দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ শুক্রবার সন্ধ্যায় বক্স অফিস কাঁপাতে পারল না কোনও সদ্য মুক্তি পাওয়া বলি উডের ছবি ৷ কিন্তু বাংলা আন্দোলিত করে দিলেন অভিনেত্রী অর্পিতা মুখোপাধ্যায় একাই ! এক সময়ে তিনি ওড়িয়া ও তামিল ছবিতে কাজ করেছেন ৷ তবে শুক্রবার বাংলার অনেকেই অর্পিতাকে নামে চিনলেন শিল্পমন্ত্রী তথা প্রাক্তন শিক্ষা মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের (সূত্র ধরে।
এদিন সকাল থেকে স্কুল সার্ভিসে নিয়োগ দুর্নীতির সূত্রে পার্থ চট্টোপাধ্যায় সহ মোট ১৩ জনের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে ইডি । তল্লাশি চালানো হয়েছে বেহালার ডায়মন্ড সিটির বহুতল আবাসনের বাসিন্দা অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাটেও। সেখান থেকে উদ্ধার হয়েছে নগদ ২০ কোটি টাকা। সেই সঙ্গে উদ্ধার তথা আটক হয়েছে ২০ টি মোবাইল ফোন। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের দাবি, এই অর্পিতা হলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ক্লোজ অ্যাসোসিয়েট তথা অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। শুধু তা নয়, ইডি কর্তাদের প্রাথমিক ধারনা স্কুল সার্ভিসে দুর্নীতির টাকাই লুকনো ছিল অর্পিতার ফ্ল্যাটে।
জিৎ-স্বস্তিকার অভিনীত পার্টনার ছবিতে সহ শিল্পী ছিলেন অর্পিতা। আবার প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের ছবি মামা-ভাগ্নেতেও অর্পিতা অভিনয় করেছেন। এ ছাড়া ‘জোর যার মুলুক তার’ এবং ২০১১ সালে বিদেহীর খোঁজে রবীন্দ্রনাথ ছবিতেও অভিনয় করেছেন অর্পিতা।
২০১৭ সালে একটি তামিল ছবিতে অভিনয় করেছিলেন অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। সেই ছবির নাম ছিল চিন্নামা লাভ, মানে মাসির ভালবাসা! তবে তার আগে কিছু ওড়িয়া ছবি ও বাংলা ছবিতেও কাজ করেছেন অর্পিতা।
বাংলা ছবিতে অভিনয়ের সমান্তরালেই ওড়িয়া ছবিতে কাজ করেছেন এই অভিনেত্রী। ২০০৯ সালে ওড়িয়া ছবি প্রেম রোগী-তে নায়িকা ছিলেন তিনি। পরে ২০১০ সালে ওড়িয়া ছবি ‘তোরা মোরা জোড়ি সুন্দরা’ ছবিতে নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন অর্পিতা।
এ ব্যাপারে কোনও ভরসাযোগ্য তথ্য পাওয়া যায়নি যদিও ৷ ইডি এদিন সন্ধেবেলা যে বিবৃতি প্রকাশ করেছে, তাতে বিশদে লেখা নেই যে কি ভাবে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে অর্পিতার যোগাযোগ হয় ৷
তবে রাজনৈতিক সূত্রের দাবি, নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘের সূত্র ধরে অর্পিতার সঙ্গে পরিচয় পার্থবাবুর। এ ব্যাপারে এক তরুণ নেতার ভূমিকা রয়েছে বলেও অনেকে দাবি করেন। নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘের পুজোর পৃষ্ঠপোষক হলেন পার্থবাবু। ওই পুজোর থিম সঙের অ্যালবামের প্রচ্ছদেও একবার অর্পিতার ছবি ছিল।
সূত্রের খবর, টালিগঞ্জের অনতিদূরে বেহালার একটি বহুতল আবাসনে থাকতেন অর্পিতা। তাঁর লাইফস্টাইল ছিল বেশ বিলাসবহুল। একাধিক দামি গাড়িতে চড়ে ঘুরতেন তিনি। তাঁর বেহালার ওই ফ্ল্যাটে পার্থবাবুর যাতায়াত ছিল বলেও রাজনৈতিক সূত্রের দাবি।
দক্ষিণ কলকাতার একটি অভিজাত আবাসনের ফ্ল্যাট থেকে অন্তত ২০ কোটি টাকা উদ্ধার করল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। এই ফ্ল্যাটটি অর্পিতা মুখোপাধ্যায় নামে এক মহিলার বলে জানিয়েছে তদন্তকারী সংস্থা। ইডির দাবি, অর্পিতা রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী (প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী) পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পরিচিত।
যদিও এই দাবির সত্যতা দেশের সময় যাচাই করে দেখেনি। তদন্তকারীদের আরও দাবি, ‘পার্থ ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতার বাড়ি থেকে ২০টি মোবাইল ফোনও উদ্ধার হয়েছে। পাওয়া গিয়েছে সোনা ও বৈদেশিক মুদ্রাও।
শুক্রবার রাত ৮টা ১০ নাগাদ ইডির টুইটার হ্যান্ডেল থেকে একটি টুইট করা হয়। টুইটে লেখা হয়, ‘পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশন এবং পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে নেমে বেশ কয়েকটি জায়গায় তল্লাশি চালানো হচ্ছে।’ এর সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে নগদ টাকার ছবি পোস্ট করা হয়েছে ইডির টুইটার হ্যান্ডেল থেকে।
ইডি সূত্রে দাবি, টালিগঞ্জের কাছে হরিদেবপুরের ডায়মন্ড সিটি সাউথের আবাসনে অর্পিতার ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালানো হয়েছিল। সেখান থেকে উদ্ধার হয়েছে অন্তত ২০ কোটি নগদ টাকা। অর্পিতার বাড়িতে তিনটি নোট গোনার মেশিন নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ব্যাঙ্ক আধিকারিকদের ডেকে ওই মেশিন ব্যবহার করে উদ্ধার হওয়া অর্থ গোনা হচ্ছে বলে দাবি তদন্তকারীদের।
মন্ত্রী পার্থের বাড়িতে শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ গিয়েছেন ইডি আধিকারিকেরা। ১২ ঘণ্টার বেশি সময় কেটে গিয়েছে, এখনও পার্থের বাড়িতে থেকে বেরোননি তদন্তকারীরা। সূত্রের খবর, ইডির তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদ চলাকালীন পার্থ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। পরে ভবানীপুুর থানার পুলিশের সঙ্গে এসএসকেএম-এর তিন জন চিকিৎসক এসেছিলেন তাঁর বাড়িতে।
এক জন অর্থোপেডিক, এক জন মেডিসিন আর এক জন কার্ডিয়োর চিকিৎসক। পরে বিকেল ৪টে নাগাদ মন্ত্রীর বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান চিকিৎসকেরা। পার্থের এক নিরাপত্তারক্ষী জানান, পার্থের বাড়ির নীচে এখনও কেন্দ্রীয় বাহিনী রয়েছে। তবে বাড়ির বাইরে রয়েছে নেতাজি নগর থানার পুলিশ।
শুক্রবার সন্ধ্যায় হরিদেবপুরের একটি অভিজাত আবাসন থেকে উদ্ধার হয়েছে প্রায় ২০ কোটি টাকা নগদ। ইডি এই বিপুল টাকা উদ্ধার করেছে। সঙ্গে সোনা, বিদেশি মুদ্রাও। এই ফ্ল্যাটের মালকিন অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। যিনি মডেল। ইতিমধ্যেই অর্পিতা মুখোপাধ্যায় সম্পর্কে একাধিক তথ্য উঠে আসছে।
সূত্রের খবর, এই অর্পিতা মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। ওই সূত্রের দাবি, একবার এক সাংসদ এই অর্পিতাকে নিয়ে ভোট প্রচারে আপত্তি তুলেছিলেন। এরপর ওই সাংসদের হয়ে আর প্রচারেই যাননি পার্থবাবু।
সূত্রের খবর, অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায় বিভিন্ন কাউন্সিলর পদপ্রার্থীর প্রচারে গিয়েছেন। যা নিয়ে দলের অনেকের আপত্তিও ছিল বলেই সূত্রের দাবি। ওই সূত্র জানিয়েছে, তাঁদের আপত্তিকে অগ্রাহ্য করেই পার্থ চট্টোপাধ্যায় শাসকদলের মহাসচিব হিসাবে অর্পিতাকে বিভিন্ন চায়ের আসর এমনকী প্রচারে নিয়ে যেতেন। আরও একটি তথ্য উঠে এসেছে।
সূত্রের খবর, দলের এক সাংসদ তাঁর ভোটের প্রচারে অর্পিতাকে নিয়ে যাওয়ায় আপত্তি তুলেছিলেন। দীর্ঘদিনের সাংসদ তিনি। প্রথম থেকেই তৃণমূলের সৈনিক। ফলে দলে তাঁর গুরুত্বও নেহাত কম নয়। সূত্রের খবর, তাঁর আপত্তির পর পার্থবাবু কিছুটা বিরক্ত হন। এমনকী সেই তৃণমূল প্রার্থীর প্রচারে একটিও সভা করেননি তিনি।
কেন এই অর্পিতার ফ্ল্যাটে হানা দিল ইডি? ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন ১৪টি জায়গায় হানা দেওয়ার সময় অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে বিশেষ অভিযান চালানো হবে বলে মাঝপথে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপরই ৭-৮ জন ইডির আধিকারিক অর্পিতার ফ্ল্যাটে গিয়ে ঢুকে তিনটি ঘর দেখতে পান। দু’টি ঘর খোলা থাকলেও একটি ঘর রহস্যজনকভাবে বন্ধ ছিল।
সেটির দরজা খুলতে বলা হয় অর্পিতাকে। অর্পিতা প্রথমে ইডির আধিকারিকদের জানান, সেই দরজার চাবি তাঁর কাছে নেই। যা শুনে ইডির আধিকারিকদের সন্দেহ হয়। এরপরই জোর করে ওই দরজা খুলে ভিতরে বিপুল পরিমাণে টাকা উদ্ধার হয় বলেই সূত্রের খবর।