দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ আরজি কর নিয়ে সোমবারের শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট পষ্টাপষ্টিই জানিয়ে দিল, জুনিয়র ডাক্তার তথা রেসিডেন্ট ডাক্তারদের এবার কাজে ফিরতেই হবে। সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় জানিয়ে দেন, মঙ্গলবার বিকেল ৫টার মধ্যে জুনিয়র তথা রেসিডেন্ট ডাক্তাররা কাজে যোগ দিলে রাজ্য সরকার তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিতে পারবে না। কিন্তু তার মধ্যে ডাক্তাররা কাজে যোগ না দিলে সরকার শৃঙ্খলাভঙ্গের জন্য ব্যবস্থা নিতেই পারে। সেই অধিকার সরকারের রয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের এই নির্দেশের পর এদিন নবান্নে প্রশাসনিক বৈঠক থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আমি জুনিয়র ডাক্তারদের কাজে ফিরতে অনুরোধ করছি। সুপ্রিম কোর্টও সেই কথা বলে দিয়েছে। আপনাদের কোনও অভিযোগ থাকলে বা কিছু বলার থাকলে আলোচনার জন্য আসতে পারেন।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারেরা জানালেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন তাঁরা। তবুও, সব দিক খতিয়ে দেখেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সব চিকিৎসককে নিয়ে একটি জেনারেল বডি মিটিংয়ের পর জানিয়ে দেওয়া হবে পরবর্তী কর্মসূচি। দেখুন ভিডিও
আরজি করের এক আন্দোলনরত চিকিৎসক জানাচ্ছেন, আরজিু কর মামলার শুনানিতে হতাশ হয়েছেন তাঁরা। তা সত্ত্বেও, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েই বিবেচনা করবেন তাঁরা। কিন্তু এই আবহে পরবর্তী কালে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়, তা এখনও স্থির করেননি তাঁরা।
আপাতত প্রতিটি কলেজ এবং হাসপাতালের আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারেরা পৃথক পৃথক ভাবে একটি প্রাথমিক বৈঠক করবেন। এর পর বিকাল ৫টা নাগাদ আরজি কর-সহ সমস্ত মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক মিলে একটি সম্মিলিত জেনারেল বডি বৈঠক করবেন। সেই বৈঠকের পরেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন তাঁরা।
এদিনের শুরু থেকে বারবার রাজ্য সরকারের আইনজীবী কপিল সিবাল বলেন, ডাক্তাররা কাজ করছেন না। তার ফলে গোটা রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ইতিমধ্যে ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। ৬ লক্ষ মানুষ স্বাস্থ্য পরিষেবা পায়নি। বিশেষ করে হার্টের অসুখ, ক্যানসারের মতো রোগের জন্য সাধারণ মানুষ সংখ্যায় সরকারি হাসপাতালে আসেন। তাঁরা বঞ্চিত হচ্ছেন।
ডাক্তারদের তরফে আইনজীবী পাল্টা বলেন, জুনিয়র ডাক্তারদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বর্ধমান মেডিকেল কলেজ, মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ,কলকাতা
মেডিকেল কলেজে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। জুনিয়র ডাক্তারদের মধ্যে কারও অভিভাবক সরকারি চাকরি করলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিচ্ছে গুণ্ডারা। সুতরাং ডাক্তারদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে। তা ছাড়া সিনিয়র ডাক্তাররা চিকিৎসার কাজ করছেন। আন্দোলন করছেন জুনিয়র ডাক্তাররা।
কিন্তু তা শুনে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বলেন, এটা কোনও যুক্তি নয় যে শুধু সিনিয়র ডাক্তাররা আন্দোলন করছেন। প্রধান বিচারপতি বলেন, রাজ্য সরকারকে আমরা নির্দেশ দিয়েছি যে সরকারি হাসপাতালগুলিতে ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে। সিসিটিভি ক্যামেরা পর্যাপ্ত সংখ্যায় লাগাতে হবে। পুরুষ ও মহিলা চিকিৎসকদের জন্য পৃথক রেস্ট রুমের ব্যবস্থা করতে হবে। এবং সেই কাজের অগ্রগতি দ্রুত হচ্ছে কিনা সে ব্যাপারে নজর রাখতে হবে জেলা শাসকদের।
প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকার হলফনামা দিয়ে জানিয়েছে যে হাসপাতালের নিরাপত্তা পরিকাঠামো বাড়াতে তহবিল অনুমোদন করা হয়েছে। আমরা চাইছি তা দিয়ে দ্রুত কাজ শুরু হোক।
তবে প্রধান বিচারপতি ফের মনে করিয়ে দেন, ডাক্তাররা অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি পালন করতে পারে না। সর্বোচ্চ আদালত তা সমর্থন করবে না। ডাক্তারদের কাজ রোগীদের পরিষেবা দেওয়া। তবে হ্যাঁ, মঙ্গলবারের মধ্যে কাজে যোগ দিলে জুনিয়র ডাক্তারদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না বা শাস্তিমূলক ভাবে ট্রান্সফার করা যাবে না।
প্রধান বিচারপতি বলেন, রাজ্য সরকারের আইনজীবী কপিল সিবাল কথা দিয়েছেন, ডাক্তাররা মঙ্গলবার বিকেলের মধ্যে কাজে যোগ দিলে সরকার কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে না। সুতরাং রেসিডেন্ট ডাক্তাররা এবার কাজে যোগ দিন। সর্বোচ্চ আদালত বুঝিয়ে দেয়, মঙ্গলবার বিকেলের পর ডাক্তারদের কেউ কাজে যোগ দিলে এবং সরকার তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই পারে। সেটা রাজ্যের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে।