দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ফেব্রুয়ারি মাসের শুরু থেকেই সঙ্গীতের জগতে একের পর এক নক্ষত্রপতন হয়েচলেছে। শুরুটা হয়েছিল লতা মঙ্গেশকরকে দিয়ে। তারপর সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ও ত্যাগ করলেন পৃথিবীর মায়া। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কলকাতার নার্সিংহোমে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন বাংলার ‘গীতশ্রী’, থেমে গেছে তাঁর সুরের ধারা। মঙ্গলবার রাতে সুরপ্রেমীদের কাঁদিয়ে চলে গেছেন কিংবদন্তি সুরকার বাপ্পি লাহিড়িও।
সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের মরদেহ বুধবার বেলা বারোটা থেকে রাখা ছিল রবীন্দ্রসদন চত্বরে। সেখানেই তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে মানুষের ঢল নামে। দূর-দূরান্ত থেকে ভক্ত, অনুরাগীরা আসেন রবীন্দ্রসদনে, প্রিয় শিল্পীকে শেষবারের মতো চোখের দেখা দেখবেন, আশা এটুকুই।
বাঙালির মন-প্রাণ জুড়ে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় আজও উজ্জ্বল হয়ে আছেন, বোঝা গেল রবীন্দ্রসদন চত্বরে ভিড় করা মানুষগুলোর কথা শুনে। কেউ সল্টলেক, বাঘাযতীন, কেউ আবার এসেছেন দিল্লি থেকে। ছোটবেলা কেটেছে যাঁর গান শুনে, তাঁকে শেষ দেখা দেখতে এসে র্বাঁধ ভাঙা চোখের জলে ভেসেছে রবীন্দ্রসদন চত্বর৷।
ছোটবেলায় সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের পাগল করা ভক্ত ছিলেন যিন এখন তিনি ৭৪ -এ পা দিয়েছেন৷ প্রিয় শিল্পীর শেষযাত্রায় এসেছিলেন এমন অনেকেই ৷ তাঁদের কথায়, ‘জন্মে থেকেই ওঁনার গান শুনছি। প্রতিটা ফাংশন সামনের আসনে বসে উপভোগ করেছি। বাড়িতে ওঁনার অনেক ছবি রাখা আছে। এদিন তাঁরা যেন কোনও কথাই বলতে পারছিলেন না।’
স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে অনেকের গলা কেঁপে গেল। স্মৃতির সরণি বেয়ে উত্তম-সুচিত্রার ছবি, বাংলা সিনেমার সেদিনের সেই স্বর্ণযুগের প্রসঙ্গও উঠে এল তাঁদের কথায়।
সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় আর নেই। অনেক বড় সম্পদ হারালাম আমরা৷ এই শূন্যতা আর পূরণ হবে না। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গান শুনলেই মনে পড়ে সুচিত্রা সেনের কথা, উত্তম-সুচিত্রার ছবির কথা।
শুধু তো বয়স্করাই নন, রবীন্দ্রসদনে এদিন তরুণ প্রজন্মের ভিড়ও ছিল চোখে পড়ার মতো। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের নশ্বর দেহের সামনে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে প্রবাদ প্রতিম শিল্পীকে চোখের দেখা দেখতে, তাঁর শেষযাত্রার শরিক হতে পেরে আবেগতাড়িত তাঁর অনুরাগীরা৷ লতা মঙ্গেশকর, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, বাপ্পি লাহিড়ি, মাত্র একটা সপ্তাহের মধ্যেই তিনজন চলে গেলেন! যেন মানতে পারছেন না কেউ। সন্ধ্যার প্রয়াণ শূন্য করে দিয়ে গেল বাঙালির হৃদয়, আরও একবার।
এদিন পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষকৃত্য সম্পন্ন হল গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের। মঙ্গলের সন্ধেয় ‘সন্ধ্যা’ ইহলোক ত্যাগ করেছেন। আর বুধবার পূর্ণিমার সন্ধেয় যখন চাঁদ আকাশে ঝলমল করছে সেই সময় চিরতরে বিলীন হল তাঁর দেহ। কেওড়াতলা মহাশ্মশানে গান স্যালুট দেওয়া হয় সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে।
এরপর অন্ত্যোষ্টি ক্রিয়া শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এছাড়াও রাজ্যের একাধিক নেতা-মন্ত্রী, সঙ্গীত জগতের একাধিক তারকা ও প্রচুর ভক্ত উপস্থিত ছিলেন গীতশ্রীর অন্তিম যাত্রায়।
মঙ্গলবার সন্ধেয় গীতশ্রীর মৃত্যু সংবাদ আসে। রাতে পিস ওয়ার্ল্ডে রাখা হয় তাঁকে। বেলা ১২টা থেকে রবীন্দ্রসদনে শায়িত ছিল সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের নশ্বর দেহ। কোচবিহার সফর কাটছাঁট করে বিকেলে ফিরে আসেন মুখ্যমন্ত্রী। রবীন্দ্রসদনে যান তিনি। এরপর শুরু হয় অন্তিম যাত্রা। শিল্পীর মরদেহ নিয়ে প্রচুর মানুষ কেওড়াতলার দিকে রওনা দেন। পা মেলান মমতা ব্যানার্জিও। পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় চোখের জলে প্রিয় গায়িকাকে বিদায় জানালেন অগণিত ভক্তরা। তিনি ভবিষ্যতে থাকবেন না, তবে তাঁর সৃষ্টি, গান আজীবন থেকে যাবে শ্রোতাদের হৃদয়ে।