প্রতি ঘণ্টায় ১৫০০ জেনারেল টিকিট বিক্রি! কোন ট্রেনে এত যাত্রী উঠতে পারত? প্রশ্নের মুখে রেল
কুম্ভমেলার পর এবার নয়াদিল্লি রেল স্টেশনে ভয়াবহ হুড়োহুড়ির জেরে পদপিষ্টের ঘটনা। শনিবার রাতে কুম্ভগামী ট্রেনে ওঠার সময় চরম বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়, যার ফলে প্রাণ হারান অন্তত ১৮ জন। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, মৃতদের মধ্যে রয়েছেন ৯ জন মহিলা, ৫ শিশু ও ৪ জন পুরুষ। আহত হয়েছেন বহু যাত্রী। প্রশ্ন উঠছে— নয়াদিল্লির মতো ব্যস্ত রেল স্টেশনে কীভাবে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটল?
ঠিক কী হয়েছিল স্টেশনের ১৩ ও ১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মে?
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মহাকুম্ভগামী বিশেষ ট্রেনের ঘোষণা হতেই নয়াদিল্লি স্টেশনের ১৩ ও ১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মে যাত্রীদের ঢল নামে। ট্রেনে ওঠার জন্য হুড়োহুড়ি শুরু হতেই কয়েকজন যাত্রী ভিড়ের চাপে পড়ে যান, আর তাঁদের মাড়িয়ে এগিয়ে যান বাকিরা। মুহূর্তেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। খবর পেয়ে রেল পুলিশ ও দমকল বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছয়।
https://x.com/ANI/status/1890817914481025132?t=a6cNyZnsQ2Fs6oL7pK5_RA&s=19
প্রয়াগরাজ এক্সপ্রেস ১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মে আসার কথা ছিল, পাশাপাশি কুম্ভগামী ভুবনেশ্বর ট্রেন ১৫ নম্বর ও সেনানী এক্সপ্রেস ১৬ নম্বর প্ল্যাটফর্মে ঢোকার কথা ছিল। রাত ৯টা নাগাদ ১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মে আগে থেকেই ভিড় ছিল। ১৫ ও ১৬ নম্বর প্ল্যাটফর্মে ট্রেন আসার ঘোষণা হতেই দু’টি ট্রেন ধরার জন্য ওভারব্রিজে হুড়োহুড়ি শুরু হয়। ট্রেন ঢোকার মুহূর্তে বিশৃঙ্খলা চরমে পৌঁছয়, যার ফলে পদপিষ্টের ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের কেউ কেউ জানিয়েছেন, স্টেশনে ট্রেনের প্ল্যাটফর্ম বদলের বিষয়ে একটি ঘোষণা করা হয়েছিল। ১২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে যে ট্রেনের আসার কথা, সেটি ১৬-তে আসবে বলে ঘোষণা হয়। দু’দিক থেকে ভিড় প্ল্যাটফর্ম বদলের চেষ্টা করে। তাতেই এই ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া, শনিবার রাতে প্রায় ১৫০০টি জেনারেল টিকিট বিক্রি হয়েছিল নয়াদিল্লি স্টেশনে।
আহতদের উদ্ধার করে নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। স্টেশন থেকেই কয়েক জনের দেহ উদ্ধার করা হয়েছিল। শনিবার রাতে মৃত্যু হয়েছে ১৫ জনের। পরে হাসপাতাল থেকে আরও তিন জনের মৃত্যুর খবর আসে। পুলিশ এই মৃত্যুর পরিসংখ্যান নিশ্চিত করেছে। মৃতদের মধ্যে আছেন ১১ মহিলা, চার শিশু এবং তিন জন পুরুষ।
প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে স্বীকারোক্তি
প্রথমে রেলওয়ে পুলিশ পদপিষ্টের ঘটনা অস্বীকার করলেও, এলএনজেপি হাসপাতালের জরুরি বিভাগের প্রধান ঋতু সাক্সেনা ১৫ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন। পরে রেলের তরফেও ১৫ জনের মৃত্যু স্বীকার করা হয়। রাতে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৮-তে।
কী বলছে রেল প্রশাসন?
রেলের ডিসিপি কেপিএস মালহোত্রা জানিয়েছেন, ‘দু’টি ট্রেন দেরিতে থাকায় বিপুল যাত্রী ভিড় জমায়। মাত্র ১৫-২০ মিনিটের মধ্যেই পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে। বিশেষ ট্রেনের ঘোষণা হতেই সবাই একসঙ্গে ছুটতে থাকেন, যার ফলে এই দুর্ঘটনা ঘটে। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’
রাতেই এই ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সকালে শোকপ্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুও। রেলের তরফে এখনও পদপিষ্টের ঘটনা স্বীকার করা হয়নি। রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব শনিবার রাত সাড়ে ১১টার পর লেখেন, ‘‘নয়াদিল্লি স্টেশনে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। রেলপুলিশ এবং দিল্লি পুলিশ সেখানে আছে। আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ভিড় সামাল দেওয়ার জন্য বিশেষ কয়েকটি ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’ রবিবার সকালে রেলের তরফে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করা হয়েছে। সংবাদ সংস্থা এএনআই জানিয়েছে, রেলের মৃতদের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে। এ ছাড়া, শনিবারের ঘটনায় যাঁরা গুরুতর জখম, তাঁরা পাবেন আড়াই লক্ষ টাকা। যাঁদের আঘাত সামান্য, তাঁদের এক লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে।