দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ জাতীয় দলের ফুটবলার তিনি কিনা ফুড ডেলিভারি কোম্পানিতে কাজ করছেন। দিনে হয়তো ১৫০-২০০ টাকা আয় হল। আবার কোনও দিন হয়তো ৩০০ টাকা আয় হয়।
এই ভাবেই কোন রকমে দিন চলছে পৌলমী অধিকারীর। তিনি ভারতের হয়ে অনূর্ধ ১৬ ও ১৯ দলের হয়ে খেলছেন। জার্মানি, আমেরিকা, লন্ডন, স্কটল্যান্ড খেলতে গিয়েছিলেন। বেহালা শিবরামপুর বাড়িতে পদক ও সার্টিফিকেট ভর্তি। দু‘দিন অন্তর ওই পদকগুলি মুছে জায়গা মতো রেখে দেন, আর চোখের জল ফেলেন। একরাশ শূন্যতা নিয়ে একাকী ঘরে বসে থাকেন।
সকাল ৯ টায় বেরিয়ে রাত ১০ টায় বাড়ি ফেরেন এই নামী প্রাক্তন ফুটবলার। রাস্তাতেই কিছু একটা খেয়ে নেন।অকালেই প্রাক্তন হয়ে যায় প্রতিভাবান মিড ফিল্ডারের।
বাংলার একদা ডাক সাইটে নামী তারকার কথায়, ‘‘কষ্ট তো খুবই হয়। তাই ভাবি যে কেন এত লড়াই করে ফুটবলার হতে গেলাম। মাঠ থেকে দূরে সরে এই কাজ করতে মন থেকে ভাল লাগে না। কিন্তু কী করব, এমনি বসে থাকলে তো পেট কথা শুনবে না।’’
পৌলমীর মনে হয়েছে খেলার সময় একটা চোট তাঁকে ভোগালেও সেরে উঠে তিনি মাঠেও ফিরেছিলেন। তাঁর প্রতিদিনের এই লড়াইয়ের একটি ভিডিও অচিরেই হয়ে উঠেছে ভাইরাল, যেখানে তিনি সাক্ষাৎকারে বলছেন, বড় ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন তাঁর শেষ হয়ে গিয়েছে। বারবার অবিচার ঘটেছে তাঁর ক্ষেত্রে।
রাজ্য সরকার কিংবা পাড়ার ক্লাব কেউ তাঁর পাশে থাকেনি। কেউ সাহায্যের হাত বাড়ায়নি। নিজের কথা ভাবতে আর ভাল লাগে না ২৮-র এই তরুণী। পৌলমী বাইকে করে খাবার বিলি করার আগে বলেছেন, ‘‘আমি তো কিছুই পেলাম না। কিন্তু আমার মতো অবস্থা যেন কারও না হয়। কারণ আমি অভাব দেখেছি প্রতিনিয়ত, পেটের জ্বালা আমি জানি। তাই অনুরোধ করব কোনও প্রতিভাবান মেয়েদের ফুটবল জীবন যেন শেষ না হয়ে যায়। অনেকে রয়েছে ভাল খাবার খেতে পায় না। খেলার মতো ভাল কোনও বুট নেই। ওরকম মেয়েদের যেন পাশে দাঁড়ানো হয়।’’
পৌলমীর কথা শুনে কষ্ট পেলেও অনেক ফুটবলারই বলতে শুরু করেছেন শুধু পৌলমী নয়, আমাদের বাংলার অনেক মহিলা ফুটবলাররাই এরকম জোম্যাটো, সুইগিতে কাজ করে সংসার চালাচ্ছে। তাই তাঁদের কাছে এই বিষয়টি ব্যতিক্রম নয় বলেও মনে করছেন তারা। অনেক মেয়ে ফুটবলার রয়েছে, তারা আবার সিভিল পুলিশেও কাজ করে।’’
কুন্তলাই দেশের একমাত্র মহিলা ফুটবলার, যাঁর অধিনে ভারতীয় দল বিশ্বকাপ ফুটবলও খেলেছে। বাংলার মহিলা ফুটবলের পুরোধা কুন্তলা সংবাদ মাধ্যমকে জানান, ‘‘পৌলমীর লড়াইকে আমি সাধুবাদ জানাচ্ছি। কিন্তু ও দেশের হয়ে কতটা খেলেছে, আমি বলতে পারব না। আমি জানি না কলকাতা লিগে ওর ক্লাব কী ছিল। তবে এইভাবে সংসারের হাল ধরা আমার কাছেও ভাল লেগেছে। ওকে আগামী দিনের শুভেচ্ছ জানাই।’’