দেশের সময়: আরজি কর কাণ্ডের নাম না করে মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধ নিয়ে কড়া বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রবিবার মহারাষ্ট্রের জলগাঁওতে ‘লাখপতি দিদি’ প্রকল্পের একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। মঞ্চ থেকে মহিলাদের বিরুদ্ধে হওয়া অন্যায় নিয়ে তীব্র নিন্দা করেন প্রধানমন্ত্রী।
মোদী বলেন, “মহিলাদের নিরাপত্তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।” তার পরেই রাজ্য সরকারগুলির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর বার্তা, “মহিলাদের উপর অত্যাচার মেনে নেওয়া যায় না।” মোদী নির্দিষ্ট কোনও রাজ্য বা ঘটনার উল্লেখ না করলেও, আরজি কর-কাণ্ডের আবহে প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্যকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
এদিন নরেন্দ্র মোদী বলেন, ‘মহিলাদের বিরুদ্ধে কোনও পাপ কাজ সহ্য করব না। অপরাধীদের কঠিন সাজা নিশ্চিত করব। কাউকে রেয়াত করা হবে না। এই ধরণের অপরাধের কোনও ক্ষমা হয় না।’ তাঁর সংযোজন, ‘মহিলাদের নিরাপত্তা আমাদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রতিটি রাজ্যের সরকারকে আবার বলছি, কোনওভাবেই যাতে মহিলাদের উপর হওয়া অন্যায়-অবিচার ক্ষমা না করা হয়। কালপ্রিট যেই হোক না কেন, রেয়াত করা হবে না কাউকেই।’ লাখপতি দিদি অনুষ্ঠানে তিনি সকলের উদ্দেশে বলেন, ‘আগে অনেক অভিযোগ উঠত, সঠিক সময় মহিলাদের বিরুদ্ধে অন্যায়-অপরাধের FIR দায়ের হতো না। শুনানি হতো না, মামলার দিন পিছিয়ে যেত। ভারতীয় ন্যায় সংহিতায় সেই সমস্ত বিষয়গুলি সংশোধন করা হয়েছে। মহিলা এবং শিশুদের উপর হওয়া অত্যাচার নিয়ে একটি গোটা চ্যাপ্টার রয়েছে এই আইনে। পুলিশ স্টেশন পর্যন্ত যেতে না পারলে অনলাইনেই e-FIR দায়ের করার সুযোগ রয়েছে মহিলাদের জন্য।’
কলকাতার আরজি কর হাসপাতালে তরুণী শিক্ষানবিশ চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা দেশকে। পশ্চিমবঙ্গ তো বটেই, দেশের প্রতিটি প্রান্তের মানুষ নিহতের ন্যায়বিচারের দাবিতে পথে নেমেছে। অপরাধীর কঠোরতম শাস্তির দাবিতে সোচ্চার সকলে। মেয়ের ন্যায়বিচারের দাবিতে অপেক্ষায় রয়েছেন নিহত চিকিৎসকের বাবা-মা।
ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে গ্রেপ্তার করেছে কলকাতা পুলিশ। বর্তমানে কলকাতা হাইকোর্টের রায়ে এই কাণ্ডের তদন্তভার CBI-এর উপর। ধৃত সঞ্জয় রায়ের পাশাপাশি আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকেও একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদ করছে কেন্দ্রীয় সংস্থ। রবিবার তাঁর বাড়িতেও তল্লাশি চলছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অপরাধীর ফাঁসির দাবিতে পথে নেমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে তিনি চিঠি লিখে ধর্ষণের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণোয়নের দাবি জানিয়েছেন। একই দাবিতে সরব হয়েছেন তৃণমূলে সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আরজি কর কাণ্ডে ধৃত সিভিক ভলেন্টিয়ার সঞ্জয় রায়ের পলিগ্রাফ টেস্ট শুরু হয়েছে। সে ছাড়া আরও কয়েক জনের টেস্ট করা হচ্ছে রবিবার। সঞ্জয় রায়ের পলিগ্রাফ টেস্ট করার অনুমতি অনেক আগে পেয়েছিল সিবিআই। কিন্তু তা না করায় তাঁদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। তবে শনিবার এই টেস্ট করা নিয়ে তৎপরতা চোখে পড়েছিল।
শনিবারই প্রেসিডেন্সি জেলে গিয়েছিল সিবিআইয়ের একটি দল। কোন জায়গায় সঞ্জয়ের এই পরীক্ষা করা হবে, পরীক্ষার জন্য কী কী সরঞ্জামের প্রয়োজন ইত্যাদি বিষয় খতিয়ে দেখে তাঁরা। কথা হয় জেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও। তারপর রবিবার সেই পলিগ্রাফ টেস্ট শুরু হল। এদিকে সিজিও কমপ্লেক্সে সিবিআই দফতরে আরও কয়েক জনের পলিগ্রাফ পরীক্ষা চলছে বলে খবর।
কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে এই মামলায় সিবিআই তদন্ত শুরু করার পর একাধিকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তাঁদের অনেকের বয়ানে অসঙ্গতি আছে বলে খবর। সেই প্রেক্ষিতেই সঞ্জয় রায় ছাড়াও আরও কিছুজনের পলিগ্রাফ টেস্ট করার আবেদন তাঁরা জানিয়েছিল শিয়ালদহ কোর্টে। সেই আর্জি মঞ্জুর হয়।
আরজি করের আরও চার পড়ুয়া-চিকিৎসকের পলিগ্রাফ করতে চেয়েছে সিবিআই। সূত্রের খবর, দু’জন প্রথম বর্ষের পিজিটি ডাক্তারের পলিগ্রাফ পরীক্ষা করা হবে, যাঁদের আঙুলের ছাপ ওই সেমিনার রুমে পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয়, ওই ঘটনার রাতে তাঁরা দু’জনেই নিহত সেই তরুণীর সঙ্গে ডিউটিতে ছিলেন এবং ওই তরুণী সেমিনার রুমে বিশ্রাম নেওয়ার আগে একসঙ্গে রাতের খাবারও খেয়েছিলেন।
এছাড়াও একজন হাউসস্টাফের পলিগ্রাফ পরীক্ষা করা হবে, যাঁকে ঘটনার দিন দোতলা থেকে চারতলায় (সেমিনার রুম অর্থাৎ ক্রাইম সিন এই তলাতেই অবস্থিত) যেতে দেখা গেছে সিসিটিভি ফুটেজে। এই তালিকায় রয়েছেন একজন ইন্টার্ন চিকিৎসকও, যিনি চারতলাতেই ছিলেন এবং রাতে বিশ্রাম করতে যাওয়ার আগে নিহত ওই তরুণীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন।