মহাকুম্ভগামী ট্রেন ধরার জন্য হুড়োহুড়ি। তাতেই দিল্লি রেলস্টেশনে প্রাণ হারালেন বহু মানুষ।
নয়াদিল্লি স্টেশনে শনিবার রাতে ঠিক কী হয়েছিল? এই নিয়ে প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবির সঙ্গে মিলছে না ভারতীয় রেলের বক্তব্য। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবিকে এক প্রকার খারিজই করে দিয়েছেন রেল কর্তৃপক্ষ। জানিয়েছেন, শনিবার সব ট্রেন সময়েই চলছিল। আগে থেকেই স্টেশনে ভিড় ছিল। ওই ভিড়ে ধাক্কাধাক্কিতে পদপিষ্ট হয়ে প্রাণ যায় পাঁচ শিশু, ১১ মহিলা-সহ ১৮ জনের। তীর্থযাত্রীদের নিরাপদ যাত্রা কেন সুনিশ্চিত করা হলো না তা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সমাজমাধ্যমে মমতা লেখেন, ‘দিল্লিতে পদপিষ্ট হয়ে ১৮ জনের প্রাণহানির ঘটনা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক। এই বেদনাদায়ক ঘটনা বুঝিয়ে দিয়েছে নাগরিকদের নিরাপত্তার দিকটি গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত ছিল।’
পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনায় নিহতদের পরিবারকে সমবেদনা জানিয়ে মমতা বলেন, ‘মহাকুম্ভে যাওয়া তীর্থযাত্রীদের যথাযথ সহায়তা এবং সুযোগ-সুবিধা দেওয়া উচিত ছিল। এই ধরনের যাত্রা নিরাপদ এবং সুসংগঠিত করা অপরিহার্য।’
https://x.com/MamataOfficial/status/1891059010293600261?t=V5eNiZyspPj3BkHAmlr7bg&s=19
প্রত্যক্ষদর্শীরা দাবি করেছেন, শনিবার রাতে নয়াদিল্লি স্টেশনের ১২ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে ছাড়ার কথা ছিল প্রয়াগরাজ স্পেশ্যাল ট্রেনটির। আচমকাই ঘোষণা করা হয় যে, সেই ট্রেন ১৬ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে ছাড়বে। তার পরেই ফুটব্রিজে ওঠার জন্য হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। সিঁড়িতে উঠতে গিয়ে অনেকেই পড়ে যান। রেলের তরফে এই দাবি খারিজ করা হয়েছে। উত্তর রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক হিমাংশুশেখর উপাধ্যায় জানান, স্টেশনে এমনিতেই খুব ভিড় ছিল। প্ল্যাটফর্মে লোকজন ছোটাছুটি করছিলেন। সে সময় একটি সিঁড়িতে পা হড়কে পড়ে যান এক যাত্রী। তার জেরে এই পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা।
উল্লেখ্য, দিল্লির ঘটনার পরেই কেন্দ্রকে বিঁধে মন্তব্য করেছেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী থেকে শুরু করে দিল্লির সদ্য প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী আতিশিও। রেলের ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে রাহুল বলেছেন, ‘এই ঘটনা রেলের ব্যর্থতা এবং এই সরকারের অসংবেদনশীলতার প্রমাণ।’ আতিশি বলেন, ‘মহাকুম্ভের পুণ্যার্থীদের নিয়ে এ ধরনের ঘটনা গ্রহণযোগ্য নয়। কেন্দ্রের সরকার ও উত্তরপ্রদেশের সরকার মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত নয়। প্রয়াগরাজেও কোনও সুব্যবস্থা নেই।’
নয়াদিল্লি স্টেশনের ঘটনার তদন্তের জন্য দুই সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে রেল। রেলের তরফে জানানো হয়েছে, ওই কমিটিতে রয়েছেন উত্তর রেলের প্রিন্সিপাল চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার নরসিংহ দেও, উত্তর রেলের প্রিন্সিপাল চিফ সিকিউরিটি কমিশনার পঙ্কজ গঙ্গাওয়ার। নতুন তৈরি এই কমিটি স্টেশনের সব সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে রাখার নির্দেশ দিয়েছে।
রেলের তরফে জানানো হয়েছে, নয়াদিল্লি স্টেশনের ১৩ এবং ১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মে ভিড় ছিল খুব বেশি। সেখানে দু’টি ট্রেন ধরার জন্য দাঁড়িয়েছিলেন যাত্রীরা। একটি মগধ এক্সপ্রেস, অন্যটি ছিল জম্মুগামী ট্রেন। জম্মুগামী ট্রেনটি দেরিতে চলছিল। এই পরিস্থিতিতে শনিবার রাত ১০টা ১০মিনিট নাগাদ প্রয়াগরাজ স্পেশাল নামে বিশেষ ট্রেনটি ১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে ছাড়ার কথা ছিল। ট্রেন ছাড়ার সময় এগিয়ে আসতে স্টেশনে জড়ো হতে থাকেন বহু যাত্রী। রেলের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, মাঝের সেই সময়ে কুম্ভে যাওয়ার জন্য প্রায় হাজার জেনারেল টিকিট বিক্রি হয়। এর থেকে বোঝা যায়, কতটা ভিড় হয়েছিল। এমনটাই দাবি রেলের একটি সূত্রের। উত্তর রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক হিমাংশুশেখরের কথায়, ‘‘কোনও ট্রেন বাতিল হয়নি। ট্রেন প্রবেশের প্ল্যাটফর্মও বদল করা হয়নি। সব ট্রেন সময়েই চলছিল।’’