দেশের সময়, কলকাতা: নকশিকাঁথার (Nakshi Kantha) অপূর্ব কাজের জন্য বড় স্বীকৃতি পেয়েছেন বাংলার প্রীতিকণা গোস্বামী । পদ্মশ্রী সম্মাণে ভূষিত করা হয়েছে তাঁকে।
প্রাপকদের হাতে পদ্ম পুরস্কার (Padma Awards 2023) তুলে দিলেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। রাষ্ট্রপতিভবনে বুধবার মোট ১০৬ জন পদ্মসম্মান প্রাপকদের হাতে সম্মান তুলে দিলেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। পরম্পরা মেনে এদিন রাষ্ট্রপতি ভবনের এই সমারোহে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছিলেন লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা, ছলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি।
সোনারপুরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা প্রীতিকণার হাতের কাজ এখন বিদেশেও পাড়ি দেয়। বিনা পারিশ্রমিকেই মহিলাদের সেলাইয়ের কাজ শেখান তিনি। কমলাদেবী কাঁথা সেন্টারের নাম এখন লোকের মুখে মুখে ফেরে।
লড়াই শুরু ১৯৭৩-এ। বাংলার প্রত্যন্ত গ্রামের আর পাঁচজন মেয়ের মতোই সাদামাটা জীবন। ম্যাট্রিক পাশ করার কিছুদিনের মধ্যেই বাবার মৃত্যু স্তব্ধ করে দিয়েছিল প্রীতিকণা দেবীর পরিবারকে। বিধবা মায়ের রুটি-রুজির ব্যবস্থা করবেন কীভাবে! চমৎকার ঘটল একদিন এক বন্ধুর বাড়িতে। বন্ধুর সেলাইয়ের কাজ মন দিয়ে দেখছিলেন তিনি। সেলাই করতে করতে শাড়িটা রেখে বেরিয়ে যান সেই বন্ধু। প্রীতিকণা কী মনে করে খানিকটা সেলাই করে দিয়েছিলেন। বন্ধু ফিরে এসে জিজ্ঞেস করলে অস্বস্তিতে পড়ে যান তিনি। অস্বীকার করতে থাকেন। ওই বন্ধুই সেদিন চিনেছিলে প্রীতিকণাদেবীর হাতের জাদু।
#PeoplesPadma | President #DroupadiMurmu confers #PadmaShri2023 in the field of Art to Pritikana Goswami. #PadmaAwards2023 | #PadmaAwards | @PadmaAwards pic.twitter.com/j4Fb0OjhmN
— All India Radio News (@airnewsalerts) March 22, 2023
বাবার মৃত্যুতে মাত্র ১০ বছর বয়সেই অভিভাবকহীন হয়ে পড়েন তিনি। মা এবং পাঁচ বোনের সংসারে নেমে আসে চরম দারিদ্র্য। জ্যেঠু তাঁকে নিয়ে চলে যান তাঁর বাড়িতে। সেখানেই মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা। এর সঙ্গে সঙ্গেই ছোটবেলা থেকে সেলাইয়ের কাজেও তাঁর হাতেখড়ি হয়। বান্ধবী রমা দাসের সেলাইয়ের কাজ তাঁকে উৎসাহ দিয়েছিল। রমা সেলাইয়ের কাজের অর্ডার পেতেন। সেই সূত্র ধরেই পীতাম্বরি নামে একটি সংস্থা প্রীতিকণাদেবীকেও সেলাইয়ের কাজের অর্ডার দেয়। এরমধ্যেই ১৯৭৭ সালে বিয়ে হয়ে যায় প্রীতিকণার। বিয়ের পরেও পড়াশোনা চালিয়ে যান তিনি। সিটি কলেজে ভর্তি হন।
১৯৯০ সালে ওয়েস্টবেঙ্গল ক্রাফট কাউন্সিল থেকে নকশিকাঁথার কাজের অর্ডার আসে। সেই থেকেই শুরু। ২০০১ সালে তিনি তাঁর কাজের জন্য রাষ্ট্রপতি আবদুল কালাম আজাদের কাছ থেকে জাতীয় পুরষ্কার পান। এর আগে তাঁর কাকা পণ্ডিত নিখিল ঘোষ সংগীত বিভাগে পদ্মভূষণ পেয়েছিলেন। নকশিকাঁথার মতো কাজ, যার আন্তর্জাতিক বাজারে যথেষ্ট কদর রয়েছে, সেগুলো কীভাবে বিকল্প আয়ের রাস্তা হতে পারে, সেই দিশাও ছাত্রীদের দেখাচ্ছেন বাংলার গর্ব প্রীতিকণা গোস্বামী।
প্রসঙ্গত, বাংলা থেকে চারজন পদ্ম পুরস্কার পেলেন। তাঁরা হলেন কাঁথা শিল্পী প্রীতিকণা গোস্বামী। সূঁচ-সুতো হাতে জাদু ছড়িয়েছেন এই শিল্পী। সূঁচ-সুতোও যে পায়ের তলার মাটি শক্ত করতে পারে তা প্রমাণ করে দিয়েছেন প্রীতিকণাদেবী। পদ্ম পুরস্কার পেয়েছেন ধনিরাম টোটো। টোটো ভাষার সংরক্ষণ ও অগ্রগতির প্রতি অবদানের জন্য এই সম্মান পেলেন তিনি।
এছাড়াও পদ্ম সম্মান পেলেন জলপাইগুড়ির লোকসঙ্গীত শিল্পী মঙ্গলাকান্তি রায় এবং প্রয়াত চিকিৎসক শ্রী দিলীপ মহলানবিস। গত বছরের ১৬ অক্টোবর প্রয়াত হন দিলীপ মহলানবিশ। তাঁর হাত ধরেই তৈরি হয়েছিল ওরাল রিহাইড্রেশন সলিউশন বা ওআরএস। মঙ্গলকান্তি রায়, ধনীরাম টোটো ও প্রীতিকণা গোস্বামী পদ্মশ্রী পুরস্কার পেয়েছেন। মরণোত্তর পদ্মবিভূষণ পেয়েছেন চিকিৎসক শ্রী দিলীপ মহলানবিস। তাঁর পুরস্কার নিয়েছেন পরিবারের এক সদস্য।