আজ রবিবার সরস্বতী পুজো উপলক্ষে চারদিকে উৎসবের আমেজ। সকাল থেকেই মণ্ডপে মণ্ডপে, বাড়িতে বাড়িতে কাঁসর-ঘণ্টার বাজছে। কিন্তু এই উৎসব, পড়াশোনার দেবীর আরাধনা থেকে ওরা তখন শত হস্ত দূরে। কাছে থেকেও যেন আলোকবর্ষ দূরে দাঁড়িয়ে আছে এই কচিকাঁচারা।
পেটের দায়ে সাত সকালে শহরের কোন বড় রেস্তোরাঁর সামনে বা ফুটপাতে গিয়ে হাজির হয় ওরা। কারণ রোজের মত আজও যে কিছু খেতে হবে ওদের!
চারিদিকে উৎসবের আমেজের মধ্যেই কলকাতার পথ শিশুদের এই দৃশ্য মনটা ভারাক্রান্ত করে দেয়। সেখানকার ছোট ছোট শিশুদের পুজোর আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠার সুযোগ প্রায় নেই বললেই চলে।
সকাল হলে ব্যাগ পিঠে নিয়ে স্কুলে যাওয়ার পরিবর্তে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে খাবার জোগাড়ের দায়িত্ব নিতে ছোটে এই ছোট কাঁধগুলি ।
এই শ্রমিক পরিবারের সন্তানরা অল্প বয়সেই বুঝে গিয়েছে কিছু কাজ না করলে পেটের ভাত জুটবে না। তাই সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে খাদ্য সংগ্রহের কাজ।
আজ সরস্বতী পুজো উপলক্ষে ওদের খুব মজা। দুপুরে পেট ভরে খাওয়ার জন্য কোন কাজ বা কষ্ট করতে হয়নি।
সকাল সকাল স্নান সেরে পরিষ্কার জামা কাপড় পরে এক দৌড়ে চলে এসেছিল সিদো কানহু ডহরের ৬ এস্প্লানেড ইস্টে কলকাতা ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজিত সরস্বতী পুজোর মন্ডপে । প্রথমে সেখানে চিত্র যেথা ভয়শূন্য … আলোকচিত্র প্রদর্শনীর সামনে এসে বেশ কিছুক্ষণ অবাক হয়ে ছবির দিকে তাকিয়ে থেকে সরস্বতী প্রতিমায় প্রণাম ঠুকে আবার এক দৌড়ে চলে যায় প্রসাদ বিতরণের জায়গায় ।
কলকাতা ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের দেওয়া খিচুড়ি খেতে খেতে একে অপরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি ওদের মুখে ফুটে উঠল বেশ কয়েকবার । যাইহোক দুটো খেয়ে তারা বাঁচতে পারছে এটাই যেন ওই ছোট ছোট শিশুদের কাছে অনেক। পেট ভরে প্রসাদ খেয়ে মন্ডপ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় আরও একবার সরস্বতী প্রতিমার দিকে তাকিয়ে প্রণাম করলো ওরা। হয়ত মনে মনে বলে গেল ফি বছর আবার আসব মা ।
বাঙালির বিশ্বপরিচয়ে জড়িয়ে আছে বিদ্যা ও শিল্প চর্চার প্রতি প্রগাঢ় প্রেম । আর বারো মাসে তেরো পার্বণের তালিকায় সবচেয়ে মিষ্টি দিনটা বোধহয় সেই বিদ্যাং দেহীর আরাধনা !