দেশের সময়, কলকাতা: গালে কয়েকদিনের সাদা, পাকা দাড়ি, পরনে সাদা পাজাামা, পাঞ্জাবি। এদিন ইডির গাড়িতে ওঠার সময় তাঁকে বলতে শোনা যায়, “আমি মুক্ত। খুব শীঘ্রই ছাড়া পাবো, এটা জেনে রাখুন।”
বিজেপির বিরুদ্ধে ফের তাঁকে ফাঁসানোর অভিযোগ তুললেন রেশন বণ্টন দুর্নীতি মামলায় ইডির হাতে ধৃত বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।
গত ২৬ অক্টোবর গভীর রাতে গ্রেফতারের পর সিজিও কমপ্লেক্সে ঢোকার সময় বিজেপি এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনেছিলেন রেশন দুর্নীতির অভিযোগে ধৃত মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। আট দিনের ব্যবধানে ফের একই অভিযোগে সরব হলেন রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা বনমন্ত্রী।
স্বাস্থ্যপরীক্ষার জন্য শুক্রবার সকালে সিজিও কমপ্লেক্স থেকে হাসপাতালে যাওয়ার পথে সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের উদ্দেশে জ্যোতিপ্রিয় ওরফে বালুর দাবি, “আমি চক্রান্তের শিকার। বিজেপি আমায় ফাঁসিয়েছে।”
বিজেপির এই চক্রান্তের কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও জানেন বলে এদিন জানান জ্যোতিপ্রিয়।
মন্ত্রীর কথায়, “মমতাদি-অভিষেক সব জানে।” একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, “দলের সঙ্গে ছিলাম, আছি এবং থাকব।” দলও তাঁর পাশে আছে বলেও এদিন দাবি করেছেন জ্যোতিপ্রিয়।
গালে কয়েকদিনের বাসী সাদা, পাকা দাড়ি, পরনে সাদা পাজাামা, পাঞ্জাবি। আগের দিনের তুলনায় এদিন মন্ত্রীকে অনেকখানি ধাতস্থ দেখা গিয়েছে। ইডির গাড়িতে ওঠার সময় তাঁকে বলতে শোনা যায়, “আমি মুক্ত। খুব শীঘ্রই ছাড়া পাবো, এটা জেনে রাখুন।”
গত ২৬ অক্টোবর মন্ত্রী জ্যেতিপ্রিয় সহ তাঁর বর্তমান এবং প্রাক্তন আপ্ত সহায়কের বাড়ি সহ মোট ১২টি জায়গায় তল্লাশি চালিয়েছিল ইডি। দিনভর ম্যারাথন জেরার পর মধ্যরাতে মন্ত্রীকে গ্রেফতার করেন তদন্তকারীরা। কেন্দ্রীয় বাহিনীর ঘেরাটোপে সিজিও কমপ্লেক্সে ঢোকার সময় জ্যোতিপ্রিয় দাবি করেছিলেন, “গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার হলাম আমি। ভারতীয় জনতা পার্টি খুব ভাল কাজ করেছে। তাঁরা আমাকে শিকার করেছে!”
পরে আদালতে অসুস্থ হয়ে পড়েন জ্যোতিপ্রিয়। বাইপাসের বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে গত সোমবার রাতে জ্যোতিপ্রিয়কে হেফাজতে নেয় ইডি। তারপর থেকে মন্ত্রীকে দফায় দফায় জেরা করছেন তদন্তকারীরা। তবে এদিন তিনি যেভাবে ‘আমি মুক্ত, খুব শীঘ্রই ছাড়া পাবো’ বলেছেন, তা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
জ্যোতিপ্রিয়র প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার বারাসতের সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার বলেছিলেন, “ব্যক্তি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক কী করেছেন, তার জন্য দলের ভাবমূর্তি কেন নষ্ট হবে?”। কাকলির ওই মন্তব্যকে ঘিরে রাজনৈতিক মহলে শোরগোল তৈরি হয়েছিল। পরে হাবড়ার অনুষ্ঠানে কাকলি বলেন, “অভিযুক্ত আর অপরাধী এক নয়, দোষ প্রমাণ হওয়ার আগেই জ্যোতিপ্রিয়কে অপরাধী বানানোর চেষ্টা হচ্ছে।” তবে এদিন মুখ্যমন্ত্রী এবং অভিষেকের নামোল্লেখ করে দলও যে তাঁর পাশে আছে, জ্যোতিপ্রিয় সেটাই বোঝাতে চেয়েছেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
শুক্রবার জ্যোতিপ্রিয়কে প্রশ্ন করা হয়, দল কি তাঁর সঙ্গে আছে? জবাবে মন্ত্রী বলেন, “অবশ্যই আমার সঙ্গে আছে।” প্রসঙ্গত, বারাসতের তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার বৃহস্পতিবার দলের সঙ্গে জ্যোতিপ্রিয়ের ‘দূরত্ব’ বজায় রেখে বলেছিলেন যে, “ব্যক্তি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক কী করেছেন, তার জন্য দলের ভাবমূর্তি কেন নষ্ট হবে?” এই আবহেই জ্যোতিপ্রিয় বার্তা দিলেন যে, দল যেমন তাঁর সঙ্গে আছে, তেমনই তিনিও দলের সঙ্গে রয়েছেন। এই পাশে থাকার বার্তা দিতে জ্যোতিপ্রিয় জুড়ে দিলেন মমতা এবং অভিষেকের নামও। ঘটনাচক্রে, কাকলি যে জেলার সাংসদ, একদা সেই উত্তর ২৪ পরগনার তৃণমূল সভাপতি ছিলেন বালু।