দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ভাল নেই সলমন রুশদি। শুক্রবার নিউইয়র্কের একটি অনুষ্ঠানমঞ্চেই ছুরিবিদ্ধ হন বিখ্যাত লেখক। সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে এয়ারলিফ্ট করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই অস্ত্রোপচার করতে হয়। বর্তমানে তাঁকে ভেন্টিলেটরে রাখা হয়েছে বলেই জানা গিয়েছে। সংবাদসংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, সুস্থ হয়ে গেলেও একটি চোখ হারাতে পারেন বিখ্যাত লেখক। অন্যদিকে, ইতিমধ্যেই হামলাকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযুক্ত কেন হামলা চালাল, তার কারণ খতিয়ে দেখছে নিউইয়র্ক পুলিশ।

মঞ্চে উঠে তখন সবে পরিচয় পর্ব শুরু করেছেন বুকারজয়ী লেখক গোটা প্রেক্ষাগৃহে আড়াই হাজারের বেশি দর্শক। বক্তৃতা শুরু করতেই মঞ্চে উঠে পড়লেন এক যুবক। পরনে কালো পোশাক, মুখ ঢাকা কালো মাস্কে। তখনও বোঝা যায়নি কী ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটতে চলেছে। প্রত্য়ক্ষদর্শীদের অনেকেই ভেবেছিলেন ওই ইভেন্টেরই কোনও স্টান্ট করতে উঠেছিলেন সেই যুবক। এর পরের ঘটনা হাড়হিম করে দেয় প্রেক্ষাগৃহের হাজার হাজার মানুষকে।

দর্শকদের মধ্যেই ছিলেন ক্যাথি জোনস। তিনি বলছেন, হাতে ছুরি নিয়ে রুশদির ওপর আচমকাই ঝাঁপিয়ে পড়ে কালো পোশাক পরা সেই ব্যক্তি। তারপর এলোপাথাড়ি ছুরির কোপ বসাতে থাকে। রক্তে ভেসে যায় গোটা মঞ্চ। আয়োজকরা ছুটে আসতে আসতেই ১০-১৫ টা ছুরির কোপ বসিয়ে দিয়েছিল সেই আততায়ী। লুটিয়ে পড়েছিলেন রুশদি।

মঞ্চেই লুটিয়ে পড়েন বুকারজয়ী সাহিত্যিক। শোরগোল পড়ে যায় প্রেক্ষাগৃহে। সঙ্গে সঙ্গে ছুটে আসেন অনুষ্ঠানের আয়োজক ও প্যারামেডিকরা। প্রাথমিক চিকিৎসার পরই তাঁকে এয়ারলিফ্ট করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

জানা গিয়েছে, ঘাড়ে ও পেটে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে রুশদির। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর অস্ত্রোপচার করতে হয়। কয়েক ঘণ্টা বাদে তাঁর অস্ত্রোপচার শেষ হয়। বর্তমানে তিনি ভেন্টিলেটরে রয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। কথা বলার ক্ষমতাও হারিয়েছেন। যদি তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন, তবুও একটি চোখ হারাতে পারেন বিখ্যাত লেখক।

তাঁর বইয়ের এজেন্ট অ্যান্ড্রু ওয়াইলি বলেন, “খবর খুব একটা ভাল নয়। সলমন হয়তো একটি চোখ খোয়াতে পারেন। তাঁর হাতের স্নায়ুও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যকৃতেও ছুরির আঘাত লাগায়, তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”

এদিকে, নিউইয়র্ক স্টেট পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, হামলাকারীর পরিচয় জানা গেছে। তার নাম হাদি মাতার (২৪)। নিউজার্সির ওই বাসিন্দার কাছে রুশদির অনুষ্ঠানের পাসও পাওয়া গেছে। কী কারণে সে হামলা চালাল, তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ।

ভারতীয় বংশোদ্ভূত সলমন রুশদি বিগত প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে গা ঢাকা দিয়েই থাকতে বাধ্য হয়েছেন। ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর উপন্যাস ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’। তারপর থেকেই মৌলবাদীদের বিষনজরে তিনি। তাঁর নামে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন ইরানের তৎকালীন সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লা রুহোল্লা খোমেইনি।

ওই বইয়ের কারণেই নব্বইয়ের দশকেও ইটালির মিলানে তাঁর উপর হামলা হয়। গত ২০ বছর ধরে নিউ ইয়র্কেই থাকছেন ভারতীয় বংশদ্ভুত এই লেখক। এবার সেখানেও তাঁর ওপর হামলা হল। যার তীব্র নিন্দা করেছেন বিশ্বের নানা প্রান্তের সাহিত্যকরা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here