
ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে দেশের একাধিক এয়ারবেসের মতো পাঞ্জাবের আদমপুর এয়ারবেসেও হামলার চেষ্টা করেছিল পাকিস্তান । কিন্তু সেই হামলা অনায়াসে প্রতিহত করে ভারতীয় জওয়ানরা । মঙ্গলার সেই এয়ারবেসেই জওয়ানদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কড়া বার্তা দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বলেন, ভারতের দিকে তাকালে কী হতে পারে তা বুঝে গেছে পাকিস্তান।
পাকিস্তান দাবি করেছিল তাদের হামলায় নাকি বেহাল দশা হয়েছে পঞ্জাবে অবস্থিত আদমপুর বিমানঘাঁটির। সেনা আগেই প্রমাণ দিয়ে জানিয়েছিল এই দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যে। এবার মঙ্গলবার সকাল সকাল সেই এয়ারবেসে হাজির হলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দিনভর কাটালেন সেখানেই।

সেখানেই প্রধানমন্ত্রী অপারেশন সিঁদুরে জড়িত ভারতীয় সেনাবাহিনীর সৈন্যদের সঙ্গে দেখা করেন। এরপর, সেনাকর্মীদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, “গোটা বিশ্ব ভারত মাতার শক্তি দেখেছে। ভারত মাতা কি জয় বলতেই শত্রুরা কাঁপতে থাকে। ভারত মাতা কি জয় ক্ষেত থেকে মিশনে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। আমাদের সেনাবাহিনী পারমাণবিক হুমকিকে ভয় করে না।”
মোদী আরও বলেন, “আজ থেকে বহু দশক পরেও, যখন ভারতের এই বীরত্ব নিয়ে আলোচনা হবে, তখন আপনি এবং আপনার সঙ্গীরা এর সবচেয়ে বিশিষ্ট অধ্যায় হবেন। আপনারা সকলেই দেশের বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক নতুন অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন। আজ, বীরদের এই ভূমি থেকে, আমি বিমান বাহিনী, নৌবাহিনী এবং সেনাবাহিনীর সমস্ত সাহসী সৈনিক এবং আমাদের বিএসএফ-এর বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। তোমাদের বীরত্বের কারণে, অপারেশন সিঁদুর সারা বিশ্বে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। প্রতিটি ভারতীয় তোমাদের সঙ্গে আছে। আজ দেশের প্রতিটি নাগরিক তাদের সৈন্যদের পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞ।”

প্রধানমন্ত্রী জানান, অপারেশন সিঁদুর কোনও সাধারণ ঘটনা ছিল না। এটি ভারতের নীতি, উদ্দেশ্য এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতার সঙ্গমস্থল। তিনি বলেন, “ধর্ম প্রতিষ্ঠার জন্য অস্ত্র হাতে নেওয়া আমাদের ঐতিহ্য। আমাদের মেয়ে-বোনেদের সিঁদুর কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। আমরা সন্ত্রাসীদের বাড়িতে ঢুকে তাদের গুঁড়িয়ে দিয়েছি। সন্ত্রাসের প্রভুরা এখন বুঝতে পেরেছে। ভারত যদি চোখ তুলে তাকায়, তাহলে কেবল একটিই ফলাফল হবে, আর তা হলো ধ্বংস।”
বন্ধুরা, তোমরা এমন কিছু করেছ যা অভূতপূর্ব, অকল্পনীয় এবং আশ্চর্যজনক। আমাদের বিমান বাহিনী পাকিস্তানের গভীর সন্ত্রাসী ঘাঁটিগুলিকে লক্ষ্য করে আক্রমণ করেছে। তাও মাত্র ২০-২৫ মিনিটের মধ্যেই। কেবলমাত্র আধুনিক প্রযুক্তিতে সজ্জিত একটি পেশাদার সেনাবাহিনীর দ্বারাই এটা সম্ভব।
আমাদের লক্ষ্য ছিল পাকিস্তানের ভেতরে সন্ত্রাসীদের হত্যা করা, কিন্তু পাকিস্তান তাদের যাত্রীবাহী বিমান সামনে রেখে যে ষড়যন্ত্র করেছে, আমি কল্পনা করতে পারি যে যাত্রীবাহী বিমানগুলি দৃশ্যমান হলে সেই মুহূর্তটি কতটা কঠিন হবে, আমি গর্বিত যে আপনারা যাত্রীবাহী বিমানের ক্ষতি না করে খুব সতর্কতার সঙ্গে দুর্দান্ত কাজ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি গর্বের সঙ্গে বলতে পারি আপনারা আপনাদের লক্ষ্যে সম্পূর্ণরূপে পৌঁছেছেন। পাকিস্তানে কেবল সন্ত্রাসীদের আস্তানা এবং বিমানঘাঁটি ধ্বংস করা হয়নি, বরং তাদের দুষ্ট উদ্দেশ্য এবং দুঃসাহসও ধ্বংস করা হয়েছে। শত্রুরা আমাদের অন্যান্য বিমানঘাঁটির পাশাপাশি এই বিমানঘাঁটিতেও আক্রমণ করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু প্রতিবারই পাকিস্তানের অসৎ উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়েছে। আমাদের শক্তিশালী বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পাকিস্তানের ড্রোন এবং তার ইউভি, পাকিস্তানের বিমান এবং তার ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করেছে। দেশের সকল বিমান ঘাঁটির সঙ্গে যুক্ত সৈন্যদের আমি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা জানাই।

যদি আবারও সন্ত্রাসী হামলা হয়, তাহলে ভারত জবাব দেবে এবং দৃঢ় জবাব দেবে। অপারেশন সিঁদুর ভারতের ‘নিউ নর্ম্যাল’। ভারত এখন তিনটি নীতির উপর দাঁড়িয়ে।
প্রথমত – যদি ভারতের উপর কোনও সন্ত্রাসী হামলা হয়, আমরা আমাদের নিজস্ব উপায়ে, আমাদের নিজস্ব শর্তে এবং আমাদের নিজস্ব সময়ে জবাব দেব।
দ্বিতীয়ত – ভারত কোনও পারমাণবিক ব্ল্যাকমেইল সহ্য করবে না।
তৃতীয়ত – আমরা সন্ত্রাসীদের পৃষ্ঠপোষকতাকারী সরকার এবং তাদের প্রভুদের আলাদাভাবে দেখব না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের এই নতুন রূপ, এই নতুন ব্যবস্থাকে বুঝতে পেরে বিশ্বও এগিয়ে যাচ্ছে। অপারেশন সিঁদুরের প্রতিটি মুহূর্ত ভারতীয় বাহিনীর শক্তির সাক্ষ্য বহন করে। বিএসএফ এবং অন্যান্য বাহিনীও আশ্চর্যজনক ক্ষমতা প্রদর্শন করেছে।
সোমবার রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতীয় সেনার ‘অপারেশন সিঁদুর’ অভিযানের সাফল্য নিয়ে বার্তা দিয়েছিলেন তিনি। একই সঙ্গে পাকিস্তানকে হুঙ্কার দিয়ে তাঁর বক্তব্য ছিল, এবার থেকে তাঁদের সঙ্গে কথা হলে অধিকৃত কাশ্মীর এবং সন্ত্রাসবাদ নিয়েই হবে। এছাড়া, আগামী দিনে ভারতের বিরুদ্ধে কোনও জঙ্গি হামলা হলে তা যুদ্ধ হিসেবেই ধরে নেওয়া হবে। মঙ্গলবার পাঞ্জাবের এয়ারবেস থেকে কার্যত একই সুরে পাকিস্তানকে তুলোধনা করলেন মোদী।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, ”পাকিস্তানকে বুঝিয়ে দিয়েছি ভারতের দিকে নজর দেওয়ার একটাই পরিণাম, সেটা হল বিনাশ। আমরা যে ঘরে ঢুকে মারতে পারি, ওদের সেই বার্তাই দিয়েছি।” মোদীর কথায়, ভারত যে ফের এয়ারস্ট্রাইক করবে তা ভাবতে পারেনি পাকিস্তান। তাই তারা ভয় পেয়েছে। তবে আগামী দিনে এমন হামলা হলে আবার প্রত্যাঘাত হবে। জঙ্গিদের আর কোনও সুযোগ দেওয়া হবে না। পাক সরকারকে নিশানা করে মোদী এও বলেন, ওরা সন্ত্রাসবাদীদের বাঁচানোর চেষ্টা করে। আগামী দিনে এই সুযোগও পাবে না।
জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে মোদী স্পষ্ট বলেছিলেন, সন্ত্রাস ও বাণিজ্য একসঙ্গে চলতে পারে না। জল আর রক্তও এক সঙ্গে বইতে পারে না। তাই পাকিস্তানকে বুঝতে হবে তারা কী চায়। জঙ্গিদের সমর্থন করলে ভবিষ্যতে আবারও কড়া জবাব পাবে পাকিস্তান। এদিন জওয়ানদের সঙ্গে সাক্ষাতের পর নিজের বক্তব্যে সেটাই ফের পরিষ্কার করে দেন প্রধানমন্ত্রী। সাফ কথা, ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ যেমন ঘরে ঢুকে জঙ্গিদের মারা হয়েছে, পরেও এভাবে ঘরে ঢুকে জঙ্গিদের মারা হবে।
পাঞ্জাবের এয়ারবেসে জওয়ানদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় বার্তাও দেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। তিনি লেখেন, ”আকাশ, জল থেকে মাটি-সর্বত্র আমরা প্রস্তুত থেকেছি। সেনাবাহিনী সর্বত্র সতর্ক। ভবিষ্যতে এমন হামলার চেষ্টা হলে এভাবেই জবাব দেওয়া হবে।” মোদী এও বলেন, যারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছে, তাঁদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা আমার কাছে এক বিশেষ অভিজ্ঞতা।
