নীলাঞ্জনা হালদার , বনগাঁ: ছুটির দিন। মাংসের দোকানে ভালই ভিড় জমেছিল। আচমকা নেমে এল বিপদ। গাইঘাটা থানার চাঁদপাড়ায়, মাংসের দোকানের ওপর হঠাত্ই ভেঙে পড়ে একটি গাছের ডাল।
আহত হন ২ জন। ঘটনার পরই, রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ফেলে বিক্ষোভ দেখায় এলাকাবাসী৷ ক্রেনের সাহায্যে ধ্বংসস্তূপ থেকে রতন এবং স্নেহাংশুকে উদ্ধার করা হয়। তাঁদের বনগাঁ মহাকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তবে সেখানে তাঁদের মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
চাঁদপাড়া এলাকায় বিডিও অফিসের পাশে যশোর রোডের ধারে মুরগির মাংসের দোকান রয়েছে রতন মণ্ডল (৪৭) নামে স্থানীয় এক বাসিন্দার। রবিবার প্রতি দিনের মত দোকান খুলেছিলেন রতন। বেলা সাড়ে ১২ টা নাগাদ দোকানের ওপর হঠাত্ই ভেঙে পড়ে গাছের ডালটি। সেই সময় দোকানে রতন-সহ চার জন ছিলেন বলে জানা গিয়েছে পুলিশ সুত্রে৷
স্থানীয় বাসিন্দা বিমল বিশ্বাসের কথায়, ‘বাইক চালানোর সময় আওয়াজ শুনতে পাই। দেখি একটা মুরগির দোকানের তলায় চাপা পড়ে রয়েছে একজন। আমার মাথার ওপরেও পড়তে পারত।’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, চাঁদপাড়া বিডিও অফিসের পাশে মুরগির মাংসের দোকানটি একটি শিরিষ গাছের নিচে ছিল। এদিন ওই দোকানের উপর ভেঙে পড়ে শিরিষ গাছের বড় ডাল।
বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার তৃণমূল কংগ্রেসের বনগাঁ পুরসভার চেয়ারম্যান ও সভাপতি গোপাল শেঠ বলেন, ‘যে গাছ মারা গেছে, শুকিয়ে গেছে, সেগুলি কাটা নিয়ে কারও আপত্তি নেই। সেগুলি কাটা হচ্ছে না। কেন্দ্রের গাফিলতি।’ দীর্ঘ সময় পর পুলিশের হস্তক্ষেপে অবরোধ ওঠে।
এই রকম দুর্ঘটনা আগেও ঘটেছে। জীবন হানি ও গুরুতর জখম হয়েছেন অনেক মানুষ। ওই সড়কে চলাচলকারী দের বক্তব্য “আমরা এই রাস্তায় প্রাণ হাতে যাতায়াত করি, ঝড় বৃষ্টি হলে এই শুকনো ডাল গুলি হঠাৎ করেই ভেঙে জীবনহানির আশঙ্কা থাকে। আমরা তাই দাবি জানিয়েছিলাম বিভাগীয় কর্তৃপক্ষের কাছে।”
এই দাবিতে হয়েছিল পথ অবরোধও। বেশ কিছু দিন আগে যশোর রোড সম্প্রসারণের কাজ শুরু হলে, এই ডাল সনাক্তকরণ করে কাটা শুরু হয়েছিল কিন্তু তা মাঝপথে থমকে যায় পরিবেশ প্রেমী ও মানবাধিকার সংগঠনের প্রবল আপত্তি তে। মামলা দায়ের হয় আদালতে।
ওই সড়কে চলাচল করা যান বাহন চালক ও পথচারীদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ বিপজ্জনক ভাবে ঝুলতে থাকা শুকনো ডাল গুলি নিয়ে। সরকারী আইনি জট কাটিয়ে মাঝে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের উদ্যোগে যশোর রোডের দু পাশে থাকা মহীরুহ (রেইনট্রী )গুলির শুকনো ডাল কাটা। শুরও হয়েছিল কিছু দিন সেই কাজ চলার পর ফের তা বন্ধ হয়ে যায়৷।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত বছর বনগাঁয় শতাব্দী প্রাচীন গাছের শুকনো ডাল ভেঙ্গে পরে মৃত্যু হয়েছিল এক ট্রাক চালকের। তারপরই ,জাতীয় সড়ক দপ্তরের প্রতিনিধি ও বনগাঁ পৌরসভার সেই সময় পুরো প্রশাসক গোপাল শেঠ এর উপস্থিতিতে শুরু হয় এই বিপজ্জনক ডাল কাটার কাজ ৷
বনগাঁ পুরসভার চেয়ারম্যান গোপাল শেঠ বলেন, পুনরায় বিপজ্জনক ডাল কাটার কাজ আগামী সোমবার থেকে শুর করা হবে ৷ মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা যাবেনা ৷ “সাধারণ মানুষ যাতে বিপদের সম্মুখীন না হন তাই আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি। যশোর রোডের বারাসাত থেকে পেট্রাপোল পর্যন্ত প্রায় ৬০ কিলোমিটার রাস্তা ধরে এই গাছ রয়েছে, আপাতত পেট্রাপোল সীমান্ত থেকে গাইঘাটা পর্যন্ত গাছের শুকনো ডাল কাটার কাজ চলবে। আদালতকে কে মর্যাদা দিয়ে আইনত ভাবেই মৃতপ্রায় গাছের শুকনো ডাল কাটার প্রক্রিয়া চালু হচ্ছে আগামী সোমবার থেকে৷
বনগাঁ বিএস ক্যাম্প মোড়ের স্থানীয়ব্যাবসায়ীরা জানালেন পুরসভার এই কাজে তারা খুশী৷অনেকটাই দুঃশ্চিন্তা মুক্ত হলেন,তবে আগেও এই এলাকায় ডালকাটতে এসেছিলেন পুলিশ প্রশাসন কিন্তু যে ডালটি অর্ধেক কাটা অবস্থায় রয়েছে সেটি আরও বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে সেই ডালের নীচে বহু দোকান রয়েছে তাঁরা সব সময় আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে৷ একটু জোড়ে ঝড় বা হাওয়া উঠলেই দোকান ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে হয় তাঁদেরকে বলে জানান ব্যাবসায়ী প্রবীর ঘোষ৷
এ ব্যাপারে এপিডিআর এর পক্ষে মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর বনগাঁ শাখার সম্পদক অজয় মজুমদার বলেন, “শুকনো মরা ডাল কাটতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তবে সতর্ক থাকতে হবে যাতে কোনো সজীব ডাল যেন কাটা না পড়ে।” আমরা মানুষের অধিকারের স্বার্থে, জীবনের স্বার্থেই লড়াই করি। সেই দিক থেকে আমাদের দাবি ছিল, প্রাচীন এই গাছগুলোকে সম্পূর্ণ কেটে না ফেলে অপ্রয়োজনীয় অংশ বাদ দেওয়া যেতে পারে। কলকাতা হাইকোর্ট সেই মর্মে গাছ পরিচর্যার প্রয়োজনে বিপজ্জনক ডাল কাটার নির্দেশও দিয়েছে। ফলে পুরসভা সেই উদ্যোগ নিতেই পারে।
স্থানীয় মানুষ এই উদ্যোগ কে স্বাগত জানিয়ে সব রকমের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।