দেশের সময় ওযেবডেস্কঃ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাতে উদ্বোধন হল ৩৪১ কিলোমিটার দীর্ঘ পূর্বাঞ্চল এক্সপ্রেসওয়ের । এই এক্সপ্রেসওয়ের মাধ্যমে যুক্ত হবে বারাণসী, অযোধ্যা, গোরখপুর এবং এলাহাবাদের মতো শহর। ৩৪০.৮ কিলোমিটার লম্বা এই এক্সপ্রেসওয়ে শুরু হবে লখনউ থেকে এবং এটি শেষ হবে গাজিপুরে। এই এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি করতে খরচ হয়েছে প্রায় ২৩ কোটি টাকা। এই পূর্বাঞ্চল এক্সপ্রেসওয়ে তীর্থযাত্রীদের খুবই সাহায্য করবে। এক্সপ্রেসওয়েতে নামতে পারবে যুদ্ধবিমানও৷ এ দিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও সেনাবাহিনীর হারকিউলিস বিমানে চড়েই পূর্বাঞ্চল এক্সপ্রেসওয়ের উপরে নামেন৷
#WATCH | Jaguar aircraft carries out a touch and go landing at the 3.2-km long emergency landing field on Purvanchal Expressway in Karwal Kheri, Sultanpur today
— ANI UP (@ANINewsUP) November 16, 2021
(Source: DD) pic.twitter.com/hvY075RrJK
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভায় প্রচুর ভিড়, জনসমাগম দেখাতে হবে, তাই সরকারি প্রশাসনযন্ত্র কাজে লাগানোর অভিযোগ বিরোধীদের । উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচনের কয়েক মাস বাকি থাকতে মোদীর আজ পূর্বাঞ্চল এক্সপ্রেসওয়ের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের কর্মসূচি ছিল। ৩৪০ কিমি দীর্ঘ হাইওয়ের সূচনা করে উন্নয়নের ছবি তুলে ধরে ভোটের প্রচারই করলেন যোগী-মোদী। কিন্তু বিরোধীদের দাবি, সভায় বাস ভরিয়ে লোক আনা হয়েছে। প্রায় ২ হাজার বাস তুলে নেওয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর সভায় লোক নিয়ে আসার জন্য। বারাণসী, ফৈজাবাদ থেকে সরকারি বাস তুলে নেওয়া হয়েছে। বাসস্ট্যান্ডে পোস্টার সেঁটে জানিয়ে দেওয়া হয়, বাস নেই। সুলতানপুরের বাসস্ট্যান্ড ফাঁকা। হাতে গোনা নামমাত্র কিছু বাস নেমেছে রাস্তায়। ফলে রাস্তায় বেরিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। কাতারে কাতারে লোক রাস্তায় ভিড় করেন বাস না পেয়ে। কোনও বাসের দেখা পেলেই তার দিকে ছুটে যান নিত্যযাত্রীরা। হুড়োহুড়ি, ধাক্কাধাক্কি হয়। বাস স্টেশনের কর্তাব্যক্তিরাও জানান, এক্সপ্রেসওয়ের অনুষ্ঠানের জন্যই বাস তুলে নেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে আজ দুপুরে হাইওয়েতে নামে এয়ার ফোর্সের সি-১৩০জে সুপার হারকিউলিস বিমান। মুখ্যমন্ত্রী যোগীর মতে, এই জাতীয় সড়ক হয়ে উঠবে রাজ্যের অর্থনীতির মেরুদণ্ড।
তবে বিরোধী সমাজবাদী পার্টি সভাপতি অখিলেশ যাদবের অভিযোগ, পূর্বাঞ্চল এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প তাঁর আমলের। ভোটের আগে তার কৃতিত্ব নিচ্ছে বিজেপি। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সকালে ট্যুইট করেন, রিবন এল লখনউ থেকে, কাঁচি এল দিল্লি থেকে যাতে সমাজবাদী পার্টির কাজের কৃতিত্ব কেড়ে নেওয়া যায়!
তবে পাল্টা যোগী বলেছেন, অখিলেশের দাবিমতো ২০১৬য় নয়, ২০১৮র জুলাইয়ে এই প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী। আর আজ আমরা প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে তা উদ্বোধনের পরিস্থিতিতে রয়েছি। ডাবল ইঞ্জিন সরকার কীভাবে চলে, এটা তার উদাহরণ।
যোগী প্রশাসনের দাবি, এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলে লখনউ, বরাবাঁকি, অমেঠি, অযোধ্যা, সুলতানপুর, অম্বেডকর নগর, আজমগড়, মৌ, গাজিপুরের মতো পূর্ব উত্তরপ্রদেশের আর্থিক উন্নয়ন চাঙ্গা হবে।
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক পূর্বাঞ্চল এক্সপ্রেসওয়ের ১০টি বিশেষত্ব।
১) ৬ লেনের পূর্বাঞ্চল এক্সপ্রেসওয়েকে সম্প্রসারিত করে ভবিষ্যতে ৮ লেনের করা হতে পারে। এই এক্সপ্রেসওয়ে লখনউ শহরকে আজমগড়, গাজিপুর, ফৈজাবাদ, সুলতানপুর, আম্বেদকর নগর এবং আমেঠির সঙ্গে যুক্ত করবে।
২) পূর্বাঞ্চল এক্সপ্রেসওয়ে লখনউয়ের চান্দসরাই গ্রাম থেকে শুরু করে গাজিপুর জেলার হেদ্রিয়া গ্রামে গিয়ে শেষ হবে। এই পূর্বাঞ্চল এক্সপ্রেসওয়ে যমুনা এক্সপ্রেসওয়ের সাহায্যে উত্তরপ্রদেশের পূর্বের জেলাগুলিকে দেশের রাজধানী দিল্লির সঙ্গে যুক্ত করবে। এটি দেশের সব থেকে দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়ে হবে।
৩) পূর্বাঞ্চল এক্সপ্রেসওয়ের উপরে ৮টি পেট্রোল পাম্প রয়েছে। এছাড়াও এই এক্সপ্রেসওয়ের উপরে ৪টি সিএনজি স্টেশন বসানোর কাজ চলছে।
৪) পূর্বাঞ্চল এক্সপ্রেসওয়ের দু’ পাশে ৪ লাখের বেশি গাছ লাগানো হচ্ছে। এছাড়াও এই এক্সপ্রেসওয়ের উপরে ইন্টারচেঞ্জ, ফ্লাইওভার, বড় পুল এবং ছোট পুলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই এক্সপ্রেসওয়েতে আধুনিক আন্ডারপাস তৈরি করা হয়েছে।
৫) পূর্বাঞ্চল এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনা এবং আপৎকালীন পরিস্থিতির জন্য অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থাও করা হবে।
৬) পূর্বাঞ্চল এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য সড়ক সুরক্ষার উপরে জোর দেওয়া হয়েছে। এই এক্সপ্রেসওয়েতে দু’টি লেনের মাঝখানে মেটাল বিম বেরিয়ার এবং সতর্কতামূলক বোর্ড লাগানো হয়েছে।
৭) পূর্বাঞ্চল এক্সপ্রেসওয়েতে উত্তরপ্রদেশ সরকারের এক্সপ্রেসওয়ে নিগমের তরফে যাত্রীদের সুবিধার জন্য বিশাল সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই এক্সপ্রেসওয়েতে পশুদের মৃত্যু আটকানোর জন্য অ্যাডভান্স ট্র্যাফিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের ব্যবস্থা করা হবে।
৮) করোনা মহামারীর মধ্যেই সরকার ২০২১-এর অক্টোবর মাসের মধ্যে পূর্বাঞ্চল এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে সফল হয়েছে।
৯) পূর্বাঞ্চল এক্সপ্রেসওয়ের একটি লেন যাতে ভারতীয় সেনা ব্যবহার করতে পারে তার জন্য কাজ চলছে। এই এক্সপ্রেসওয়েতে আপৎকালীন পরিস্থিতিতে ভারতীয় বায়ুসেনার বিমান নামানোর জন্য আপৎকালীন রানওয়ে তৈরি করা হবে।
১০) উত্তরপ্রদেশ সরকার মনে করছে যে এই পূর্বাঞ্চল এক্সপ্রেসওয়ে খোলার পরে প্রতি দিন এই এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে প্রায় ১৫,০০০ থেকে ২০,০০০ হাজার গাড়ি চলাচল করতে পারে।