দেশের সময়: ন’বছরের এক দলিত ছাত্রের হত্যার ঘটনায় উত্তাল রাজস্থান। জালোরের একটি প্রাইভেট স্কুলের পড়ুয়া ছিল ওই ছাত্র। অভিযোগ, সে ভুল করে একটি পাত্র থেকে জল খেয়ে ফেলেছিল। ওই পাত্রের জল নাকি উচ্চবর্ণের পড়ুয়াদের জন্য রাখা ছিল। সেখান থেকে কেন সে জল খেল, এই অভিযোগে তাকে বেধড়ক মারধর করে স্কুলের এক শিক্ষক।
ছাত্রটির কানে ও চোখে গুরুতর আঘাত লাগে। হাসপাতালে ভর্তি করতে হয় তাকে। বেশ কিছুদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করার পর হার মানে সে। গুজরাতের একটি হাসপাতালে দিন কয়েক আগে মৃত্যু হয় তার। এর পরই দলিত সম্প্রদায় ব্যাপক ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। আন্দোলনে নেমেছে তারা। এদিকে এই মৃত্যু ঘিরে ঘরে বাইরে চাপে পড়েছে রাজস্থানের কংগ্রেস সরকার।
একদিকে বিজেপির আক্রমণ, অন্যদিকে ঘটনার প্রতিবাদে কংগ্রেস শিবিরের অন্দরেই শুরু হয়েছে প্রবল বিদ্রোহ। ইতিমধ্যেই বারান জেলার আতারুর কংগ্রেস বিধায়ক পানাচন্দ মেঘওয়াল দল থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটের কাছে ইস্তফাপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন তিনি। এবার তাঁর পথ অনুসরণ করলেন রাজস্থানের বারানের পুরসভার ১২ জন কংগ্রেস কাউন্সিলর। তাঁরাও ওই দলিত ছাত্রের হত্যার ঘটনার প্রতিবাদে দল ছাড়লেন।
বিদ্রোহী কাউন্সিলররা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তাঁদের ইস্তফাপত্র পাঠিয়েছেন। শুধু তাই নয়, ময়দানে নেমেছেন রাজস্থানের প্রাক্তন উপ মুখ্যমন্ত্রী তথা কংগ্রেস শচীন পাইলট। মঙ্গলবারই তিনি মৃত ওই ছাত্রের বাড়িতে গিয়েছেন। বলেছেন, দলিত সম্প্রদায়ের সঙ্গে যে আমরা আছি, সেই বিশ্বাস ফেরানোর জন্য আমাদের কড়া বার্তা দিতে হবে। তাঁর এই ভূমিকা অশোক গেহলট সরকারের চাপ আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। তড়িঘড়ি কয়েকজন সিনিয়র মন্ত্রী ও রাজস্থানের কংগ্রেস সভাপতি গোবিন্দ সিং দোতাসরাকে মৃত ওই ছাত্রের বাড়িতে পাঠান মুখ্যমন্ত্রী। তাঁরাও গিয়েছিলেন মঙ্গলবার।
ওই টিমে ছিলেন রাজ্যের মহিলা ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রী মমতা ভুপেশ, পূর্তমন্ত্রী ভজন লাল জাতভ ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলা মন্ত্রী গোবিন্দ রাম মেঘওয়াল। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি মৃত দলিত ছাত্রের পরিবারকে ২০ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য করার কথা ঘোষণা করেছেন। বলেছেন, দলের তহবিল থেকে দেওয়া হবে ওই টাকা। পাশাপাশি দ্রুত বিচার পাওয়ারও আশ্বাস দিয়েছেন পরিবারের সদস্যদের।
বারানের পুরসভার ২৫ জন কংগ্রেস কাউন্সিলরের মধ্যে ১২ জন ইস্তফা দিয়ে দেওয়ায় রাজনৈতিক সঙ্কট তৈরির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর যোগেন্দ্র মেহতা বলেছেন, দলিত ছাত্র হত্যার ঘটনায় সরকারের যেভাবে দ্রুত পদক্ষেপ করা উচিত ছিল, তা করতে ব্যর্থ হয়েছে। এ কারণেই তাঁরা তাঁদের ইস্তফাপত্র মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন।
যেসমস্ত কংগ্রেস কাউন্সিলর ইস্তফা দিয়েছেন তাঁরা হলেন, হরিতাশভ সাকসেনা, রাজারাম মীনা, রেখা মীনা, লীলাধর নগর, হরিরাজ এরওয়াল, পীয়ূষ সোনি, ঊর্বশী মেঘওয়াল, যশবন্ত যাদব, আনওয়ার আলি, জয়তী যাদব ও মায়াঙ্ক মাথোডিয়া। আজ বুধবার তাঁরা তাঁদের পদত্যাগপত্র ডিভিশনাল কমিশনারের কাছেও পাঠিয়ে দেবেন বলে জানিয়েছেন। কোটার ইতাওয়া পুরসভার মনোনীত কাউন্সিলর সুরেশ মহাওয়ারও এই ইস্যুতে পদত্যাগ করেছেন।