দেশের সময়, বনগাঁ: গোটা দেশ জুড়ে চালু হয়েছে সিএএ। ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে পোর্টাল চালু করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর। পাশাপাশি, মতুয়া সম্প্রদায়কে বিশেষ বার্তা দিলেন তিনি। ঠিক কতজন মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে কতজন মানুষ এই আইনের সুবিধা পাবেন, সে সম্পর্কেও জানান তিনি।
“দেশভাগের আগেই ওপার থেকে এপার বাংলায়। তাও নিজের দেশ বলতে যেন কিছুই ছিল না। “উদ্বাস্তু” তকমাই ছিল পরিচয়। এবার সেই জ্বালা, যন্ত্রণা থেকে মুক্তি। এবার আমরা সবাই এই দেশের নাগরিক। আমরা ভারতবাসী।” বলতে বলতে কেঁদে ফেললেন মতুয়া …। নাগরিকত্ব সংশোধন আইন কার্যকর হতেই ঠাকুরনগরের ঠাকুরবাড়িতে উৎসবের আমেজ। বারুণী মেলা শুরু হওয়ার আগেই অকাল উৎসব। দেখুন ভিডিও
গোটা দেশ জুড়ে সিএএ(CAA) লাগু হওয়ার পর তাকে স্বাগত জানিয়েছেন রাজ্যের বিজেপি দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। এই পদক্ষেপের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহকে বিশেষ ধন্যবাদ জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর। উল্লেখ্য, এই আইন চালু করার ব্যাপারে কেন্দ্রের কাছে দীর্ঘদিন ধরেই দরবার করেছিলেন তিনি। তবে, ঠিক কতজন মতুয়া এই সুবিধা পেতে চলেছেন, সে ব্যাপারে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিলেন তিনি।
রাজ্যের একাধিক জেলার মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস। উদ্বাস্তু সমস্যা এবং নাগরিকত্বের দাবি নিয়ে বহুকাল থেকে আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন তাঁরা। কালকের ঘোষণার পরেই বনগাঁ ঠাকুরবাড়িতে মানুষের ঢল নামতে থাকে। খোল, করতাল বাজিয়ে আনন্দে মেতে ওঠেন তাঁরা। দীর্ঘদিন বাদে ভিন দেশ থেকে বিশেষত বাংলাদেশ থেকে আসা মানুষ নাগরিকত্ব পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন তাঁরা।
মঙ্গলবার ঠাকুরনগরের ঠাকুরবাড়িতে বিজেপির বনগাঁর সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর জানান, ভারতবর্ষের প্রায় আড়াই কোটি বেশি মতুয়া ধর্মের মানুষ রয়েছেন। এদের মধ্যে বিশাল অংশের মানুষ ভারতের নাগরিকত্ব পাবেন, যাঁরা বিভিন্ন সময় ধর্মীয় কারণে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান প্রভৃতি দেশ থেকে এসে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তিনি জানান, এই আড়াই কোটি মানুষের মধ্যে প্রায় দেড় কোটি মানুষ রয়েছেন যাঁরা প্রাপ্ত বয়স্ক। তার মধ্যে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ রয়েছেন, যাঁরা ৭১ সালের পর বাংলাদেশ থেকে এসেছেন। তাঁরা এই আইনের ফলে সুবিধাভোগী হবেন। তিনি আরও জানান, যাঁদের ইতিমধ্যে ভোটার কার্ড আছে, তাঁদের আবেদন করতে হবে না। তবে, ৭১ সালের পর এবং ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এদেশে এসেছেন, তাঁরা আবেদন করলে নাগরিকত্ব পাবেন।
মতুয়াদের কথায়, তাঁদের অনেকেই ১৯৬৫ সালে ভারতে এসেছেন। তাঁর চোখেও জল। আবেগে ভেসে বললেন, “কত লড়াই করেছি। মতুয়ারা কত অত্যাচারের শিকার, কারও ধারণা নেই। আমাদের আর কেউ বহিরাগত বলবে না।” কাঁসর, ঘণ্টা, ঢাক, ঢোল নিয়ে পথে নেমেছেন মতুয়াদের একাংশ। সবার মুখে একটাই কথা, “মোদি, শাহ, শান্তনু ঠাকুর কথা রেখেছেন। দেশে এবার আমরা নিরাপদ।” “চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনের একদিন আগে হলেও দেশে ক্যা কার্যকর হবেই।”, জোরাল দাবি করেছিলেন কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর। দেরিতে হলেও তাঁর কথাই শেষমেশ সত্যি হল। বিল পাশের প্রায় ৫ বছর পর আইন লাগু হল। আজ ঠাকুরবাড়ির এই উদযাপনে সামিল খোদ শান্তনুও। দেশের সময়কে শান্তনু বললেন, “হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মদিনে সিএএ লাগু হয়েছে এটা আমাদের কাছে বড় পাওনা। বড়মার আন্দোলন আজ সার্থক। আমার মতে, যাঁরা ওপার বাংলা, পাকিস্তান, আফগানিস্তান থেকে এদেশে এসেছেন, ১১ মার্চ তাঁদের কাছে নতুন স্বাধীনতা দিবস। প্রান্তিক মানুষরা প্রথমবার নাগরিকত্বের স্বাদ পাবেন।”
উল্লেখ্য, গোটা বাংলার পাশাপাশি মতুয়া সম্প্রদায়ের একটি বিশাল অংশের মানুষের বসবাস রয়েছে বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রে। বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ। এই আইন চালু হওয়ার ফলে ভোটের উপরেও প্রভাব পড়বে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের সদস্যরা। বিষয়টি নিয়ে বিজেপি বিধায়ক সুব্রত ঠাকুর বলেন, ‘শুধু এই কেন্দ্র কেন, সমস্ত কেন্দ্রেই এর প্রভাব পড়বে।’
এদিন সকাল থেকেই ঠাকুরবাড়িতে দূরদূরান্ত থেকে মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষরা আসেন শান্তনু ঠাকুরের সঙ্গে দেখা করতে এবং ধন্যবাদ জানাতে। গতকাল থেকেই শুরু হয়েছে মিষ্টিমুখ এবং আনন্দ উৎসবের সঙ্গে ডঙ্কা বাজানোর পর্ব। বনগাঁর ঠাকুরনগরের ঠাকুরবাড়ি এখন উৎসবমুখর। কাসর, ঘণ্টা, ঢোল বাজিয়ে আনন্দে মেতে উঠেছেন অনেকেই।