দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ আর জি কর-কাণ্ডে
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ চেয়ে মঙ্গলবার নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছে ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ’ নামে একটি সংগঠন। এনিয়ে সোশাল মিডিয়ায় চলছে প্রচার। অরাজনৈতিক এই কর্মসূচি ঘিরেই বঙ্গ রাজনীতিতে ক্রমশ চড়ছে রাজনীতির পারদ। বাংলার শাসকদল তৃণমূলের অভিযোগ এই কর্মসূচির নেপথ্যে বিরোধীদের হাত রয়েছে। আর এবার অভিযানের আগে এক ভিডিওপ্রকাশ করে বিরোধীদের চক্রান্তের তত্ত্ব সামনে আনলেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। সোমবার এক সাংবাদিক বৈঠক করে তিনি দাবি করেন, আরএসএস ও সিপিএমের একাংশ এই আন্দোলনকে সামনে রেখে বড় চক্রান্ত করছে। ভিডিও-য় এক ব্যক্তির বক্তব্য দেখিয়ে কুণালের দাবি, এরা লাশ ফেলার ষড়যন্ত্র করছে। এদের ষড়যন্ত্রে পা দেবেন না।
ওই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি দেশের সময় I
কুণালের দাবি, বেআইনি, ‘অবৈধ ভাবে কালকের নবান্ন অভিযান ডাকা হয়েছে। সোশাল মিডিয়ায় লোক খেপিয়ে অরাজকতা তৈরির চেষ্টা চলছে। যারা বাংলায় প্রত্যাখ্যাত হয়েছে, তারা উস্কানি দিয়ে হিংসা করাতে চাইছে। বাইরের রাজ্য থেকেও বাংলায় নাশকতার জন্য লোক ঢোকানো হতে পারে। পুলিশের পোশাক পরে গুলি চালিয়ে সরকারকে বদনাম করার চেষ্টা হতে পারে। কাল পরীক্ষা রয়েছে, ছাত্র সমাজের নামে অরাজকতা তৈরির চেষ্টা হচ্ছে। শকুনের রাজনীতি করছে’অভিযানের নামে চক্রান্ত দাবি করে কুণালের প্রশ্ন , ধানতলা, বানতলা, তাপসী মালিক ধর্ষণের ঘটনার পর কি তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ইস্তফা দিয়েছিলেন, যে এখন মুখ্যমন্ত্রীর ইস্তফা দাবি করা হচ্ছে ? চক্রান্তকারীরা বলছে, রাজনীতি করার জন্য মৃতদেহ চাই, ভিডিও দেখিয়ে দাবি করেন কুণাল ঘোষ। তাঁর বক্তব্যের সমর্থনে দু’টি গোপন ভিডিয়োও প্রকাশ করেছেন কুণাল।
ওই ভিডিয়ো দু’টির সত্যতা যাচাই করেনি দেশের সময় I
তাতে একাধিক ব্যক্তির মুখে ঘুরে ফিরে এসেছে ওই দু’টি শব্দবন্ধ— ‘বডি চাই’। ভিডিয়োতে তাঁরা দাবি করছেন, ২৭ তারিখের আন্দোলন আদৌ শান্তিপূর্ণ হবে না। তার কারণ, ‘বডি’ অর্থাৎ লাশ বা মৃতদেহ না পেলে আন্দোলন জোরদার হবে না। যদিও কুণালের ওই সাংবাদিক বৈঠকের পরেই বিজেপির মুখপাত্র তথা রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ আন্দোলন গতি পাওয়ায় তৃণমূল হতাশায় ভুগছে, তাই এমন অদ্ভুত আচরণ।’’
মঙ্গলবার ‘ছাত্র সমাজের’ ডাকা নবান্ন অভিযান নিয়ে যখন উত্তেজনার পারদ চড়ছে, তখন গোটা ব্যাপারটাকেই রাজনৈতিক চক্রান্ত বলে মন্তব্য করল তৃণমূল কংগ্রেস। সোমবার সকালে তৃণমূলের রাজ্য দফতরে সাংবাদিক বৈঠক করে রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ও দুই নেতা কুণাল ঘোষ এবং জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, ওরা শকুনের মতো লাশের রাজনীতি করতে চাইছে। এটা একটা রাজনৈতিক চক্রান্ত।
সাংবাদিক বৈঠকে কুণাল আরও বলেন, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু এই নবান্ন অভিযানের উদ্দেশ্য ও বিধেয় হল অশান্তি পাকিয়ে একটা অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করা। আমরা তাই বিরোধিতা করছি।
নবান্ন অভিযান নিয়ে সরকারের যে উদ্বেগ রয়েছে তা গত সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্টে শুনানির সময়েই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। সর্বোচ্চ আদালতে শুনানির সময়ে রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিব্বাল বলেছিলেন, আদালত ওই দিনের জন্য একটা এসওপি তথা স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর ঠিক করে দিক। কারণ, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের কথা বলা হলেও ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে। সুপ্রিম কোর্ট অবশ্য কোনও এসওপি দিতে রাজি হয়নি। তবে জানিয়েছে, পুলিশ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারবে। তবে কেউ শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করলে গ্রেফতার করা যাবে না।
এদিন কুণাল-চন্দ্রিমারা সাংবাদিক বৈঠক করে বলেন, এই নবান্ন অভিযান বেআইনি। কে ডাক দিয়েছে তা স্পষ্ট নয়। কোন রুট দিয়ে মিছিল যাবে তাও বলা হয়নি। কুণাল স্পষ্ট করে বলেন, এই অভিযানের উদ্দেশ্য হল সেদিন গন্ডগোল পাকিয়ে একটা ‘লাশ’ ফেলা।
পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, নবান্ন অভিযানের নেপথ্যে বিজেপির যে বড় ভূমিকা রয়েছে তা নিয়ে সন্দেহ নেই। তবে দেখার বিষয় হল, নিচুতলার বাম কর্মীদের কেউ তাতে সামিল হন কিনা। কারণ, সেই চেষ্টা অনবরত চলছে।
অবশ্য সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী থেকে শুরু করে মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়রা ধারাবাহিকভাবে এই বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছেন যে মঙ্গলবার নবান্ন অভিযানের ডাক তাঁরা দেননি। বরং সিপিএম এখন অনেক বেশি অগ্রাধিকার দিয়েছে জেলা ও মফস্বল শহরে ছোট ছোট প্রতিবাদ মিছিলের উপর। অন্তত বাহ্যত তারা মঙ্গলবারের নবান্ন অভিযান থেকে দূরে থাকছে।