দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ‘এক দেশ, এক ভোট’ বিল কার্যকর করার পথে আরও এক ধাপ এগোল কেন্দ্র। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় সবুজ সঙ্কেত দেওয়া হয়েছে এই নীতিতে। সূত্রের খবর, সংসদের চলতি শীতকালীন অধিবেশনেই এই বিষয়ে বিল পেশ করতে পারে কেন্দ্র। ‘এক দেশ, এক ভোট’ চালু করার জন্য বুধবারও জোরদার সওয়াল করেছেন কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান। ঘন ঘন নির্বাচন হওয়ার কারণে দেশের উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে বলে মনে করছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার ক্যাবিনেট বৈঠকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদসংস্থা পিটিআই। পিটিআই এও জানিয়েছে, সংসদের চলতি অধিবেশনে সরকারের অন্যতম অ্যাজেন্ডাই হল এই বিল পেশ। সংসদের চলতি শীতকালীন অধিবেশন অচল থাকলে অথবা আগামী বছরের বাজেট অধিবেশনে বিলটি পেশ করা হতে পারে।
প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বাধীন একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী সেপ্টেম্বরে এই প্রস্তাব মন্ত্রিসভা অনুমোদন করে। বুধবার কোবিন্দ বলেন, “এক দেশ, এক ভোট” উদ্যো গ একেবারেই জাতীয় স্বার্থে, এটি কোনও নির্দিষ্ট দলের জন্য নয়। তিনি এও বলেন যে অর্থনীতিবিদদের মতে, এই প্রস্তাব কার্যকর হলে দেশের জিডিপি ১ থেকে ১.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে।
‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ ব্যবস্থা চালুর ব্যাপারে মোদী সরকারের যুক্তি, এই ব্যবস্থা চালু হলে ভোট প্রক্রিয়ার জন্য যে বড় অঙ্কের খরচ হয়, তা কমে যাবে। ভোটের আদর্শ আচরণবিধির জন্য বার বার সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ থমকে থাকবে না এবং তার সঙ্গে সরকারি কর্মীদের উপর থেকেও ভোটার তালিকা তৈরি ও ভোট সংক্রান্ত নানা কাজকর্মের চাপ কমবে।
কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানও এই প্রস্তাবকে সমর্থন করেছেন। তিনি বলেন, “বারবার নির্বাচন হলে প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী, মন্ত্রীরা, সাংসদ এবং বিধায়কদের প্রচারের জন্য সময় ব্যয় করতে হয়, যা উন্নয়নমূলক কাজ থমকে দেয়।”
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রস্তাবটিকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, “এক দেশ, এক নির্বাচন প্রস্তাবে হাই-লেভেল কমিটির সুপারিশ মন্ত্রিসভা গ্রহণ করেছে। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দজিকে এই উদ্যোগের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আমি অভিনন্দন জানাই। এটি আমাদের গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী এবং অংশগ্রহণমূলক করে তুলবে।”
উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি প্রাথমিক পর্যায়ে লোকসভা এবং রাজ্য বিধানসভা নির্বাচন একযোগে করার সুপারিশ করেছে। পাশাপাশি, স্থানীয় নির্বাচনের সময়সীমা নির্ধারণের জন্য ১০০ দিনের মধ্যে সমন্বয় করার কথা উল্লেখ করেছে।
সূত্রের খবর, এই বিলটি নিয়ে বিভিন্ন ধরনের চর্চা হতে পারে— তা আঁচ করে আগাম পরিকল্পনাও সেরে নিয়েছে কেন্দ্র। তাই এটি নিয়ে আলোচনার পথ খোলা রাখতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার। সে ক্ষেত্রে ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ বিলটি খতিয়ে দেখতে যৌথ সংসদীয় কমিটিতে (জেপিসি) পাঠানোর কথাও ভাবছে তারা। সেখানে আলোচনার মাধ্যমে একটি ঐকমত্য তৈরির চেষ্টা করতে পারে কেন্দ্র।
তবে সন্দেহ নেই এর বাস্তবায়ণ মোটেও সহজ নয়। কারণ, কংগ্রেস, তৃণমূল, সপা, ডিএমকে-র মতো সব বিরোধী দল এর বিরোধিতা করছে। সুতরাং বৃহত্তর ঐক্যমত না গড়ে তুলে এই নীতির বাস্তবায়ন করাটা আদৌ সরকারের পক্ষে সম্ভব কিনা সেই প্রশ্নও রইল।