ধ্রুবহালদার পশ্চিম মেদিনীপুর: এবার ক্লাসে ফিরল ছোটরাও। প্রায় দু’বছর পর। ছোটদের স্কুলে ফেরা ঘিরে সকাল থেকে পাড়ায় পাড়ায় উন্মাদনা, কোলাহল। বাবা-মা, দাদু-দিদার হাত ধরে ছোটরা ছুটেছে স্কুলে। ফিরে এল চেনা দৃশ্য।
পশ্চিম মেদিনীপুর পিংলা জামনা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শুরু হল ক্লাস ওয়ান থেকে ফোরের পঠন-পাঠন।
বাংলার সর্বত্রই একই দৃশ্য ধরা পড়ল বুধবার সকালে স্কুল ইউনিফর্মের ওপর গরম পোশাক পরিয়ে বাচ্চাদের নিয়ে স্কুলের গেট খোলার অপেক্ষায় ছিলেন অভিভাবকরা। বাচ্চাদের অনেকের হাতে, পকেটে ছিল ছোট স্যানিটাইজারের শিশি। মাস্ক পরে থাকা, নাকে-মুখে হাত না দেওয়ার কথা বাড়ি থেকেই শিখিয়ে এনেছিলেন অভিভাবকরা। স্কুলের গেটের শিক্ষাকর্মী তা একবার করে ফের মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন কচিকাঁচাদের। তাদের মধ্যে স্কুলে যাওয়ার উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো। স্কুলে ঢুকতে কারও মধ্যে অনীহা দেখা যায়নি।
বনগাঁ হাইস্কুলের গেটের কাছে নতুন করে গোল গোল বৃত্ত আঁকা হয়েছে। সেখানে দূরত্ব-বিধি মেনে পড়ুয়াদের নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন অভিভাবকরা। স্কুলের গেট খোলার পর একজন করে ঢুকতে দেওয়া হয়েছে। ঢোকার সময় শরীরের তাপমাত্রা দেখা এবং হাতে স্যানিটাইজার দেওয়া হচ্ছিল।সেইসঙ্গে ক্লাসে ফিরল ফাইভ থেকে সেভেনের পড়ুয়ারাও।
শিক্ষক-শিক্ষিকারা জানিয়েছেন, প্রাথমিকের অনেক পড়ুয়াই প্রথমবার স্কুলে এসেছে এদিন। তাদের কাছে পরিবেশটা নতুন, তাই বাড়তি নজর রাখা হয়েছে। বাচ্চাদের সামলাতে কিছুটা হিমশিম খেতে হচ্ছে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের। তারা স্কুলে ঢুকেই ছোটাছুটি শুরু করে দেয়।
বাচ্চাদেরও স্কুলে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। গেটে ঢোকার আগে হাতে স্যানিটাইজার দেওয়ার ব্যবস্থাও করা হয়েছে স্কুলে স্কুলে। দীর্ঘদিন পর চেনা ছন্দে ফেরার পাশাপাশি ক্লাসরুমে পড়াশোনা ও বন্ধুবান্ধদের ফিরে পাওয়ায় স্বভাবতই খুশি খুদে স্কুল পড়ুয়ারা।
তবে বাচ্চারা কি কোভিডিবিধি মানবে? এই চিন্তাও রয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষের। তাই একটি বেঞ্চে দু’জন করে পড়ুয়াকে বসানো হচ্ছে।
কিন্তু বিভিন্ন বাধ্যবাধকতা সত্ত্বেও স্কুলে এসে স্বস্তিতে পড়ুয়ারা। তাদের চোখে-মুখে ফুটে উঠছে সেই ছবি। পশ্চিম মেদিনীপুর পিংলা জামনা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্কুলের প্রথম শ্রেণীর এক পড়ুয়ার কথায় , ‘স্কুলে এসে খুব মজা লাগছে। বাড়িতে পড়া হত না। আজকে নতুন একটা বন্ধু হয়েছে।’ ওই স্কুলেরই আর এক পড়ুয়ার কথায়, ‘বাড়িতে লিখতাম, ছবি আঁকতাম আর খেলতাম। স্কুলে এসে খুব ভাল লাগছে।’
প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন, ‘আজ পড়ুয়াদের উপস্থিতির হার ৬০ শতাংশ। আপাতত ছড়া, গান, আঁকা এসব হচ্ছে। ওরা আগে স্কুলের পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিক, তারপর পাঠ্যক্রম অনুযায়ী পড়ানো হবে। আজ ওয়ান আর টু-এর ক্লাস হয়েছে। কাল থেকে থ্রি-ফোর আসবে।’
উল্লেখ্য, সরস্বতী পুজোর মুখে খুলে দেওয়া হয়েছিল নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাস। চালু হয়ে গিয়েছিল কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলিও। বাচ্চাদের জন্য ‘পাড়ায় শিক্ষালয়’ শুরু হলেও তাতে বেশকিছু সমস্যা হচ্ছিল। বহু অভিভাবকও অসন্তুষ্ট ছিলেন। এদিন থেকে পুরোদমে স্কুল শুরু হওয়ায় খুশি তাঁরা। স্বস্তিতে শিক্ষক-শিক্ষিকারাও।