Ram Navami West Bengal রামনবমী পালন ঘিরে ঊর্ধ্বমুখী রাজ্য রাজনীতির পারদ! খোলা রয়েছে নবান্নের কন্ট্রোল রুম

0
21
হীয়া রায় , দেশের সময়

রামনবমীর নজরদারিতে ড্রোন-সিসিটিভি, আইন ভাঙলে কড়া পদক্ষেপ, সতর্ক বার্তা পুলিশের

আজ রামনবমী। তার আগেই রাজ্যজুড়ে বাড়ানো হল নিরাপত্তা। রামনবমীকে কেন্দ্র করে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে উত্তর এবং দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করল রাজ্য প্রশাসন।শুধুমাত্র কলকাতায় নিরাপত্তার জন্যই প্রায় ৬ হাজার পুলিশ কর্মীকে কাজে লাগাবে লালবাজার। রামনবমীর শোভাযাত্রাকে কী কী নিয়ম মেনে চলতে হবে, এ বিষয়ে বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপার এবং কমিশনাররা আয়োজকদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন। ওই সমন্বয় বৈঠকে বলা হয়েছে, হাইকোর্টের নির্দেশিকা মেনে মিছিল করতে হবে।

এদিকে শনিবার থেকেই রামনবমী উদযাপনের ছোঁয়া লেগে গিয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায়।

ইতিমধ্যেই কোচবিহার, চন্দননগর, হাওড়া, মালদা, মুর্শিদাবাদ, ইসলামপুর এবং শিলিগুড়ির বিভিন্ন এলাকাকে উত্তেজনাপ্রবণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই সব জায়গার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ২৯ জন আইপিএসকে। রামনবমীর মিছিলগুলিতে নজরদারি করার জন্য রবিবারও নবান্ন খোলা থাকছে। ডিজি কন্ট্রোল রুম থেকে বিভিন্ন জেলায় নজর রাখা হবে। পুরো বিষয়টির দায়িত্বে থাকবেন এডিজি( আইন–শৃঙ্খলা) জাভেদ শামিম সহ পুলিশকর্তারা।

সূত্রের খবর, কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে ৮০টি মিছিল হওয়ার কথা রয়েছে। ওই সব মিছিলের শুরু এবং শেষে পুলিশি প্রহরা থাকবে। ড্রোন এবং বহুতল থেকেও নজরদারি চলবে। পাশাপাশি লালবাজারের কন্ট্রোল রুম থেকেও মনিটর করবেন পুলিশকর্তারা। অশান্তি এড়াতে চেষ্টার কোনও রকম খামতি রাখতে চাইছে না লালবাজার।

শনিবার শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখে সিপি মনোজ ভার্মা বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে রামনবমীর উৎসব পালন করুন। আইন না মেনে মিছিল করলে পুলিশ কড়া ব্যবস্থা নেবে। সিসিটিভি এবং ড্রোনেও নজরদারি চলবে। কোথাও কোনও প্ররোচনায় পা দেবেন না। সকলে শান্তিপূর্ণভাবে রামনবমী পালন করুন।’

কলকাতাসহ রাজ্যের নানা জায়গায় ইতিমধ্যেই রুটমার্চ করেছে পুলিশ। স্পষ্ট বার্তা—অস্ত্র নিয়ে মিছিল বরদাস্ত করা হবে না। শুভেন্দু অধিকারীর প্রতিক্রিয়া, “এভাবে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই, যা পারেন করুন।” তাঁর এই মন্তব্যের জবাবে তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, “ওর গুন্ডামি বন্ধ করতেই তো পুলিশকে নামতে হচ্ছে।”
রামনবমীর শোভাযাত্রাকে ঘিরে প্রস্তুতি নিচ্ছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদও। তাদের তরফে জানানো হয়েছে, বজরং দলের সদস্যরা প্রত্যেকটি মিছিলে উপস্থিত থাকবেন। কোনও জায়গায় অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হলে তা রুখতে ‘সুরক্ষা বাহিনী’ তৈরি রেখেছে সংগঠনটি। প্রতিটি মিছিলে অন্তত ৫০ জন সদস্য মোতায়েন করা হবে। হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের এই ‘সুরক্ষা বাহিনী’র ঘোষণাকে কটাক্ষ করেছে তৃণমূল।

সেই সূত্রেই পরস্পরকে দায়িত্ব মনে করিয়ে দিচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপি। অন্য দিকে, তাদের এই ভূমিকাকে ভোটের লক্ষ্যে ‘প্রতিযোগিতামূলক সাম্প্রদায়িক’ রাজনীতি বলেই উল্লেখ করছে সিপিএম, কংগ্রেস। রামনবমী উদযাপনে আজ, রবিবার শান্তিরক্ষাই পরীক্ষা তৃণমূল ও বিজেপির।

গত কয়েক দিন ধরেই রামনবমী ঘিরে ঊর্ধ্বমুখী রাজ্য রাজনীতির পারদ। রাজ্য প্রশাসনকে তা-ই নিয়ে এ দিনও নিশানা করেছে বিরোধীরা। রানাঘাটে একটি কর্মসূচিতে গিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, ‘‘কেন এ নিয়ে আশঙ্কা থাকবে? কারণ, ২০২৩, ২০২৪ সাল থেকেই অভিজ্ঞতা ভাল নয়। বেশ কয়েকটি জায়গায় কয়েকটা ঘটনা ঘটেছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘তৃণমূলের গুন্ডা আর পুলিশ বাড়িতে থাকলে রামনবমী শান্তিপূর্ণ হবে! এই তো কয়েক দিন আগে ইদ পালিত হয়েছে। কোথাও কোনও অশান্তি হয়নি। কারণ আমরা পরধর্মসহিষ্ণু।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘কেন রামনবমী উদযাপনের জন্য ২১ দফা নির্দেশিকা দেওয়া হবে?’’ শুভেন্দুর আরও দাবি, ‘‘এই রকম পরিবেশ ছিল উত্তরপ্রদেশে। কিন্তু উত্তরপ্রদেশে বদলেছে। এখানেও বদল হবে।’’ সেই সঙ্গেই রামনবমীর মিছিলে হিন্দুদের শক্তি দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন শুভেন্দু।

বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের কথায়, ‘‘রামনবমী উপলক্ষে লক্ষ হিন্দু রাস্তায় নামবেন। শান্তিপূর্ণ ভাবে দিনটি পালন করুন।’’ আজই নন্দীগ্রামে একটি রামমন্দিরের শিলান্যাস করার কথা রয়েছে শুভেন্দুর।

নাম না করে পাল্টা বিজেপির দিকেই আঙুল তুলেছে তৃণমূল। দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের বক্তব্য, ‘‘এত পুজো, ইদ, অন্য ধর্মের এত এত অনুষ্ঠান, এ রাজ্যে সব শান্তিপূর্ণ ভাবে হয়। কিন্তু এই রামনবমী নিয়ে এত উত্তেজনা তৈরি করা হয় কেন? কারণ, বিজেপি এই কর্মসূচিকে সামনে রেখে গত কয়েক বছর ধরে রাজনীতি করতে চাইছে।’’ দু’একটি জায়গায় অস্ত্র হাতে মিছিলের মহড়া নিয়ে বিজেপি নেতাদের দিকে আঙুল তুলে তিনি বলেন, ‘‘আদালতের নির্দেশ অমান্য করে যাঁরা প্ররোচনা ছড়াতে চান, মানুষ তাঁদের দেখছেন।’’ সুকান্তও পুলিশের উদ্দেশে বলে রেখেছেন, ‘‘কড়াকড়ির নাম করে বিঘ্ন ঘটানো বা আটকানোর চেষ্টা করবেন না।’’

সরাসরি দলীয় কোনও কর্মসূচি না-থাকলেও রাজ্যের নানা জায়গায় ধর্মীয় বা সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে রামনবমী উদযাপনে গত কয়েক বছর ধরেই শামিল হচ্ছেন তৃণমূ্লের নেতা-কর্মীদের একাংশ। সূত্রের খবর, এ বারও সেই দৃশ্য দেখা যেতে পারে।

রানাঘাটে শুভেন্দুর এ দিনের কর্মসূচির আগে কালো পতাকা লাগানো ও বিজেপির পোস্টার ছেঁড়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তৃণমূল অবশ্য সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। মুখ্যমন্ত্রীর ‘মৃত্যুকুম্ভ’ মন্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে শুভেন্দু বলেছেন, ‘‘হিন্দুদের উপরে অত্যাচারের প্রতিবাদ করতে পারব না! এ সব আগে উত্তরপ্রদেশে হতো। এখন হয় না। এখানেও পরিবর্তন হবে।’’

রাজ্যের সম্প্রীতির ঐতিহ্য মনে করিয়ে দিয়ে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর আবেদন, ‘‘নিজের বিশ্বাস মতো যে যাঁর ধর্ম পালন করবেন। এ রাজ্যে তা শান্তিপূর্ণ ভাবেই হয়েছে। আশা করব, সকলেই সেই দায়িত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন।’’ পূর্বঘোষিত কর্মসূচি মতো এসএফআই রাজ্যের ৩০০ জায়গায় শান্তিরক্ষায় শিবির করছে। শান্তি বজায় রেখে দিনটি উদযাপনের আহ্বান জানিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বও।

Previous articleChaiti Ghoshalপ্রথম বাংলা নাটকের সফল নির্দেশনায় চৈতি ঘোষাল : দেখুন ভিডিও
Next articleShuvendu attends Ram Mandir Bhoomi Pujanরাত দশটার মধ্যে বাংলা দখলের ডাক শুভেন্দুর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here