দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ইউক্রেনে শুরু হয়েছে যুদ্ধ। আর সে দেশে আটকে রয়েছেন ভারতের বহু পড়ুয়া। এ রাজ্যেরও একাধিক পড়ুয়া ইউক্রেনে আটকে। দুশ্চিন্তায় পরিজনেরা। ছেলেমেয়েদের বাড়ি ফেরানোর জন্য সরকারের কাছে তাঁরা আবেদনও করেছেন ।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলার গোবরডাঙ্গা থানার অন্তর্গত বেড়গুম ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের লক্ষ্মীপুর গ্রামের দেবাশিস সাধুখাঁর মেয়ে স্বাগতা। তিন বছর আগে ডাক্তারি পড়তে ইউক্রেনে যান। মধ্য ইউক্রেনের চিফ মেডিকেল কলেজে পড়াশোনা করছেন গোবরডাঙ্গা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ওই ছাত্রী। ওই দেশে যুদ্ধ শুরু হওয়ায় তাঁর বাড়ি ফেরা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
করোনা অতিমারির ফলে অফলাইন ক্লাস বন্ধ। হস্টেলে থেকেই অনলাইনে ক্লাস করছিলেন স্বাগতা। এখন যুদ্ধের আবহে স্বাগতার জন্য বাড়ির সকলে উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। রাজ্য সরকারের তরফ থেকে চেষ্টা চালানো হচ্ছে তাঁকে শীঘ্রই ফিরিয়ে আনার। বিদেশ মন্ত্রকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। স্বাগতার পিসি সুমিতা মল্লিক জানান, খুবই চিন্তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা। ৯০ বছরের ঠাকুমা যমুনা বালা সাধুখাঁকে এখনও এই খবর জানানো হয়নি।
শুধু গোবরডাঙা নয়, হাবড়ার এক তরুণীও আটকে পড়েছেন যুদ্ধ বিদ্ধস্ত ইউক্রেনে। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার হাবড়া থানার কুমড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের কাশীপুর দক্ষিণ পাড়ার বাসিন্দা জুলফিকার বিশ্বাসের মেয়ে নিশা বিশ্বাস গত বছরের ডিসেম্বরে ডাক্তারি পড়তে ইউক্রেনে যান। মধ্য ইউক্রেনের চিফ মেডিক্যাল কলেজে পড়াশোনা করছেন দক্ষিণ বাংলা বালিকা বিদ্যালয়ের ওই প্রাক্তনী।
যুদ্ধ শুরু হওয়ায় তার বাড়ি ফেরা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। যদিও করোনা অতিমারির ফলে ক্লাস হচ্ছে না, হোস্টেলে থেকেই অনলাইনে ক্লাস করছিলেন নিশা। মেয়েকে নিয়ে আশঙ্কা-উদ্বেগে ভুগছে গোটা পরিবার। মাঝে মাঝে ভিডিয়ো কলে কথা হচ্ছে। চোখে জল নিয়েই মা জিজ্ঞাসা করছেন, মেয়ে খেয়েছে কি না, কেমন আছে। নিশার পরিবারের তরফ থেকে কুমড়া গ্রাম পঞ্চায়েত কার্যালয়ে লিখিতভাবে আবেদন করা হয় তাদের মেয়েকে যত দ্রুত সম্ভব বাড়ি ফিরিয়ে আনার জন্য। পঞ্চায়েত প্রধান রত্না বিশ্বাস বলেছেন, সব সময় তিনি পরিবারের পাশে থাকবেন, দরকার পড়লে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধের মধ্যে দুশ্চিন্তায় রায়দিঘির খাড়ি অঞ্চলের মণ্ডলপাড়া এলাকার মাঝি পরিবার। কারণ, এই বাড়ির ছেলে অর্ঘ্য মাঝি ইউক্রেনে আটকে পড়েছেন। শুধু তিনিই নন তাঁর সঙ্গে আরও তিন বাঙালি ছাত্র। রাজধানী কিভে আটকে রয়েছেন তাঁরা। প্রত্যেকেই ইউক্রেনের কিভ মেডিকেল ইউনিভার্সিটির ছাত্র।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মন্ডলপাড়ার বাসিন্দা অর্ঘ্য ইউক্রেনের একটি ইউনিভার্সিটির মেডিকেল বিভাগে তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। তবে করোনার জন্য অনলাইন ক্লাস চালু হওয়ায় বাড়িতে ফিরেছিলেন তিনি। আবার গতবছর ৮ অক্টোবর ইউক্রেন চলে যান। সেখানে ডার্নিপস্কি শহরের একটি ফ্ল্যাটে চার বাঙালি বন্ধু ভাড়া থাকেন। তাঁদের মধ্যে অলোক হালদার (২৩) জয়নগরের রানাঘাট এলাকার বাসিন্দা। শুভাশিস ভুঁইয়া (২২) পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামের বাসিন্দা৷ এবং সম্বিত দাস হুগলির জিরাটের বাসিন্দা। তাঁরা কিভ মেডিকেল ইউনিভার্সিটির চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। ইউক্রেনে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হতেই আতঙ্ক দানা বেঁধেছে চার তরুণের মনে।
সামাজিক মাধ্যমের সাহায্যে অর্ঘ্যের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানিয়েছেন, ‘‘আমরা চারজন একটি ফ্ল্যাটে রয়েছি। প্রথমে পরিস্থিতি ঠিকই ছিল এখানে (ডার্নিপস্কি)। তবে বৃহস্পতিবার থেকে বোমার শব্দ পাচ্ছি। এখনও ফ্ল্যাট ছাড়িনি। ইউক্রেনে ভারতীয় দূতাবাসের তরফে এই এলাকা থেকে কিছুটা পশ্চিমে পোল্যান্ড কিংবা হাঙ্গেরির দিকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা চলছে। তবে এখনও সঠিক খবর আসেনি। আবার ইউক্রেনে বিমান ওঠা-নামাও বন্ধ রয়েছে।’’