
দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ দু’ দশক পর বীরভূমের আরও এক ভয়াবহ ঘটনায় তোলপাড় রাজ্য-রাজনীতি।নানুরের পর এবার রামপুরহাট।

তৃণমূল উপপ্রধান খুনের পর রামপুরহাটের বকটুই গ্রামে পরপর বাড়িতে আগুন লেগে ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনার পরেই টুইট করে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় দুঃখপ্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়েও সরকারের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন তিনি। এরপরই রাজ্যপালের মন্তব্য ঘিরে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করে চিঠি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷

মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, রামপুরহাটকাণ্ডে ইতিমধ্যেই সিট গঠন হয়েছে। জেলাশাসক, পুলিশ গোটা বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছেন। বেশ কয়েকজন মন্ত্রী ঘটনাস্থলে দিনের দিন পৌঁছে গেছেন। তদন্ত শুরুর পর এখনও পর্যন্ত দশজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্তের পর দোষীদের কড়া শাস্তির কথা জানিয়ে পুলিশের ডিজি-কে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
এখানেই থামেননি মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যপালের বক্তব্যকে ঘিরে মমতা চিঠিতে লেখেন, ‘রামপুরহাটের ঘটনা সম্পর্কে আপনার মন্তব্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। নিরপেক্ষ তদন্তেও অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে আপনার মন্তব্য। সাংবিধানিক পদে থেকে এই ধরনের মন্তব্য অসাংবিধানিক। বাংলাতে কিছু ঘটলেই আপনি আইনশৃঙ্খলা এবং সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। অথচ বিজেপি শাসিত রাজ্য-সহ দেশের অন্যান্য ঘটনায় আপনি নীরব।
আপনার বিবৃতি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’ প্রসঙ্গত, রামপুরহাটে ভয়াবহ ঘটনার পর মঙ্গলবার টুইট করে রাজ্যপাল লেখেন, ‘এমন ভয়ঙ্কর হিংসার ঘটনা, অগ্নিসংযোগ, আবারও প্রমাণ করল রাজ্যে সন্ত্রাসের সংস্কৃতি চলছে। ইতিমধ্যেই ৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন। শোকগ্রস্ত পরিবারগুলিকে সমবেদনা।’ এ বিষয়ে মুখ্যসচিবের কাছে রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছেন ধনকড়।
মুখ্যমন্ত্রী চিঠিতে আরও লিখেছেন, বীরভূমে তৃণমূলেরও এক জন কর্মীকে খুন করা হয়েছে। তিনি স্থানীয় পঞ্চায়েতের উপ প্রধান ছিলেন। তাঁকে কারা হত্যা করেছে তা নিয়েও তদন্ত চলছে। এর পরই মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, রাজ্যকে বদনাম করার জন্য বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না। সবই তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

বস্তুত রাজ্যপালকে সন্ধেয় মুখ্যমন্ত্রী এ চিঠি পাঠানোর আগে বীরভূমের ঘটনা নিয়ে বাংলার রাজনীতি অনেকটাই সরগরম হয়ে উঠেছে। রাজ্য বিজেপি নেতারা এ ব্যাপারে পুলিশ মন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছেন।

বিজেপি-কংগ্রেসের দাবি বাংলায় রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হোক বা নিদেন পক্ষে সংবিধানের ৩৫৫ ধারা প্রয়োগ করে আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব কেন্দ্র নিয়ে নিক। কারণ, রাজ্যে আইনশৃঙ্খলার ব্যবস্থাই ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে।

অনেকের মতে, এই সমষ্টিগত আক্রমণকেই বৃহত্তর ষড়যন্ত্র বলে বোঝাতে চেয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যপালকে পাঠানো চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী ক্ষোভের সঙ্গে এও বলেছেন যে, অন্য কোনও রাজ্য বিশেষ করে বিজেপি শাসিত রাজ্যে কোনও ঘটনা হলে রাজ্যপালকে তো তা নিয়ে টুঁ শব্দও করতে দেখা যায় না। আর বাংলায় বিক্ষিপ্ত ভাবে কোনও ঘটনা ঘটলেই তিনি সমালোচনা করতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তাঁর এহেন কার্যকলাপে রাজনৈতিক অভিসন্ধি রয়েছে বলেও চিঠিতে ইঙ্গিত করতে চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
