বিদ্যার দেবী সরস্বতী। গানের দেবী। বসন্ত পঞ্চমীর দিন পলাশ ফুটলে দেবী নেমে আসেন বাংলার ঘরে ঘরে। অলিতে গলিতে ইস্কুল কলেজে। ভোরবেলা উঠে কেউ বই রেখে আসে দেবীর পায়ের কাছে। কেউ গীটার। একটু পরে ঠাকুরমশাই আসলে পুজো হবে। অঞ্জলি দেবে সবাই। হাতেখড়ি হবে দিগন্তের বাঙালি সন্তানের। শ্লেটে শ্লেটে পেন্সিলের সাদা দাগ ফুটে ওঠে, অ মানে অসীম, ক মানে কবিতা।
এ এক আশ্চর্য দেবী। ধন নেই, দৌলত নেই, বৈভব নেই, মোক্ষ নেই। কিন্তু কত কাল ধরে বাংলার মেঠো আলপথ ধরে কিশোর ছুটে আসে তাঁকে দেখবে বলে। আর কিশোরী মুগ্ধ চোখে দেখে কুয়াশায় ঢেকে গেছে মায়াপথ। আজ বসন্ত। আজ ফুল ফোটে কত!
বাংলার বাইরে এ দৃশ্য দেখা যায় না। কাজের সূত্রে রাজস্থান গুজরাট মহারাষ্ট্র বারে বারে যেতে হয়। সেখানে মাটি খুঁড়লে সম্পদ ঝনঝন করে। মাটির উপর কারখানার সারি। সেখানে পূর্বপুরুষ থেকেই মানুষ ধনী। কত উন্নত তাঁদের অর্থকড়ির হিসাব! সেখানে গণেশ পূজিত হন। দানবাক্সের ভেতর প্রতিস্থাপিত হয় আস্ত আস্ত ট্যাঁকশাল।
এসব জায়গা থেকে বহুদূরে গাঙ্গেয় বাংলায়, লুঠ হয়ে আসা বাংলায়, সম্পদ মানে যেখানে শুধুই শষ্য, সেই গরীবদেশে বিদ্যার পুজো হয়। রাস্তায় বাইক আটকে দশটাকা চাঁদা নিয়ে অচেনা বালক বলে, প্রসাদ খেয়ে যাবে কিন্তু! আর ফুরফুর করে স্বরবর্ণগুলো বাতাসে ভেসে যায়। ব্যঞ্জনবর্ণরা বয়সে একটু বড়। তারা আজ কলেজে যাবে, বাইক চালাবে, বলেই দেবে আজকে, ভালবাসি।