দেশের সময় কলকাতা :৮ ঘণ্টার মিছিল দেখল
কলকাতা তথা রাজ্য! আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের নির্যাতিতার বাড়ির এলাকা থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত— ১৯ কিলোমিটারের বেশি পথ। শনিবার দুপুর থেকে এই দীর্ঘ পথ সাধারণ মানুষের ‘দখলে’। জুনিয়র ডাক্তারদের ডাকে সাড়া দিয়ে বহু সাধারণ মানুষ পা মেলালেন ‘ন্যায়বিচার যাত্রা’য়। মিছিল থেকে উঠল নির্যাতিতার জন্য বিচারের দাবি। মুখে স্লোগান, হাতে পোস্টার-ব্যানার নিয়ে পথে নামেন চিকিৎসক থেকে সাধারণ মানুষ। অনেক বিশিষ্ট জনও পা মেলালেন শনিবারের মিছিলে। রাত সওয়া ১০টা নাগাদ সেই মিছিল পৌঁছয় ধর্মতলায়। দেখুন ভিডিও
এই ‘ন্যায়বিচার যাত্রা’য় প্রতিবাদ জুনিয়র ডাক্তাররা থেকে শুরু করে পা মিলিয়েছেন আমজনতাও। মিছিল শুরুর আগে জমায়েতে যোগ দিয়েছিল নির্যাতিতার পরিবার। সঙ্গে ছিলেন তাঁর বাবা-মাও।
শনিবার দুপুরেই ধর্মতলার অনশন মঞ্চে পৌঁছে যান মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ ও স্বরাষ্ট্র সচিব নন্দিনী চক্রবর্তী। সেখানে গিয়ে আলোচনার পাশাপাশি জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে ফোনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথাও বলিয়েছেন। ধর্মতলার অনশন মঞ্চে যখন এমন ছবি, ঠিক সে সময় সোদপুর থেকে ধর্মতলার উদ্দেশে রওনা দেয় এই ‘ন্যায়বিচার যাত্রা’।
সাধারণ মানুষের যাতে অসুবিধা না হয় সেই জন্য টানা মিছিল করা হয়। ‘রিলে’ পদ্ধতিতে মিছিল এগোয়। সোদপুর থেকে ধর্মতলা অবধি প্রায় ১৯ কিলোমিটার রাস্তা। এত বড় ব্যবধান হলেও মানুষের মধ্যে কোনও ক্লান্তি ছিল না। যে নৃশংস ঘটনা রাজ্যের বুকে ঘটেছে তার বিচার চেয়ে পথে হেঁটেছেন মানুষ। মিছিলে জুনিয়র ডাক্তাররাও যেমন ছিলেন, তাদের যোগ্যসঙ্গত দিয়েছেন সাধারণ মানুষ।
বিটি রোড ধরে মিছিল এগিয়ে তা ডানলপ, শ্যামবাজার, কলেজ স্কোয়ার, কলেজ স্ট্রিট, সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ ধরে পৌঁছয় ধর্মতলার অনশন মঞ্চে। সেখানেই গত ৫ অক্টোবর থেকে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। ১০ দফা দাবির সমর্থনে বৃহস্পতিবারই ‘গণস্বাক্ষর সংগ্রহ’ করেছিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। এরপর ডাক দেওয়া হয় ‘ন্যায়বিচার যাত্রার’।
এদিন সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজের কয়েক জন জুনিয়র ডাক্তারকে দেখা গেল প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মিছিলে থাকতে। শুধু তাঁরা নন, আরও কয়েক জনও একই ভাবে দীর্ঘ ১৯ কিলোমিটারের বেশি পথ হেঁটেছেন। সকলের মুখে একটাই কথা, ‘বিচার চাই’।
ধর্মতলায় অনশনকারীদের হাতে ‘ন্যায়ের মূর্তি’ তুলে দেন মিছিলে হাঁটা মানুষ। তাঁদের ধন্যবাদ জানান আন্দোলনকারীরা। অনশনমঞ্চ থেকেই রবিবারের কর্মসূচির কথা আরও এক বার মনে করিয়ে দেওয়া হল। রবিবার বিকেল ৪টের সময় ধর্মতলায় ‘মহাসমাবেশে’র ডাক দেওয়া হয়েছে।
ঘটনাচক্রে, শনিবার ‘ন্যায়বিচার যাত্রা’ শুরু হয় ধর্মতলার উদ্দেশে, তখন রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, স্বরাষ্ট্রসচিব নন্দিনী চক্রবর্তী এবং কলকাতা পুলিশের ডিসি (সেন্ট্রাল) ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় পৌঁছে যান অনশনমঞ্চে। অনশনকারী এবং অন্য জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে ঘণ্টাখানেক আলোচনা করেন তাঁরা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ফোনে কথাও হয় আন্দোলনকারীদের।
অনশন তুলে নিয়ে কাজে ফেরার আহ্বান জানান তিনি। সন্ধ্যার পর মুখ্যসচিব জুনিয়র ডাক্তারদের চিঠি দিয়ে সোমবার বৈঠকে বসার কথা বলেন। তবে বৈঠকে বসার আগে অনশন তোলার ‘শর্ত’ও দেওয়া হয় নবান্নের তরফে।