PANCHAYAT ELECTION 2023 : পঞ্চায়েতে ব্যালটে নবজোয়ার,পদ্মে কাঁটা

0
590

দেশের সময়: পঞ্চায়েতে ব্যালটে নবজোয়ার। পদ্মে কাঁটা। সেমি ফাইনালে ব্যাকফুটে গেরুয়া শিবির। ফলে লোকসভা ভোটের আগে উদ্বেগে বিজেপি। গত লোকসভা ভোটে ১৮টি আসনে জিতেছিল পদ্ম পার্টি। এবার ৩৫টি আসনের টার্গেট বেঁধে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। কিন্তু সেই লক্ষ্যমাত্রা ছোঁয়া তো দূরঅস্ত, পঞ্চায়েতের ফল যদি প্রতিফলিত হয়, লোকসভায় এ রাজ্যে বিজেপি দুই অঙ্কে পৌঁছতে পারবে কি না তা নিয়েও সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

পরিসংখ্যান বলছে, পঞ্চায়েত নির্বাচনে দলগতভাবে প্রাপ্ত ভোটের নিরিখে রীতিমতো চাপে রয়েছেন বাংলার বিজেপি সাংসদরা। সবচেয়ে ‘খারাপ’ অবস্থা খোদ দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। মোটেই স্বস্তিতে নেই দলের সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ, লকেট চট্টোপাধ্যায়, সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া ও কুনার হেমব্রম। এই পাঁচ সাংসদের লোকসভা ক্ষেত্রের শহর ও গ্রামীণ দু’ধরনের এলাকা রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট গ্রামীণ এলাকায় পঞ্চায়েত ভোটের যে ফল, তাতে বিজেপি কার্যত ধরাশায়ী। গত লোকসভায় বড় ব্যবধানে জিতলেও পঞ্চায়েত ভোটের ফলে শুয়ে পড়ার মতো অবস্থা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক, শান্তনু ঠাকুর, জন বারলা ও সুভাষ সরকারের। দার্জিলিংয়ের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তারও অবস্থা ভালো হয়। কারণ, অনীত থাপা ও তৃণমূলের জোট কপালে ভাঁজ ফেলে দিয়েছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোটকে। তুলনামূলকভাবে ভালো অবস্থায় রয়েছেন বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ ও জগন্নাথ সরকার।

পঞ্চায়েত ভোটে নিজের জেলা দক্ষিণ দিনাজপুরে মাটি কামড়ে পড়েছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তবুও তিনি নিজের দলের ভরাডুবি ঠেকাতে ব্যর্থ। পুরসভার মতো পঞ্চায়েতের ফলেও মুখ পুড়ল তাঁর। জেলায় হাতে থাকা পঞ্চায়েতগুলিতেও ফল এতটাই খারাপ হয়েছে যে, সেগুলি হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে বিজেপির। বালুরঘাট ব্লকে সুকান্তর গড়ে একাধিক পঞ্চায়েত পদ্ম পার্টির দখলে ছিল। কিন্তু এবারের ভোটে ওইসব পঞ্চায়েতে কার্যত ধুয়েমুছে সাফ হয়ে গিয়েছে বিজেপি। দখল নিয়েছে তৃণমূল।

এরই জেরে আরও একবার বিজেপির সাংগঠনিক দুর্বলতা সামনে এসেছে। যদিও হারের সাফাই দিতে গিয়ে তৃণমূলের সন্ত্রাস ও তাদের ছাপ্পা ভোটকেই দায়ী করেছেন গেরুয়া শিবিরের নেতারা। সুকান্তর দাবি, এবার পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূল কোটিপতিদের টিকিট দিয়েছে। তাঁরা মদ-মাংস-টাকা বিলি করেছেন। বিজেপি প্রার্থীদের টাকা নেই। তার উপর যোগ হয়েছে তৃণমূলের সন্ত্রাস। গণনাকেন্দ্রেও ব্যালট লুট হয়েছে। 

প্রশাসনিক আধিকারিকদের একাংশও এতে মদত দিয়েছেন। তারই জেরে বহু জায়গায় জেতার মতো পরিস্থিতিতে থেকেও হেরে যেতে হয়েছে বিজেপিকে। এনিয়ে আদালতে যাবেন তাঁরা। যদিও তৃণমূলের পাল্টা বক্তব্য, ভোটের দিন গঙ্গারামপুরে সুকান্ত মজুমদার নিজেই অশান্তি করেছেন। বালুরঘাটে কোনও গণ্ডগোল হয়নি। কিন্তু জিততে পারেনি বিজেপি। 

২০১৮ সালের হিসেব বলছে, দক্ষিণ দিনাজপুরে ৬৪টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ১২টিতে বোর্ড গঠন করে বিজেপি। ২০১৯ সালে লোকসভায় জয়ী হন সুকান্ত মজুমদার। বিধানসভা নির্বাচনেও ছ’টির মধ্যে তিনটিতে জেতে গেরুয়া পার্টি। বালুরঘাট বিধানসভা এলাকাতেই বাড়ি সুকান্ত মজুমদারের। বিধানসভায় এখানে জয়ী হন বিজেপি প্রার্থী, অর্থনীতিবিদ অশোক লাহিড়ি। এরপর থেকেই বিজেপির রাজ্য সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন সুকান্ত। কিন্তু তারপরও পঞ্চায়েতে নিজের গড়ে বিজেপির হার ঠেকাতে ব্যর্থ তিনি। এবারের ফলে বালুরঘাটের পতিরাম পঞ্চায়েত হাতছাড়া হয়েছে বিজেপির। বোল্লা ও চকভৃগুতেও গতবার জিতে বোর্ড গঠন করেছিল পদ্ম পার্টি। এবার সেখানেও পরাজয় হয়েছে।

বিতর্কিত ও শক্তিশালী ডাঙা ও অমৃতখণ্ড পঞ্চায়েতও ধরে রাখতে পারেনি বিজেপি। গোপালবাটি পঞ্চায়েতের দখলও চলে গিয়েছে তৃণমূলের হাতে। এছাড়াও আরও অনেক পঞ্চায়েতেই ধরাশায়ী হয়েছে বিজেপি।

উত্তরবঙ্গে জলপাইগুড়ি জেলাতেও রয়েছে বিজেপি সাংসদ। কিন্তু ওই জেলাতেও জেলা পরিষদে এবার নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে তৃণমূল। ২৪টি আসনের সবক’টিতেই জয় ছিনিয়ে নিয়েছে জোড়াফুল। তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, এবার আমাদের টার্গেট চব্বিশের লোকসভা ভোট। কোচবিহারে ছ’টি বিধানসভা ও একটি লোকসভা আসন বিজেপির দখলে রয়েছে। কিন্তু তারপরও পঞ্চায়েত ভোটে নিজেদের সেই ফল ধরে রাখতে পারেনি গেরুয়া শিবির। অন্যান্য জেলার মতো এখানেও ভরাডুবি হয়েছে পদ্মের। জেলা পরিষদের দু’টি আসনে বিজেপির জয় এলেও ১২টি পঞ্চায়েত সমিতি ও অধিকাংশ পঞ্চায়েতই দখল করেছে রাজ্যের শাসকদল। ফলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের জেলায় বিজেপির সংগঠন যে একেবারেই ঢিলেঢালা তা আরও একবার স্পষ্ট হল, এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। যদিও এই হারের পিছনে সন্ত্রাসকেই দায়ী করেছে বিজেপি নেতৃত্ব।

কোচবিহারে জেলা পরিষদের ৩২টি আসনে জিতেছে তৃণমূল। তথ্য বলছে, এবারের পঞ্চায়েত ভোটে কোচবিহারে গ্রাম পঞ্চায়েতের ২ হাজার ৫০৭টি আসনের মধ্যে ৩৭০টি বাদে সবক’টিতেই প্রার্থী দিয়েছিল বিজেপি। একইভাবে পঞ্চায়েত সমিতির ৩৮৩টি আসনের মধ্যে ৩৫৫টিতে এবং জেলা পরিষদের ৩৪টি আসনের মধ্যে ৩৩টিতে প্রার্থী দিয়েছিল তারা। তৃণমূলের বক্তব্য, সন্ত্রাস হয়ে থাকলে এত আসনে কী করে প্রার্থী দিতে পারল বিজেপি? আসলে ভোটে হেরে এখন ওরা অজুহাত খুঁজছে। বিজেপির বেহাল অবস্থা আলিপুরদুয়ারেও। এই জেলাতেও বিরোধীশূন্য হয়েছে জেলা পরিষদ। জেলা পরিষদের ১৮টি আসনের সবক’টিতেই জয় পেয়েছে তৃণমূল। গত ভোটে বিজেপি জেলা পরিষদের একটি আসনে জিতেছিল। কিন্তু এবার সবুজ ঝড়ে তারা কার্যত নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে।  

মালদহ জেলা পরিষদে তৃণমূল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও দুই মন্ত্রীর কেন্দ্রে দলের বিপর্যয় ভাবাচ্ছে জোড়াফুলকে। মালদহে জেলা পরিষদের ৪৩টি আসনের মধ্যে ৩৪টিতে জিতেছে তৃণমূল। কংগ্রেস জিতেছে পাঁচটিতে, চারটিতে জয় পেয়েছে বিজেপি। একসময় এই জেলায় জেলা পরিষদে ক্ষমতায় ছিল বামেরা। কিন্তু এবার তারা শূন্য। জেলা পরিষদে সাফল্য পেলেও পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিতে বেগ পেতে হয়েছে রাজ্যের শাসকদলকে। জেলার দুই মন্ত্র্রী সাবিনা ইয়াসমিন ও তাজমুল হোসেনের এলাকায় কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে তৃণমূল। যা কাঁটার মতো বিঁধছে জোড়াফুল শিবিরের কাছে। উঠছে প্রশ্ন।

মন্ত্রী তাজমুল হোসেনের ভাই ও তাঁর এক ঘনিষ্ঠ নেতা হেরে গিয়েছেন জেলা পরিষদে। তাঁর বিধানসভা ক্ষেত্রের মধ্যে হরিশ্চন্দ্রপুর-১ পঞ্চায়েত সমিতিতে বিরোধীদের থেকে একটি আসন কম পেয়েছে তৃণমূল। দলের নিচুতলার কর্মীদের সঙ্গে নেতৃত্বের দূরত্ব তৈরি হওয়ার কারণেই ভোটের ফল খারাপ হয়েছে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ। তবে উত্তর দিনাজপুর জেলায় পঞ্চায়েত ভোটে আধিপত্য বজায় রেখেছে জোড়াফুল।

জেলা পরিষদের ২৬টি আসনের মধ্যে ২৩টিতেই জয়ী হয়েছে তারা। অধিকাংশ পঞ্চায়েতও তাদের দখলে। পঞ্চায়েত সমিতিতে বিরোধীদের ক্লিন সুইপ অর্থাৎ ধুয়েমুছে সাফ করে দিয়েছে তৃণমূল। বিজেপির অবস্থা সবচেয়ে শোচনীয়। জেলা পরিষদে কংগ্রেস খাতা খুললেও পদ্ম পার্টি একটিও আসন পায়নি। বরং বিজেপির হাতে থাকা জেলা পরিষদের একটি আসন হাতছাড়া হয়েছে এবার। সিপিএম জেলা পরিষদের কোনও আসনেই জিততে পারেনি। 

উত্তর দিনাজপুর জেলায় ৯৮টি পঞ্চায়েত। এরমধ্যে ৭৫টিতে জিতেছে তৃণমূল। বিজেপি জিতেছে ৯টি পঞ্চায়েতে। বাকিগুলিতে টাই হয়েছে। সিপিএম ও কংগ্রেস পঞ্চায়েতের কিছু আসনে জয় পেলেও একটিও পঞ্চায়েতে তারা বোর্ড গঠন করার জায়গায় নেই। জেলায় ৯টি পঞ্চায়েত সমিতির সবক’টিই দখলে এসেছে তৃণমূলের। 

পঞ্চায়েত সমিতির ২৬৯টি আসনের মধ্যে মাত্র দু’টিতে জিতেছে সিপিএম। কংগ্রেস জিতেছে পঞ্চায়েত সমিতির ১২টি আসনে। বিজেপি জিতেছে ২৯টি আসনে। বাকিগুলিতে জিতেছে তৃণমূল। পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিতে ভালো ফল করতে না পারলেও জেলা পরিষদের ৬, ৭, ৮ নম্বর আসনে জয়ী হয়েছে কংগ্রেস। যা তাদের বাড়তি অক্সিজেন জোগাবে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।

তবে উত্তরবঙ্গে যে ফলের দিকে নজর ছিল সবার, সেটি দিনহাটার। এখানেই বাড়ি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের। লোকসভার আগে পঞ্চায়েতই ছিল তাঁর কাছে অগ্নিপরীক্ষা। কিন্তু সেই পরীক্ষায় ডাহা ফেল করলেন তিনি। নিজের ডেরাতেই মুখ থুবড়ে পড়ল তাঁর দল বিজেপি। দিনহাটা মহকুমার আটটি জেলা পরিষদ আসনে খাতাই খুলতে পারল না পদ্ম পার্টি। সবক’টি আসনই গিয়েছে রাজ্যের শাসকদলের দখলে। ৩৩টি পঞ্চায়েতের মধ্যে মাত্র তিনটিতে জিতে কোনওরকমে মুখরক্ষা করেছে গেরুয়া শিবির। তৃণমূলের দাবি, এটা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নবজোয়ারের সাফল্য। অভিষেক এই দিনহাটা থেকেই তাঁর নবজোয়ার কর্মসূচি শুরু করেছিলেন। ফলে এলাকার তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে একটা উন্মাদনা ছিল। যেভাবেই হোক অভিষেকের সম্মানরক্ষায় প্রাণপনে ভোটের ময়দানে লড়াই করেন তাঁরা। এরই সুফল মিলেছে ভোটবাক্সে।

যদিও বিজেপি নেতৃত্ব তা মানতে নারাজ। কোচবিহার দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক নিখিলরঞ্জন দে বলেছেন, কোনওভাবেই মানুষের প্রকৃত মতামত প্রতিফলিত হয়নি ভোটবাক্সে। দিনহাটা তৃণমূলের যে ফল হয়েছে, ওদের ছাপ্পাশ্রীর সৌজন্যে। মানুষ যেখানে নিজের ভোট নিজে দিতে পেরেছে, সেখানেই বিজেপি জিতেছে।

এদিকে নন্দীগ্রামে ১৯৫৬ ভোটে জয় নিয়ে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর গলায় এতদিন যে শ্লাঘা শোনা যেত, পঞ্চায়েতের ফল সামনে আসতেই তা যেন মিলিয়ে গিয়েছে। পরিবর্তে চওড়া হাসি তৃণমূলের মুখে। শুভেন্দুকে এখন তারা চোখা চোখা শব্দে বিঁধতে মরিয়া। ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটে ১৯৫৬ ভোটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারিয়েছিলেন শুভেন্দু। কিন্তু এবার পঞ্চায়েতের যে ফল সামনে এসেছে, তা হিসেব করলে দেখা যাচ্ছে, শুভেন্দুর নন্দীগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রে ১০ হাজার ৪৫৭ ভোটে বিজেপিকে পিছনে ফেলে দিয়েছে তৃণমূল। অর্থাৎ এই মুহুর্তে যদি নন্দীগ্রাম বিধানসভায় ভোট হয়, শুভেন্দু সাড়ে দশ হাজার ভোটে হারবেন, বলছেন তৃণমূলের নেতারা।

স্বাভাবিকভাবেই এই ফল শুভেন্দুর কাছে যথেষ্টই বিড়ম্বনার। ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, গ্রামীণ এলাকায় জেলা পরিষদ আসনের ভোটকে বিধানসভার ভোট হিসেবেই দেখা হয়। নন্দীগ্রাম বিধানসভা এলাকায় দু’টি ব্লক। জেলা পরিষদের আসন পাঁচটি। এর মধ্যে নন্দীগ্রাম ১ ব্লকে তিনটি আসনের সবক’টিতেই জিতেছে তৃণমূল। নন্দীগ্রাম ২ ব্লকের দু’টি আসনে জিতেছে বিজেপি। দ্রুত এই ব্যর্থতা সামলে উঠতে না পারলে লোকসভায় বিজেপিকে যে যথেষ্টই বেগ পেতে হবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। নন্দীগ্রামে দলের তরফে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুনাল ঘোষ। তাঁর কথায়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভরসা রেখেছিলেন। অভিষেক কাজ করার সাহস জুগিয়েছেন। ওঁদের কাছে কৃতজ্ঞ। মানুষের জয় হয়েছে নন্দীগ্রামে। বিধানসভায় লোডশেডিংয়ের রেজাল্টের জবাব পেয়েছে বিজেপি।

মতুয়া ভোটেও যে বিজেপির রাশ আলগা হয়েছে, এবারের পঞ্চায়েতের ফল তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। গোটা রাজ্যে বিপর্যস্ত হলেও গত বিধানসভা ভোটে মতুয়া প্রভাবিত এলাকায় নিজেদের ভোটব্যাঙ্ক অটুট রাখতে পেরেছিল বিজেপি। সেবার জোড়াফুলের হাতে থাকা বেশ কয়েকটি আসনও ছিনিয়ে নিয়েছিল তারা। কিন্তু এবারের পঞ্চায়েত ভোটে ধস নেমেছে বিজেপির সেই ভোটব্যাঙ্কেই। যা চিন্তা বাড়িয়েছে গেরুয়া শিবিরের নেতাদের। বিশেষ করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের। পুরভোটের ফলই আভাস দিয়েছিল, মতুয়াদের মন আর শুধু বিজেপির দিকে নয়, তৃণমূলের দিকেও ধাবমান। পঞ্চায়েতের ফল চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, মতুয়া ভোট নিয়ে বিজেপির রক্তচাপ বৃদ্ধির যথেষ্টই কারণ রয়েছে। এবং এটা যে কতটা অ্যালার্মিং, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে শান্তনু ঠাকুরের নিজের বুথেই বিজেপির পরাজয়ে। যদিও তাঁর সগর্ব দাবি, মতুয়া ভোট তাঁদের সঙ্গেই রয়েছে। নদীয়া, উত্তর ২৪ পরগনা, দুই দিনাজপুর সহ উত্তরবঙ্গের বেশ কিছু এলাকায় মতুয়া ভোট রয়েছে।

২০০৮ সালের পঞ্চায়েত ভোট থেকে মতুয়ারা বামেদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেন। ২০১০ সালের পুরভোটে দেখা যায়, শহরাঞ্চলের মতুয়ারা তৃণমূলের দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছেন। পরের বছর অর্থাৎ ২০১১ সালে জোড়াফুল শিবিরে মতুয়া ভোটের জোয়ার আসে। মতুয়া প্রভাবিত বেশিরভাগ বিধানসভা কেন্দ্রই দখলে আসে তৃণমূলের। তখন থেকেই মতুয়াদের নিয়ে শুরু হয়ে যায় দড়ি টানাটানি। কখনও ঠাকুরনগর ঠাকুরবাড়িতে ছুটে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, কখনও আবার এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরা এসে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, নাগরিকত্ব আইন চালু করে মতুয়াদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। অন্যদিকে, বিজেপির ‘ভাঁওতাবাজি’ তুলে ধরে উন্নয়নকে সামনে রেখে মতুয়াদের মন পাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করেছে তৃণমূল। আর এতেই এবারের পঞ্চায়েতের ফল স্পষ্ট করে দিয়েছে, মতুয়াদের মন আর এক জায়গায় নেই। দুই ফুলের দিকেই তা ধাবমান।

তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিশ্বজিৎ দাসের দাবি, আগামী লোকসভায় শান্তনু ঠাকুর যদি বিজেপির প্রার্থী হন, তা হলে তাঁকে অন্তত তিন লক্ষ ভোটে হারাব।

Previous articleDesher Samay epaper দেশের সময় ই পেপার
Next articleGold price:সোনার মূল্য বৃদ্ধির গ্রাফকে নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়োজন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here