Shankar Adhya: আমি বালুর নামে কিছু বলিনি’, ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে রিগিং হয়ে থাকলে তার দায় বর্তমান পুর প্রশাসকেরও: শঙ্কর

0
1487

১৭ নম্বর ওয়ার্ডে রিগিং হয়ে থাকলে তার দায় বর্তমান পুর প্রশাসকেরও, বনগাঁ জেলা তৃণমূল যুব সভাপতি সন্দীপ দেবনাথ-এর সাংবাদিক বৈঠকের পাল্টা সাংবাদিক বৈঠক করে বললেন বনগাঁর প্রাক্তন পুরপিতা শঙ্কর আঢ্য :

দেশের সময় , বনগাঁ: কয়েকদিন আগেই তাঁর মন্তব্যে বিতর্কের ঝড় উঠেছিল,  সেই মন্তব্যকে কেন্দ্র করে এ বার সাংবাদিক বৈঠকে সরাসরি ক্ষমা চাইলেন বনগাঁ পুরসভার প্রাক্তন পুরপ্রশাসক শঙ্কর আঢ্য। পাশাপাশি, তিনি এদিন বলেন, “আমি বালুর বিরুদ্ধে কোনও মন্তব্য করিনি। আমি যা বলেছি তার জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী।” স্পষ্টই জানিয়ে দেন, প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তিনি কোনও মন্তব্য করেননি।

ঠিক কী বলেছিলেন  শঙ্কর? বনগাঁর একটি  দলীয়  সভায় শঙ্কর বলেছিলেন, “২০১৫ সালের বনগাঁ পুরসভা নির্বাচনে ব্যাপক রিগিং হয়েছিল। দলের নির্দেশেই ভোট করেছিলাম। দলের শীর্ষ নের্তৃত্বের নির্দেশে জোর করে ভোট করানো হয়েছিল। তার জন্য বনগাঁর মানুষের কাছে ক্ষমা চাইছি। সেই সময় ভুল করেছিলাম।” একইসঙ্গে তৃণমূল পরিচালিত বনগাঁ পুরসভায় আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগও করেন তিনি। দেখুন সেই ভিডিওটি:

শঙ্করের এই মন্তব্যে কার্যত বিতর্কের ঝড় ওঠে। কারণ, শঙ্কর সরাসরি মুখে নাম না করলেও বিতর্কের তির যে  জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের দিকে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ, ২০১৫ সালে জ্যোতিপ্রিয় ছিলেন তত্‍কালীন জেলা সভাপতি ও খাদ্যমন্ত্রী। যদিও, শঙ্করের এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে কোনও মন্তব্য করেননি জ্যোতিপ্রিয়।


যদিও উত্তর ২৪ পরগনার জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব  জানিয়েছে প্রাক্তন পুরপ্রশাসকের এই মন্তব্যের সঙ্গে দল সহমত নয়। তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি আলোরানি সরকার বলেন, “ক্ষমা চাওয়া অপরাধ নয়। ক্ষমা চেয়েছেন ভালোই করেছেন। তবে তিনি যেভাবে কারও নির্দেশে একাজ করেছেন বলে দাবি করেছেন, তা ঠিক নয়। অন্য কাউকে দোষারোপ করে তিনি গর্হিত কাজ করেছেন।”

আলোরানি সরকার বলেন, “আমি তিনমাস জেলার দায়িত্ব নিয়েছি। ২০১৫ সালে কী হয়েছে বলতে পারব না। তবে এটুকু বলতে পারি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে সারা রাজ্যের মানুষ ভোট দেন। বনগাঁতেও তার ব্যতিক্রম হয় না। তৃণমূলের জেতার জন্য রিগিংয়ের দরকার হয় না। বাংলার মানুষ দুহাত তুলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আশীর্বাদ করেছেন।” 

বৃহস্পতিবার বনগাঁ জেলা তৃণমূল যুব সভাপতি সন্দীপ দেবনাথ সাংবাদিক বৈঠক করে তোপ দাগলেন শঙ্করের বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, ‘‘উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান পাগলের প্রলাপ বকছেন। আমরা তৃণমূলের প্রতীকে নির্বাচনে জিতি। অবশ্যই জানা দরকার, আমাদের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি ও তৃণমূলের প্রতীক ছাড়া আর কিছুই থাকে না। ২০১৫ সালেও এ ভাবেই মানুষের কাছে ভোট চেয়েছিলাম। মানুষের আশীর্বাদে জয় এসেছিল।’’ সন্দীপের চ্যালেঞ্জ, ‘‘বনগাঁর প্রাক্তন পুরপিতা ও তাঁর স্ত্রী কী ভাবে ভোটে জিতেছিলেন, ওঁরা বুকে হাত রেখে বলুন। সাধারণ মানুষ ওঁর দ্বারা পদে পদে অত্যাচারিত তাঁর বিরুদ্ধে তৃণমূল ব্যবস্থা নিতে চলেছে বলেও এদিন জানান সন্দীপ ।’’

এরপরেই, তার পাল্টা জবাব এল। শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠকে প্রকাশ্যে তাঁর মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়ে নেন বনগাঁর প্রাক্তন পুরপ্রশাসক।পাশাপাশি, তিনি এদিন বলেন, “আমি বালুর বিরুদ্ধে কোনও মন্তব্য করিনি। আমি যা বলেছি তার জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী।” স্পষ্টই জানিয়ে দেন, প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তিনি কোনও মন্তব্য করেননি। এদিন তিনি আরও বলেন ২০১৫ সালের বনগাঁ পুরসভা ‌নির্বাচনে ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে যদি রিগিং হয়ে থাকে, তাহলে তার দায়ভার বনগাঁ পুরসভার বর্তমান পুর প্রশাসকেরও। কারণ তিনি নিজেই ওই ওয়ার্ডের বাসিন্দা।’ শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠক করে এমনই অভিযোগ করলেন ‌বনগাঁ পুরসভার প্রাক্তন প্রধান শঙ্কর আঢ্য। এদিন তিনি আরও অভিযোগ করেন, ‘‌বনগাঁয় যারা প্রথম দিন থেকে তৃণমূল দলের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন, তাঁদেরকে দলের কোনও অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে না। এতে দলের ক্ষতি হচ্ছে।’ 

এদিন তিনি অভিযোগ করেন, ‘‌আমি কোনও দলবিরোধী মন্তব্য করিনি। বক্তব্যে কোথাও ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে রিগিং করে জেতানো হয়েছিল বলেও উল্লেখ করা হয়নি। সাংবাদিক বৈঠক করে যারা আমার বিরুদ্ধে নানা অশালীন কথা বলেছেন, তাঁরাই আসলে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করছেন। তাঁদের আচরনেই পরিষ্কার হচ্ছে, দলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রয়েছে। যারা ২০১৯ সালে বিজেপিতে গিয়েছিল, তারাই এখন দলের বড় নেতা হয়েছে।’‌

এদিন সাংবাদিক বৈঠকের মাধ্যমে শঙ্কর আঢ্য দলের রাজ্য নেতৃত্বের কাছে আবেদন জানান, যেসব নেতারা নির্বাচনে নিজের বুথে দলকে জেতাতে পারেন না, তাঁদের যেন দলের পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে যারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দলের জন্য প্রথম দিন থেকে লড়াই করে যাচ্ছেন, তাঁদের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব দেওয়া হোক। যারা সাংবাদিক বৈঠক করে দলের কুৎসা ছড়াচ্ছেন, তাঁদের ব্যাপারে তিনি দলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানাবেন বলে এদিন জানান শঙ্কর আঢ্য।

দেখুন ভিডিও:

https://www.facebook.com/DesherSama/videos/6647197072017612/

https://fb.watch/9wA9kdWOc7/

প্রসঙ্গত, গত জুন মাসেই বনগাঁ পুরসভায় বড়সড় রদবদল হয়েছিল। বনগাঁ পুরসভার প্রশাসক শঙ্কর আঢ্যকে সরিয়ে সেই জায়গায় নিয়ে আসা হয় বিধায়ক গোপাল শেঠকে। বনগাঁ পুরসভার প্রসাশক পদ থেকে শঙ্করকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে বলে অনেক দিন ধরেই জল্পনা চলছিল। বিধানসভা নির্বাচনের দেড়মাস পরেই এই সিদ্ধান্ত নেয় দল।

২০১৫-র পুরনির্বাচনে বনগাঁর ২২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২১টিতে তৃণমূল জয়লাভ করে৷ ১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জয়ী হয়ে তখন চেয়ারম্যান হয়েছিলেন শঙ্কর। এর পর ২০১৯-এর মে মাসে ১৩ জন কাউন্সিলর শঙ্করের বিরুদ্ধে স্বৈরাচার ও স্বজনপোষণের অভিযোগ করে অনাস্থা আনেন। তাঁরা চেয়ারম্যান পদ থেকে শঙ্করকে সরিয়ে দেওয়ার আবেদনও জানিয়েছিলেন জেলা নেতৃত্বের কাছে। তারপর যদিও কয়েকজন কাউন্সিলর শঙ্করের পক্ষে সুর তোলেন। বাকিরা যোগ দেন বিজেপিতে। সেসময়, শঙ্কর জানিয়েছিলেন, তাঁকে না জানিয়েই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।

পৌরসভা নির্বাচনে  শঙ্কর ও গোপালের নিজ নিজ অনুগামীরা ভোটের ময়দানে একে অপরের পাশে দাঁড়াবে না বলেই অনুমান সংশ্লিষ্ট মহলের। সেখানে প্রাক্তন পুর প্রশাসক দলের টিকিট না পেলে নিজের উদ্যোগে দাঁড়িয়ে পড়তে পারেন ভোটে। তেমন পরিস্থিতি যাতে না হয়, সেকথা জানিয়েই আগে থেকেই  হুঁশিয়ারি দেন তৃণমূলে নেত্রী আলোরানি সরকার।

এ বিষয়ে বনগাঁর বিজেপি নেতা দেবদাস মণ্ডল বলেন, ‘‘এখন প্রাক্তন পুরপিতাকে ঝেড়ে ফেলার জন্য তৃণমূল এ সব বলছে। উনি যা যা করেছেন তৃণমূল জানত না, এটা কতটা বিশ্বাসযোগ্য? ২০১৯ সালেই বনগাঁর মানুষ এর বিচার করেছেন।’’

Previous article26/11 Mumbai Attack: ভুলছি না কখনও, ২৬/ ১১ ! মুম্বই সন্ত্রাসের বর্ষপূর্তিতে টুইট বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্করের
Next articleKolkata Municipal Election 2021: এক ব্যক্তি এক পদ’ নীতি রইল দূরেই ,কলকাতা পুরভোটে লড়বেন ফিরহাদ-সহ ৬ বিধায়ক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here