RG Kar Protest: সঙ্গীতের গভীরেই দৃপ্ত প্রতিবাদ!নিহত দিদির পাশে বনগাঁর স্কুলের প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্রছাত্রী সহ শিক্ষক শিক্ষিকারা :দেখুন ভিডিও

0
452
পার্থ সারথি নন্দী, দেশের সময়

বনগাঁ : ‘সঙ্কোচের বিহ্বলতা নিজেরে অপমান, সঙ্কটের কল্পনাতে হোয়ো না ম্রিয়মাণ।’ টোটোতে মাইক বেঁধে সমবেত সঙ্গীত গাইলেন স্কুলের প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্রীরা। তাঁদের এক দিদির বিরুদ্ধে হওয়া নৃশংস অপরাধের সুবিচারের দাবি নিয়ে। আরজি কর হাসপাতালে নারকীয় ঘটনার প্রতিবাদের উঠল ইছামতীর শহর বনগাঁতেও। দেখুন ভিডিও

রবিবাসরীয় সন্ধ্যায় স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে প্রতিবাদ মিছিলে সামিল হলেন আরজিকর হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বনগাঁ হাইস্কুলের অসংখ্য সহপাঠীরাও।

কুমুদিনী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রাক্তন পড়ুয়া সহ বনগাঁ হাইস্কুল, শক্তিগড় হাইস্কুল, কেশবলাল হাইস্কুল, কালিতলা বিশ্ববন্ধু শিক্ষা নিকেতন, অসিত বিশ্বাস শিক্ষা নিকেতন সহ একাধিক স্কুলের প্রাক্তন এবং বর্তমান ছাত্রছাত্রীরা। সঙ্গে বিভিন্ন গানের স্কুলের ছাত্রছাত্রীরাও হাজির ছিলেন এদিন।

ছাত্র – ছাত্রীদের মুখেও এখন ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’। স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে তাঁরাও একদিন কোনও না কোনও কর্মক্ষেত্রে যুক্ত হবে। মেধার উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন পেশায় নিজেদের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করবে। তবে, আরজি করের ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, কর্মক্ষেত্রে মেয়েদের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি । বিচার চেয়ে তাই রবিবার সন্ধ্যায় বনগাঁর নীলদর্পণের সামনে থেকে মিছিলের মাধ্যমে অভিনব প্রতিবাদ করলেন অন্তত দশ হাজার ছাত্র – ছাত্রী সহ শিক্ষক শিক্ষিকারাও ।

‘সন্দীপ তুই বদলে গেলি? কী করে তোকে ‘বন্ধু’ বলি,’ ‘ছি: সন্দীপ, ছি: ছি:- তোকে সবাই বলছে কি!’, ‘এ-ই আমাদের নোটন নয়- একে, বন্ধু ভাবতে লজ্জা হয়’, ‘তড়িঘড়ি ভাঙলো দেওয়াল, কি করেছিল প্রিন্সিপাল?’ এমনই বেশ কিছু স্লোগানে ভরে উঠলো প্রতিবাদ মিছিল। গর্জে উঠল সীমান্ত শহর বনগাঁও ।

বনগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের সহ শিক্ষিক চন্দন ঘোষ বলেন, ‘ছাত্ররা যখন এই ঘটনার প্রতিবাদ করার পরিকল্পনা নিয়ে আমাকে জানাল তখনই আমি বলেছিলাম আমিও সামিল হব । গোটা পৃথিবী আরজি কর কাণ্ড নিয়ে প্রতিবাদে সরব হয়েছে, তখন বিদ্যালয়ের ছাত্ররা কেন হত্যাকারীর যথাযথ শাস্তির দাবি চেয়ে প্রতিবাদ জানাবে এটাইতো স্বাভাবিক । দোষীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি!’

বনগাঁর কুমুদিনী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রী ও শিক্ষিকা পদ্মাবতী মন্ডল , পারমিতা ধর, কাকুলী দালালরা জানান,আরজিকর হাসপাতালের নারকীয় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তোলপাড় গোটা দেশ। প্রতিদিন রাজ্যের এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিবাদের ঢেউ আছড়ে পড়ছে। সীমান্ত শহর বনগাঁও তার ব্যতিক্রম নয়। এখানেও প্রায় প্রতিদিন দফায় দফায় প্রতিবাদী কন্ঠ সরব হচ্ছে। বিচার চেয়ে ছবি এঁকে, মিছিল – মুখরিত হচ্ছে এই শহর। রবিবার সন্ধ্যায় প্রাক্তন ছাত্রীরা নিজেদের উদ্যোগে মিছিলে সামিল হয়েছে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ।হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে প্রতিবাদ দেখায়।

মায়েদের হাত ধরে মিছিলে সামিল অসংখ্য খুদে পড়ুয়ার দল তাদেরও একটাই দাবি তারা তাদের নিহত দিদির খুনির বিচার চায় ।

গত কয়েকদিন ধরেই বনগাঁয় বিভিন্ন সময় মিছিল বের হচ্ছে। আর এই সমস্ত কর্মসূচিকে ছাপিয়ে গেল রবিবার সন্ধ্যের প্রতিবাদ মিছিল। সমাজ মাধ্যমে আরজিকর কান্ডের প্রতিবাদ জানাতে একত্রিত হওয়ার আবেদন জানানো হয়েছিল বনগাঁর বিভিন্ন স্কুলের বর্তমান এবং প্রাক্তনীদের। তৈরি হয়েছিল একাধিক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে। 

আর সেই আবেদনে সাড়া দিয়েই রবির সন্ধ্যেয় সাতটা নাগাদ নীলদর্পণের সামনে এক এক করে জড়ো হতে থাকেন ছাত্র -ছাত্রীরা । এরপর শুরু হয় প্রতিবাদ মিছিল। 
হাতে ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ডে ফুটে উঠেছিল বিভিন্ন প্রতিবাদী ভাষা। মিছিল নীলদর্পণ থেকে শুরু করে রায়  ব্রীজ, মতিগঞ্জ, রাখালদাস সেতু, বাটা মোড়, কোর্ট রোড হয়ে ফের নীলদর্পণের সামনে শেষ হয়। আর এই মিছিলে প্রায় দশ হাজার বর্তমান এবং প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীরা উপস্থিতি হয়েছিলেন। সাম্প্রতিককালে বনগাঁ শহর এমন প্রতিবাদী মিছিল দেখেনি বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দা  তাপস বিশ্বাস।

মিছিল থেকে উঠে আসছিল শুধু একটাই আওয়াজ, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস।’ আরজিকর কান্ডে যার দিকে সব থেকে বেশি আঙুল উঠছে, সেই প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ ঘটনাচক্রে এক সময়কার বনগাঁর বাসিন্দা এবং বনগাঁ হাইস্কুলের মেধাবী প্রাক্তনী। তাঁর সহপাঠীদের কথায় তাঁদের প্রত্যেকের দাবি, আরজিকর কাণ্ডে যদি সন্দীপ ঘোষ সত্যি দোষী হন, তাহলে তাঁর যেন চরম শাস্তি হয়। তিনি দোষী প্রমাণিত হলে, তাঁর নাম বনগাঁ হাইস্কুলের মেধাবী প্রাক্তনীদের তালিকা থেকে মুছে দেওয়া হয়- সেই দাবি ইতিমধ্যেই উঠেছে।

কুমুদিনীস্কুলের এক ছাত্রী অঙ্কিতা বনিক জানান, এই ঘটনা শুধু চিকিৎসা ক্ষেত্রে কলঙ্ক নয়, সমস্ত কর্মক্ষেত্রেই এমন ঘটনা হয়ে চলেছে। তাই সকল মহিলাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দাবি জানিয়েই এই প্রতিবাদ হয়েছে। যত দ্রুত এই ঘটনার সত্যতা সামনে আসুক এবং অপরাধীদের শনাক্ত করে এমন শাস্তি দেওয়া হোক, যেন সমাজের এইসব কীট বা সামাজিক ব্যাধি দূর হয় সমাজ থেকে।

স্কুলের এক পড়ুয়া রিয়া বিশ্বাস বলেন, আরজি করের ঘটনা শুনে সকলে এর একটা প্রতিবাদ জানানোর পরিকল্পনা করেছিলাম। আমরা শিক্ষিকাদের কাছে প্রস্তাব রাখি। তাঁরা আমাদের খুবই সাহায্য করেছে। আমাদের মতো অন্যান্য স্কুলেও যেন এই প্রতিবাদ হয়।

ছবিগুলি তুলেছেন – পার্থ সারথি নন্দী ।
Previous articleR G Kar Hospital Incident ‘কাউকে রেয়াত নয়, অপরাধীদের কঠোরতম সাজা হবে’, মেয়েদের উপর অত্যাচার নিয়ে ফের সরব প্রধানমন্ত্রী, বার্তা দিলেন রাজ্যগুলিকে
Next articleSantana Thakur: আর জি কর কাণ্ড: মুখ্যমন্ত্রীকে সামনে বসিয়ে জেরা করা উচিত, দাবি শান্তনু ঠাকুরের

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here