দেশের সময় কলকাতা কন্ডোম বিতর্ক এখনও পিছু ছাড়েনি অভিনেত্রীর। শিবলিঙ্গে জন্মনিরোধক পরানোর ছবি পোস্ট করে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন টলিউডের অভিনেত্রী। পরে অবশ্য সেই বিতর্কের জেরেই সায়নীর রাজনীতিতে আগমন। এবং একাদিক্রমে তৃণমূলের বিধানসভার টিকিট লাভ এবং দলের যুবনেত্রীর পদে অভিষেক। এখন তিনি যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী।
গত ১০ মার্চ তৃণমূলের ব্রিগেডের সভা থেকে যাদবপুরের প্রার্থী হিসাবে সায়নীর নাম ঘোষণার দিন পনেরোর মধ্যেই যাদবপুরে শিবলিঙ্গে পুজো দিয়েছিলেন সায়নী। তার পরে টানা প্রায় আড়াই মাস ভোটের প্রচার করেছেন। শনিবার লোকসভা নির্বাচনের শেষ দফায় ভোট ছিল তাঁর কেন্দ্রে। আড়াই মাসের পরিশ্রমের পর সায়নীর অগ্নিপরীক্ষা।
নির্বাচনের দিন এল, এদিন সকাল সকাল হাজির হলেন পাড়ার শিবমন্দিরে। শিবলিঙ্গের মাথায় দুধ ঢেলে পুজো দিলেন সায়নী। ফুল-মোমবাতি-ধূপ দেখিয়ে আরতিও করলেন।দেখা গেল সায়নী ভরসা রেখেছেন সেই শিবেই।
যাদবপুরে ভোটের দিন সকালেই তিনি পৌঁছে যান পাড়ার শিবমন্দিরে। সবুজ পাড় গেরুয়া আঁচলের সাদা শাড়িটি গায়ে জড়িয়ে শিবলিঙ্গের সামনে বসে পুজো করেন সায়নী। তার পরে একে একে পুজো করেন মন্দিরের অন্য দেব-দেবীর মূর্তিকেও। মোমবাতি এবং ধূপ দেখিয়ে আরতিও করতে দেখা যায় তাঁকে। শেষে কিছু ক্ষণ হাতজোড় করে প্রার্থনা করে মন্দির থেকে বেরিয়ে যান যাদবপুরের প্রার্থী। রওনা হন ভাঙড়ের দিকে।
যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ভাঙড়ে ভোটের আগের রাত থেকেই দফায় দফায় অশান্তি ও উত্তেজনা। ভোটের দিনও তা অব্যাহত। বেলা যত গড়িয়েছে ততই ভাঙড়ের বিভিন্ন জায়গা থেকে উঠে আসতে থাকে একের পর এক সংঘর্ষ ও অশান্তির খরব। তবে এই সমস্ত অশান্তির জন্য নাম না করে বিরোধীদেরই নিশানা করলেন ওই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সায়নী ঘোষ।
যাদবপুরের তৃণমূল প্রার্থী বলেন, ‘যাঁরা এই ধরনের অশান্তি সৃষ্টির করছেন, তাঁরা বুঝতেই পারছেন যে জেতার কোনও অবকাশ নেই। ফলে অশান্তি করতে বাধ্য হচ্ছেন। তৃণমূল জেতার অবস্থায় রয়েছে। মানুষ তৃণমূলের সমর্থনে বেরিয়ে আসবে এই বিষয়ে আমরা নিশ্চিত। যাঁরা ওখানে অশান্তি করছেন, তাঁদের অনুরোধ করব, এটা রাজনৈতিক লড়াই। আপনারা বড় নেতা। আর নেতারা নেতাদের মতো কাজ করলেই ভালো। কর্মীদের হিংসার মুখে ঠেলে দেবেন না। মানুষকে শান্তিতে ভোট দিতে দিন।’ এদিন ভাঙড়ে যাবেন বলেও জানান সায়নী। পাশাপাশি ভোট দিতে যাওয়ার আগে বাড়ির সামনের শিব মন্দিরে পজোও দেন যাদবপুর কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী।
ভোটের আগের রাত থেকেই দফায় দফায় অশান্তি ছড়িয়েছে ভাঙড়ে। ভোটের দিন ভাঙড়ের ২ এর সাতুলিয়া এলাকায় ভোট দিতে গেলে আইএসএফ কর্মী সমর্থকদরে ঘিরে ধরে মারধরের অভিযোগ তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। ধারাল অস্ত্র এবং বন্দুকের বাঁট দিয়ে হামলা চালান হয় বলে অভিযোগ। এমনকী রেয়াত করা হয়নি মহিলারাও। ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন আইএসএফ-এর দুই কর্মী। খবর পেয়ে তড়িঘড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। আহতদের চিকিৎসার জন্য জিরানগাছা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। যদিও ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছে তৃণমূল।
অন্যদিকে আইএসএফ ও তৃণমূলের সংঘর্ষে উত্তেজনা ছড়ায় ভাঙড়ের ফুলবাড়ি এলাকাতেও। বুথে এজেন্ট বসাতে গেলে আইএসএফ কর্মীদের উপর আক্রমণ করার অভিযোগ ওঠে। পালটা আইএসএফ-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে তৃণমূলও। ঘটনায় উভয় পক্ষেরই বেশ কয়েকজন আহত। এক্ষেত্রেও ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বিশাল পুলিশ বাহিনী। তবে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দেখা পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ করেন আইএসএফ প্রার্থী নুর আলম খান। পরে অবশ্য ঘটনাস্থলে পৌঁছয় কেন্দ্রীয় বাহিনী।
এর আগে শুক্রবার রাতেও অশান্তি ছড়ায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার এই জায়গায়। এমনকী আইএসএফ প্রার্থীর গাড়িতেও ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ ওঠে। ঘটনায় পুলিশের কাছে অভিযোগও দায়ের করেন আইএসএফ প্রার্থী।
প্রসঙ্গত ২০১৫ সালে সায়নীর এক্স হ্যান্ডল (সাবেক টুইটার) থেকে একটি ছবি শেয়ার করা হয়। ছবিটি শিবলিঙ্গের। তাতে কন্ডোম পরাচ্ছেন এক মহিলা। ছবি দেখে বোঝা যায় এড্স সচেতনতার বিজ্ঞাপন। সেই বিজ্ঞাপনের ম্যাসকট ‘বুলাদি’র ছবিও ছিল বিজ্ঞাপনটিতে। নীচে লেখা, ‘বুলাদির শিবরাত্রি’। সায়নীর অ্যাকাউন্ট থেকে করা ওই পোস্টের বিবরণে লেখা ছিল, ‘‘ভগবান এর থেকে বেশি কার্যকরী আগে কখনও হননি!’’ সেই পোস্ট ঘিরেই বিতর্ক শুরু হয়। সায়নীর বিরুদ্ধে ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত হানার অভিযোগ করেন অনেকে। ওই পোস্টের প্রায় ছ’বছর পরে সায়নীর বিরুদ্ধে কলকাতার রবীন্দ্র সরোবর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি তথা উত্তর-পূর্বের তিন রাজ্যের প্রাক্তন রাজ্যপাল তথাগত রায়। পুলিশের কাছে জমা দেওয়া অভিযোগপত্রে তিনি লিখেছিলেন, ‘‘আমি শিবের ভক্ত। ১৯৯৬ সালে শিবের পুজো দেওয়ার জন্য পায়ে হেঁটে কৈলাস-মানস সরোবর যাত্রা করেছিলাম। অভিনেত্রী সায়নী ঘোষের এই ছবিটি দেখে আমার ধর্মীয় ভাবাবেগ আহত হয়েছে।
আমার আর্জি, আপনারা এই বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করুন সায়নী ঘোষের বিরুদ্ধে।’’ সেই সময় সায়নী জানিয়েছিলেন, ২০১৫ সালে তাঁর টুইটার অ্যাকাউন্ট ‘হ্যাক’ হয়েছিল। তিনি দেখার পরে ওই পোস্টটি ডিলিটও করে দেন। যদিও তাতে বিতর্ক থামেনি। এর পরে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের টিকিট পান সায়নী। প্রচারে বিজেপি ওই প্রসঙ্গ টেনে বার বার আক্রমণ করে আসানসোল দক্ষিণের তৃণমূল প্রার্থী সায়নীকে। ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটেও যাদবপুর কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রচারে ওই ‘কন্ডোম বিতর্ক’ই টেনে আনেন বিরোধীরা।