দেশের সময় ,কলকাতা : রেশন দুর্নীতি মামলায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-কে ধমক দিল নগর দায়রা আদালত। তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুললেন বিচারক। জানালেন, যা নথিপ্রমাণ রয়েছে, তাতে এই মামলার শুনানি কত দূর গড়াতে পারে? সেই সঙ্গে, অভিযুক্তের অধিকারও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে মনে করিয়ে দিয়েছে আদালত। তদন্তকারীর পদ না দেখে সঠিক প্রমাণ দাখিল এবং স্বচ্ছতা রাখার পরামর্শ দিয়েছে আদালত। পাল্টা অভিযুক্ত বিশ্বজিৎ দাস আইনজীবীর মাধ্যমে দাবি করেছেন, তিনি দোষী হলে বাংলাদেশ থেকে দেশে ফিরতেন না। দুবাই পালিয়ে যেতেন।
মঙ্গলবার ইডির তদন্তের এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাকিবুরের আইনজীবী। সেই প্রসঙ্গ টেনেই বিশ্বজিতের মামলার শুনানিতে বিচারক ইডির উদ্দেশ্যে বলেন, ‘‘আপনি নিজেকে ডিফেন্স (অভিযুক্ত) ভাবুন। যা তথ্যপ্রমাণ রয়েছে, তাতে এই মামলা কত ক্ষণ ট্রায়ালে দাঁড়াতে পারবে?’’ বিচারক এই প্রশ্নও তোলেন যে, এই রেশন দুর্নীতি মামলায় বিশ্বজিতের ভূমিকা কী?
উল্লেখ্য ,নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে এর আগে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইকে ধমক দিয়েছিল নিম্ন আদালত।
ইডির আইনজীবী দাবি করেছেন, এনপিজি রাইস মিল থেকে রেশন সামগ্রী নয়ছয় হয়েছে। এ সম্পর্কে অনেকেই সাক্ষ্য দিয়েছেন। ইডি নিজের প্রয়োজন মতো গ্রেফতার করতে পারে। বিশ্বজিতের আইনজীবী শ্যামল ঘোষ এই প্রসঙ্গে দাবি করেন, গ্রেফতারির আগে বিশ্বজিৎকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁর মক্কেলকে। এর পরেই ইডির আইনজীবী দাবি করেন, কোটি কোটি টাকা বিশ্বজিতের মাধ্যমে পাচার হয়েছে। ‘মাধ্যম’ হিসাবে কাজ করতেন বিশ্বজিৎ। ওঁর সংস্থা তৈরিই হয়েছিল টাকা পাচারের জন্য।
বাংলাদেশ, দুবাইয়ে হুন্ডি, হাওয়ালার মাধ্যমে টাকা পাচার হয়েছে। ইডির দাবি, এই বিষয়ে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ রয়েছে তাদের হাতে। বিচারক প্রশ্ন করেন, ইডি কি প্রমাণ করতে পারবে, বিশ্বজিতের সংস্থা ‘ভুয়ো’? বিচারক এ-ও বলেন, ‘‘ওঁকে দোষী ভেবে যদি ১০-১৫ বছর ধরে ট্রায়াল চলে, তার পর কিছুই প্রমাণ না হয়, তা হলে ওই ১৫ বছরের জন্য কে ক্ষতিপূরণ দেবে?’’ ইডি জানায়, সন্দেহের ভিত্তিতেই তদন্ত শুরু হয়।
বিচারক বলেন, ‘‘শুধু সন্দেহ থাকলে হবে না, তদন্তকারী অফিসার হিসাবে ‘বিশ্বাসযোগ্য’ প্রমাণ জোগাড় করতে হবে।’’ এখানেই থামেননি তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘কী ভাবে তদন্ত করেন আপনারা! শুধু উচ্চপদস্থ তদন্তকারী অফিসার বললেই হবে না। সঠিক তথ্যপ্রমাণও জোগাড় করে দেখাতে হবে, স্বচ্ছতা রাখতে হবে। কারণ অভিযুক্তের অধিকারও মূল্যবান।’’
বিশ্বজিতের আইনজীবী দাবি করেছেন, “রেশন দুর্নীতি নিয়ে চারটি এফআইআর হয়েছিল। কিন্তু তাতে বিশ্বজিতের কথা নেই। এনপিজি রাইস মিলের সঙ্গে তিনি যুক্ত রয়েছেন, এমন কোনও নথিও নেই। ২০০০ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত শঙ্করের কর্মচারী ছিলেন বিশ্বজিৎ। তার পর নিজের ব্যবসা শুরু করেন। শঙ্কর, বাকিবুর বা এনপিজির সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই তাঁর। যাঁদের মাধ্যমে টাকা পাচার হয়েছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে, সেই রকম কোনও এক জন বলুন যে, তিনি বালুবাবুর বা বাকিবুরের টাকা নিয়ে লেনদেন করেছেন।”
আইনজীবীর আরও দাবি, জ্যোতিপ্রিয়ের কাছে কোনও দিন যাননি বিশ্বজিৎ। যদিও ইডি দাবি করে, তারা এর সপক্ষে প্রমাণ দিতে পারবে। বিশ্বজিৎ আইনজীবীর মাধ্যমে বলেন, ‘‘অন্যায় করলে দুবাই পালাতে পারতাম। ইডিকে সাহায্য করতে এক ফোনে বাংলাদেশ থেকে চলে এসেছি। বাংলাদেশ থেকে দুবাই চলে যেতে পারতাম।’’ ইডি যদিও দাবি করেছে, তাঁদের কেস ডায়েরিতে সমস্ত প্রমাণ রয়েছে। তার পরেই বিচারক বলেন, ‘‘ইডি কেমন তদন্ত করে দেখি!’’
প্রসঙ্গত ,মঙ্গলবার আদালতে জামিনের আবেদন করেছিলেন বিশ্বজিৎ।
উল্লেখ্য যে, রেশন দুর্নীতি মামলায় এর আগে গ্রেফতার হয়েছেন ব্যবসায়ী বাকিবুর রহমান। ইডি গ্রেফতার করেছে রাজ্যের বনমন্ত্রী বালুকে। তাঁর সূত্র ধরে গ্রেফতার করা হয় বনগাঁ পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান শঙ্করকে। এর পর বিশ্বজিৎকে গ্রেফতার করেছে ইডি।