দেশের সময় কলকাতা: অতীতের ঘটনা ও রাজনৈতিক হিংসার ধারাবাহিকতা দেখে বাংলার স্পর্শকাতর এলাকায় পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনীর নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ।
পঞ্চায়েত নির্বাচন সংক্রান্ত একাধিক বিষয় নিয়ে হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী। দু’টি পিটিশনেই অভিন্ন আর্জি ছিল, কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে সারা রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট হোক। গোটা রাজ্যের ক্ষেত্রে সেই নির্দেশ না দিলেও যেসব এলাকা স্পর্শকাতর, সেইসব এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার নির্দেশ দিয়েছে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ।
তবে, রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের ওপর কোনও হস্তক্ষেপ করল না হাইকোর্ট। কমিশনের বিজ্ঞপ্তিই বহাল রাখা হল। মনোনয়নের দিন বা সময়সীমা বাড়ানো হবে কি না, সেটাও কমিশনের ওপরেই ছেড়ে দিল আদালত।
হাইকোর্ট আরও বলেছে, কেন্দ্র সরকারকে অবিলম্বে রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠাতে হবে। তারা রাজ্য পুলিশের সঙ্গে মিলে কাজ করবে। তারপর নির্বাচন কমিশন পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে দেখবে। প্রয়োজন পড়লে আরও কেন্দ্রীয় বাহিনী আনাতে পারে তারা।
আদালতের নির্দেশনামায় বলা হয়েছে, স্পর্শকাতর বুথগুলিতে সিসি ক্যামেরা রাখতে হবে। সেইসব বুথের সমস্ত ফুটেজ সংরক্ষিত রাখতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমস্ত বিষয় মুখ্যসচিব ও রাজ্য পুলিশের ডিজিকে তত্ত্বাবধান করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। তবে পঞ্চায়েত ভোট পিছোচ্ছে না। পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী ৮ জুলাইতেই ভোটগ্রহণ হবে। আদালত বলেছে, যদি কমিশন চায় তাহলে মনোনয়নের সময়সীমা বাড়াতে পারে।
হাইকোর্টের রায় এক নজরে:
কমিশন স্বতন্ত্র স্বাধীন সংস্থা। তাই মনোনয়ন নিয়ে যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেবে কমিশনই। এমনটাই জানাল আদালত। মনোনয়নের সময়সীমা বাড়ানোর আর্জি জানিয়েছিলেন বিরোধীরা।
অনলাইনে মনোনয়ন জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরুর আর্জি জানানো হয়েছিল। আদালতের নির্দেশ, সে বিষয়ে কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।
সব পোলিং স্টেশনে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগাতে হবে। যেখানে সম্ভব সেখানে হবে না সেখানে ভিডিয়োগ্রাফি বা লাইভ স্ট্রিমিং করতে হবে।
যেখানে হিংসার পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে, সেখানে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিতে হবে হচ্ছে। কমিশনকে আদালতের নির্দেশ,পোলিং অফিসারকে যথাযথ নিরাপত্তা দিতে হবে ৷
যদি কোথাও সম্ভব না হয় তাহলে রাজ্য পুলিশকে তার দায়িত্ব নিতে হবে। যদি মানা না হয় তাহলে কড়া পদক্ষেপ করার কথাও বলা হয়েছে আদালতের রায়ে।
তিন স্তরের গনণা একসঙ্গে হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে রায়ে। এই আর্জি জানিয়েছিলেন মামলাকারীরা।
নির্বাচন কমিশনের ভয়মুক্ত পরিবেশে ভোট করানো উচিত। কমিশনের উচিত কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা। রাজ্য পুলিশের ঘাটতিও রয়েছে। তাই পর্যাপ্ত নিরাপত্তার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রয়োজন বলে মনে করা হচ্ছে। কেন্দ্র সরকারের উচিত রাজ্য যা বাহিনী চাইবে তা দেওয়ার।
মনোনয়নের সময়সীমা নিয়ে আদালত কোনও মতামত দেবে না।
চুক্তিভিত্তিক কর্মী এবং এনসিসি ছেলেদের চতুর্থ পোলিং অফিসার হিসাবে কাজে লাগাতে পারে রাজ্য।
স্পর্শকাতর এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা উচিত কমিশনের।কেন্দ্রীয় বাহিনীর খরচ রাজ্য দেবে না। কেন্দ্রকেই দিতে হবে।
বিরোধী দলনেতা তথা মামলাকারী শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “ডিভিশন বেঞ্চ আইনকে সম্মান করে যে রায় দিয়েছেন, তাকে আমি স্বাগত জানাই। আদালতের রায়ে শান্তিপূর্ণ, মৃত্যুহীন ভোটের কথা বলা হয়েছে।”