দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ শনিবার বিকেলে বালেশ্বরের কাছে করমন্ডল এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এদিন চারটে নাগাদ প্রধানমন্ত্রীর চপার নামে সেখানে। হেলিপ্যাডে নেমে তিনি প্রথমেই সেখান থেকে পৌঁছে যান ঘটনাস্থলে। খতিয়ে দেখেন উদ্ধারকাজ। সেসময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণো।
এলাকা পরিদর্শনের পর রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণো এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের সঙ্গেও কথা বলেন তিনি। কথা হয় রেলের পদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গেও। সেখান থেকেই বালেশ্বর হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা দেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে গিয়ে আহতদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। কথা বলেন ডাক্তারদের সঙ্গেও।
এরপর প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এটা ভীষণই বেদনাদায়ক ঘটনা। আহতদের চিকিৎসার জন্য সরকার কোনও কসুর করবে না। এই দুর্ঘটনা কার বা কাদের গাফিলতিতে, তা তদন্তসাপেক্ষ। আমরা সবদিক খতিয়ে দেখছি। দোষীদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। রেলকর্মীরা ট্র্যাক মেরামতের কাজ শুরু করেছে। আমি হাসপাতালে গিয়ে আহতদের সঙ্গে দেখা করেছি।”
উল্লেখ্য, ওই হাসপাতালে কয়েকশ আহত যাত্রী ভর্তি রয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, বিহার-সহ বিভিন্ন রাজ্যের মানুষ রয়েছেন তাঁদের মধ্যে। তবে শুধু বালেশ্বর হাসপাতাল নয়, সেখানে আরও কয়েকটি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন আহতরা। প্রধানমন্ত্রী সেখানে পৌঁছনোর পরই হাসপাতাল চত্বর ঘিরে ফেলে পুলিশ। বাড়ানো হয় নিরাপত্তা। সূত্রের খবর, মোদীর সঙ্গে সেখানে উপস্থিত ছিলেন রেলের বহু উচ্চপদস্থ আধিকারিকও।
অন্যান্য হাসপাতালে যারা ভর্তি আছেন, তাঁদেরও খোঁজ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এখান থেকেই কনভয় নিয়ে মোদী আবার হেলিপ্যাডের উদ্দেশে রওনা দেবেন। তারপর হেলিকপ্টারে চেপে বেরিয়ে যাবেন। তবে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার জন্য দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন। এরমধ্যেই জানা গিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের বহু আহত বাসিন্দাকে চিকিৎসার জন্য এরাজ্যেও নিয়ে আসা হয়েছে। ডেবরার হাসপাতালে তাঁরা ভর্তি রয়েছেন।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার সন্ধে ৭টা নাগাদ ওড়িশার বালেশ্বরে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেস। দুপুর সওয়া ৩টে নাগাদ হাওড়ার অদূরে শালিমার স্টেশন থেকে ছেড়েছিল আপ করমণ্ডল এক্সপ্রেস। প্রায় ৪ ঘণ্টা পরে বালেশ্বরের বাহানগা বাজারের কাছে দুর্ঘটনার শিকার হয় ২৩ কামরার এই ট্রেনটি। এই প্রতিবেদন লেখার সময় বিকেল ৫:২০ মিনিট নাগাদ মৃতের সংখ্যা ২৯৫ বলে জানানো হয়।
এদিকে ওড়িশায় ট্রেন দুর্ঘটনার কারণ হিসাবে উঠে এল সিগন্যালের ত্রুটি। রেলের তরফে একটি যৌথ পরিদর্শন রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর ওই যৌথ রিপোর্টে সিগন্যালের ত্রুটির কথাই বলছেন রেল আধিকারিকেরা। তবে এটি প্রাথমিক রিপোর্ট। বিস্তারিত তদন্তের পর দুর্ঘটনার কারণ আরও স্পষ্ট হবে।
যৌথ পরিদর্শন রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘‘আপ মেন লাইনে সবুজ সিগন্যাল দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ট্রেনটি সেই লাইনে ঢোকেইনি। ট্রেন ঢুকেছিল লুপ লাইনে। সেখানে আগে থেকে একটি মালগাড়ি দাঁড়িয়ে ছিল। তার সঙ্গে সংঘর্ষে করমণ্ডল এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হয়।’’
রিপোর্টে আরও দাবি, ‘‘এর মাঝে ডাউন লাইন দিয়ে বালেশ্বরের দিকে যাচ্ছিল বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস। সেই ট্রেনের দু’টি বগি লাইনচ্যুত হয়।’’
কিন্তু মেন লাইনে সবুজ সিগন্যাল পাওয়া সত্ত্বেও করমণ্ডল এক্সপ্রেস কী ভাবে লুপ লাইনে ঢুকে পড়ল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। এ ক্ষেত্রে সিগন্যাল দেওয়ায় কোনও গোলমাল হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।