। তিনি কোনও ব্যবস্থা নেননি। আমরাও অনেক কিছু বলতে পারি। কিন্তু এখন রাজ্যের মানুষ বিপর্যস্ত। তাই তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। দশদিন সময় দিন। আমরা মুখ্যমন্ত্রীর মুখোশ খুলে দেব।

Previous articleDurga Puja 2023: বর্ষা বিদায় নিতেই পুজোর তোড়জোড় শুরু, নতুন ভাবে সেজে উঠছে অশোকনগর সুহৃদ সংঘ ক্লাবের পুজো মন্ডপ
Next articleShah Rukh Khan: শাহরুখকে খুনের হুমকি,ওয়াই প্লাস নিরাপত্তা দিল মহারাষ্ট্র সরকার

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here