দেশের সময়: গত সপ্তাহে কয়েকশো পুলিশ ফোর্স নিয়ে ঠাকুর নগরের মতুয়াধামের কাছে মিছিল করতে চেয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু মতুয়া সম্প্রদায় তা করতে দেয়নি বলে অভিযোগ। পাল্টা অভিযোগ ওঠে, এর জেরে মতুয়া অনুগামীদের মারধর করে হাসপাতালে পাঠিয়েছে তৃণমূলের লোকজন।
শুধু তাই নয়, এই মারধরের জের গড়ায় ঠাকুরনগর হাসাপাতাল পর্যন্তও। উপরন্তু, এই নিয়ে অভিযোগ জানানো হলেও, প্রশাসনের তরফে কোনও রকম পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে দাবি শান্তনু ঠাকুরের। উল্টে নাকি ৫টি এফআইআর রেজিস্ট্রার করা হয় প্রহৃতদের বিরুদ্ধে এবং বিজেপি-র কিছু সমর্থককে গ্রেফতারও করা হয়। এই পরিস্থিতিতে বিচার চেয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হলেন শান্তনু ঠাকুর। তৃণমূলের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তিনি। আগামী কাল, মঙ্গলবার সেই মামলার শুনানি হবে।
ঘটনার সূত্রপাত গত রবিবার, ১১ জুন। ঠাকুরনগরে মতুয়াধাম বা ঠাকুর মন্দিরে পুজো দিতে আসার কথা ছিল তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সেই কারণেই সকাল থেকে এলাকার তৃণমূল নেতৃত্ব মন্দির চত্বর সাজানো শুরু করে। কিন্তু দুপুর গড়াতেই চিত্র পাল্টে যায়। মতুয়াদের একাংশের সঙ্গে বচসা শুরু হয় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের। ভেঙে ফেলা হয় অভিষেকের জন্য তৈরি করা তোরণও।
তৃণমূলের অভিযোগ, এলাকার সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের নেতৃত্বেই এমন কাণ্ড ঘটিয়েছে বিজেপি। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়ে যায়, যে মূল মন্দিরের ফটক বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ।
এর পরে বিকেলের দিকে ঠাকুরনগর পৌঁছন অভিষেক। কিন্তু মূল মন্দিরের দরজা বন্ধ থাকায় ভেতরেই ঢুকতে পারেননি তিনি। পাশের মন্দিরে গিয়ে পুজো দেন অভিষেক। এমনকী মতুয়াধামের ঠাকুরবাড়িতে অভিষেকের জন্য তৈরি তোরণ ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে শান্তনু ঠাকুরের অনুগামীদের বিরুদ্ধে। এর পর বাইরে এসে সরাসরি শান্তনুকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে অভিষেক বলেন, ‘মতুয়াধাম কারও পৈতৃক সম্পত্তি নয়। আমি তিন মাস পর আবার আসব। পারলে আটকান।’
অভিষেক ঠাকুরনগর ছাড়ার পরই তৃণমূল এবং বিজেপির সংঘর্ষ শুরু হয়। বিজেপির অভিযোগ, তৃণমূলের লোকজনের মারে তাদের বেশ কয়েক জন আহত হন। তৃণমূলও পাল্টা মারধরের অভিযোগ করে। দুই পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হন। তৃণমূল ও বিজেপি, নিজেদের কর্মীদের হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেও ধুন্ধুমার পরিস্থিতি বেঁধে যায়।
তারপর সন্ধে গড়ালে মতুয়াধামের এই ঝামেলার রেশ গিয়ে পড়ে হাসপাতালেও। অভিযোগ ওঠে, শান্তনুর অনুগামীদের ওপর চড়াও হয়েছে তৃণমূলকর্মীরা। উঠেছে মারধরের অভিযোগও। পুলিশের সামনেই গোটা ঘটনা বলেছে, দাবি করেছেন বিজেপি কর্মীরা।
যদিও বিজেপির এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল। তাদের দাবি, বিজেপি কর্মীরাই আক্রমণ করেছেন তৃণমূল কর্মীদের ওপর। এদিকে, দু’পক্ষের ধস্তাধস্তির মধ্যে পড়ে বনগাঁ উত্তরের বিজেপি বিধায়ক অশোক কীর্তনিয়া আহত হয়েছেন। এমনকী পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর মধ্যেও ধস্তাধস্তির খবরও পাওয়া যায়।
ঘটনার খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে পৌঁছোন বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর। তাঁর অভিযোগ, পুলিশ তাঁকে মারধর করেছে। পাল্টা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকও সুর চড়িয়েছেন। এদিন প্রথম থেকেই তাঁকে ঢুকতে বাধা দেওয়া চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন অভিষেক।
এই ঘটনার জেরে এবার হাইকোর্টের দ্বারস্থ হলেন শান্তনু ঠাকুর ৷ আগামীকাল অর্থাৎ মঙ্গলবার শুনানির দিকেই তাকিয়ে সকলে।