দেশের সময়, ওয়েবডেস্কঃ খোলা বাজারে শুধু রেশনের গম বিক্রি করা হয়েছিল তাই নয়, ধান কেনাতেও বিস্তর বেনিয়ম হয়েছে বলে জানতে পেরেছে তদন্তকারী সংস্থা ইডি। শীঘ্রই এই বিষয়ে তাঁরা নতুন একটি মামলা দায়ের করতে চলেছেন বলে সূত্রের খবর।
রেশন দুর্নীতির তদন্তে নেমে ইডির সূত্র জানতে পেরেছে, সরকারি মূল্যে কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনাতেও বিস্তর বেনিয়মের অভিযোগে বেশ কয়েক বছর আগে কলকাতার নিউ মার্কেট থানায় দায়ের হয়েছিল একটি মামলা। খোদ খাদ্য দফতরের তরফেই দায়ের করা হয়েছিল ওই অভিযোগ। সেই সময় খাদ্যমন্ত্রী ছিলেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। পরে মামলার তদন্তভার যায় সিআইডির হাতে।
ইডি সূত্রের খবর, তদন্তের হাত বদল হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আটকে থাকে লাল সুতোর ফাঁসেই। নিউ মাকের্ট থানায় খাদ্য দফতরের দায়ের করা ওই ধান দুর্নীতির সূত্র ধরেই খাদ্য দুর্নীতির নয়া তদন্তে নামতে চলেছে ইডি। সম্প্রতি রেশন দুর্নীতির তদন্তে নেমে উত্তর ২৪ পরগনা এবং নদিয়ার একাধিক রাইস মিলে তল্লাশি অভিযান চালান তদন্তকারীরা। রেশনের গম দুর্নীতির তদন্তের সূত্র ধরে সামনে আসে ধান দুর্নীতির প্রসঙ্গও।
চাষিরা যাতে ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত না হন তাই সরাসরি চাষিদের কাছ থেকে সহায়ক মূল্যে ধান কেনার প্রক্রিয়া চালু হয়েছিল বাম আমল থেকেই। তদন্তকারীদের একটি সূত্রের দাবি, দালালদের মাধ্যমে কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে ধান কিনেছে মিল মালিকেরা। পরে কৃষকদের ভুয়ো নামের তালিকা তৈরি করে সমবায়ের মাধ্যমে মিল মালিকদের অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে টাকা।
ইডির দাবি, চালকলের মালিকের কাছ থেকে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ‘কমিশন’ বাবদ সম্পত্তি নিয়েছিলেন। সেই সম্পত্তি তিনি নিজের নামে না রেখে বাড়ির পরিচারকের নামে ‘দানপত্র’ হিসাবে লিখিয়ে নেন।
চালকলের মালিকের থেকে ‘কমিশন’ নিয়েছেন রেশন ‘দুর্নীতি’কাণ্ডে ধৃত রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ওরফে বালু, তেমনটাই দাবি করছে ইডি। তাদের দাবি, চালকলের মালিকের থেকে ‘কমিশন’ বাবদ সম্পত্তি নিয়েছিলেন বালু। সেই সম্পত্তি নিজের নামে না রেখে দানপত্র হিসাবে লিখিয়ে নেন নিজের বাড়ির পরিচারকের নামে। এর সপক্ষে তথ্যপ্রমাণ রয়েছে বলেও জানিয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থা।
ইডি সূত্রে খবর, ওই চালকলের মালিকের বয়ান তারা নথিভুক্ত করেছে। সম্পত্তি গ্রহণের যাবতীয় নথিপত্রও তাদের হাতে এসেছে। বালুর পরিচারকের নামে সম্পত্তি ‘দানপত্র’ করিয়ে নেওয়ার কাগজ পেয়েছে ইডি।
কেন্দ্রীয় সংস্থার দাবি, চালকলের মালিকের কাছ থেকে ‘কমিশন’ হিসাবে টাকা না নিয়ে সম্পত্তি নিয়েছিলেন বালু। সেই সম্পত্তি নিজের নামে রাখেননি। পরিচারকের নামে দানপত্র লিখিয়ে নেন ওই চালকলের মালিকের থেকেই।
এই বিষয়েই এবার তদন্তে নামতে চলেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
রেশন বণ্টনে ‘দুর্নীতি’ মামলায় তদন্তের স্বার্থে প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয়ের সল্টলেকের ফ্ল্যাটে ম্যারাথন তল্লাশি চালিয়েছিল কেন্দ্রীয় সংস্থা। সেখান থেকে গভীর রাতে মন্ত্রীকে নিয়ে তারা ইডি দফতরে যায়। সকালে গ্রেফতার করা হয় জ্যোতিপ্রিয়কে। আদালতে মন্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়লে বেশ কিছু দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরে ইডি হেফাজতে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে।
সোমবার বালুকে আরও ৭ দিন ইডি হেফাজতে থাকার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। আদালতের বাইরে মন্ত্রী একাধিক বার সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খুলেছেন। প্রতি বারই দাবি করেছেন তিনি নির্দোষ। ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন। সোমবারও আদালত চত্বরে ইডির ঘেরাটোপ থেকে সংবাদমাধ্যমের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘আমি মুক্ত। ইডিও বুঝতে পেরেছে আমি মুক্ত।’’ আদালতে গিয়ে অবশ্য বিচারকের সামনে ‘নীরব’ই থেকেছেন বালু।
অন্য দিকে, জ্যোতিপ্রিয়ের পাশাপাশি, তাঁর প্রাক্তন আপ্তসহায়ক-সহ ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদেরও বার বার তলব করছে ইডি।
এদিকে,সোমবার মন্ত্রীর প্রাক্তন আপ্তসহায়ক অভিজিৎ দাস জানিয়েছেন, তাঁর মা এবং স্ত্রীকে একাধিক সংস্থায় ডিরেক্টর করা হয়েছিল। মন্ত্রীর নির্দেশেই সেই কাজ করা হয়েছিল। পরে তিনি আপ্তসহায়কের পদ থেকে ইস্তফা দিলে মা এবং স্ত্রীকেও সরিয়ে আনেন।