
পহেলগাঁও কাণ্ডের পর পাকিস্তানের সঙ্গে টানাপড়েনের আবহে কয়েকটি রাজ্যকে আপৎকালীন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে মহড়ার নির্দেশ দিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। আগামী ৭ মে, অর্থাৎ বুধবার মহড়া চালাতে বলা হয়েছে রাজ্যগুলিকে। একটি সরকারি সূত্রের দাবি, রাজস্থান, গুজরাত, পঞ্জাব এবং জম্মু-কাশ্মীরের সিমান্ত এলাকায় এই মহড়া চালানো হতে বারে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, সব মিলিয়ে দেশের ২৪৪টি জেলায় এই মহড়া চলবে। মহড়া চলবে গ্রামীণ এলাকাতেও।
২২ এপ্রিল পাহেলগামে নৃশংস জঙ্গি হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনার আবহে ৭ মে সিভিল ডিভেন্সকে মক ড্রিল করানোর নির্দেশ দিল কেন্দ্র। সব রাজ্যকে দেওয়া কেন্দ্রের এই অ্যাডভাইসরি নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছে। ওই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, সাধারণ নাগরিক, ছাত্রদের মক ড্রিল করাতে হবে। এয়ার রেড সাইরেনের এবং ব্ল্যাক আউটের জন্য প্রস্তুত থাকার কথাও বলা হয়েছে।
সাধারণত যুদ্ধের সময়ে বা যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসাবে ‘ব্ল্যাকআউট’ করা হয়। এলাকার সমস্ত আলো বন্ধ করে দেওয়া হয়, যাতে শত্রুপক্ষ বিমানহানা করতে না পারে। ঘরের আলো যাতে বাইরে থেকে দেখা না যায়, বাসিন্দাদের সে দিকে নজর রাখতে বলা হয়।
সোমবার কেন্দ্রীয় সরকারের এহেন নির্দেশের পরই ফিরোজপুর, পাঞ্জাবে ব্ল্যাক আউটের মক ড্রিল শুরু হয়েছে। তবে কি পাকিস্তানকে প্রত্যাঘাত সময়ের অপেক্ষা, সেই নিয়েই জল্পনা শুরু হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক যে যে বিষয়ে মহড়া দিতে বলেছে, তার মধ্যে রয়েছে— বিমান হামলার সতর্কতা সাইরেন ব্যবস্থাকে সক্রিয় করা, নাগরিকদের সুরক্ষার স্বার্থে সাধারণ মানুষ, বিশেষত পড়ুয়াদের ভূমিকা কী হবে, হঠাৎ ব্ল্যাকআউট হলে কী করণীয় এবং জরুরি পরিস্থিতিতে কী ভাবে দ্রুত উদ্ধারকাজ চালানো হবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, মহড়ায় অংশ নেবেন জেলাশাসক-সহ জেলা প্রশাসনের অন্যান্য আধিকারিক, নাগরির সুরক্ষা কর্মী, হোমগার্ডেরা। এ ছাড়াও মহড়ায় অংশ নিতে বলা হয়েছে এনসিসি ক্যাডেট, নেহরু যুব কেন্দ্র সংগঠনের সদস্য এবং স্কুল-কলেজের পড়ুয়াদের।
পহেলগামের বৈসরন উপত্যকায় জঙ্গি হানার পর এদিন প্রথম লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীকে জরুরি বৈঠকে ডেকে পাঠান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সন্ধেবেলা পিএমওতে আসেন রাহুল। সেই বৈঠকে হাজির হন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালও।

গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় ২৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন। বেশির ভাগই পর্যটক। এই নিয়ে পাকিস্তানের দিকে আঙুল তুলেছে ভারত। তার পরেই সে দেশের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করেছে নয়াদিল্লি। সিন্ধু জলচুক্তি বাতিল করা হয়েছে। সে দেশের নাগরিকদের স্বল্পমেয়াদি এবং মেডিক্যাল ভিসাও বাতিল করা হয়েছে। পাকিস্তানও পাল্টা কিছু পদক্ষেপ করেছে।
এই আবহে গত কয়েক দিনে বেশ কয়েকটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সোমবারও প্রধানমন্ত্রী উচ্চপর্যায়ের একটি নিরাপত্তা সংক্রান্ত বৈঠক করছেন। সান্ধ্যকালীন এই বৈঠকে রয়েছেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল, স্বরাষ্ট্র সচিব গোবিন্দ মোহন।
এদিন সকালেও প্রতিরক্ষা সচিব রাজেশকুমার সিং প্রধানমন্ত্রীকে বর্তমান পরিস্থিতির কথা জানিয়েছেন। রোববার বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল এপি সিং এবং নৌবাহিনীর প্রধান দেখা করেন মোদীর সঙ্গে।
প্রসঙ্গত, রবিবার রাত ৯টা নাগাদ পঞ্জাবের ফিরোজ়পুর ক্যান্টনমেন্টে সব আলো নিবিয়ে ‘ব্ল্যাকআউট ড্রিল’ করেছে সেনাবাহিনী। স্থানীয় বাসিন্দাদের আগে থেকেই এ নিয়ে সতর্ক করে বলা হয়েছিল, তাঁরা যেন আলোকিত বা দূর থেকে চোখে পড়ে এমন কোনও বস্তু বা আলো ব্যবহার না করেন ওই সময়টুকু। সাধারণত যুদ্ধের সময় বিপক্ষের নজর এড়াতে বা বিপক্ষের বায়ুসেনাকে বিভ্রান্ত করতে বিস্তীর্ণ এলাকার আলো নিবিয়ে ‘ব্ল্যাকআউট’ করে দেওয়া হয়। এমনিতেই গত ২২ এপ্রিল থেকে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করা হয়েছে। রবিবার রাতে ‘ব্ল্যাকআউট’ ড্রিলের পরে বাসিন্দারা স্বাভাবিক ভাবেই আরও সতর্ক হয়ে গিয়েছেন।
পহেলগাঁও কাণ্ডের পর শুধু জঙ্গি নয়, যারা সন্ত্রাসবাদের মদত দেয়, তাদেরও চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার বার্তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। তাঁর কথায়, ‘‘যারা বন্দুকের ট্রিগার চেপেছিল এবং যারা সেই ষড়যন্ত্রে শামিল ছিল— কাউকে রেয়াত করা হবে না!’’ এ-ও বলেছেন, ‘‘জঙ্গি হামলার কঠোর জবাব দেবে ভারত। আমার বিশ্বাস পহেলগাঁওয়ের ঘটনা দেখে প্রত্যেক ভারতীয়ের রক্ত ফুটছে।’’ পহেলগাঁওয়ের সন্ত্রাসবাদী হামলার জবাব কড়া ভাবেই দেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহও। রবিবার দিল্লিতে আয়োজিত সংস্কৃতি জাগরণ মহোৎসব অনুষ্ঠানে রাজনাথ সিংহ বলেন, ‘‘আপনারা আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে জানেন, ওঁর কাজের ধরন ও দৃঢ়তার সঙ্গেও সকলে পরিচিত। আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই যে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে যা আপনারা চাইছেন, তা নিশ্চিত ভাবেই হবে।’’

পাশাপাশি প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে পহেলগাঁও হামলার কড়া জবাব দেওয়া তাঁর দায়িত্বের মধ্যে পড়ে বলেও দাবি করেছেন রাজনাথ। তিনি বলেন, ‘‘প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে আমার দায়িত্ব হল সেনার সঙ্গে মিলে সীমান্তকে সুরক্ষিত রাখা এবং যারা আমাদের দেশে হামলা করার সাহস দেখায়, তাদের যোগ্য জবাব দেওয়া।’’
