ঘরের ছেলের মতই পায়েসের বাটি সাজিয়ে লোকজন খাইয়ে সাড়ম্বরে ২৩ জানুয়ারি নেতাজির জন্ম তিথি পালন!
শুনলে অবাক লাগতেই পারে। কিন্তু বছরের পর বছর এই প্রথাটি নিষ্ঠা ভরে মেনে চলাটাই সোদপুরের মহেন্দ্রনগরের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী নিতাই চন্দ্র বিশ্বাসের দস্তুর। কোনো বছরই এই নিয়মের ব্যতিক্রম হয় না তার। কারণ পঞ্চাত্তর বয়সী এই মানুষটি নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর একনিষ্ঠ ভক্ত। তিনি মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন, নেতাজি দেশ মাতৃকার একান্ত “সাধক” । আর সাধকের কি মৃত্যু হয়! সাধকের মৃত্যুহীন প্রাণ, তিনি তার সাধনার বলে মৃত্যুকেও জয় করেন। তার বিশ্বাস, ” সুভাষ ঘরে ফিরবেন।”
নিতাইয়ের দাবি, ” তাইহকুতে নেতাজির তথাকথিত বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যর তত্ত্ব এক পরিকল্পিত রটনা। এটা শুধু আমার মতো নেতাজি অনুগামীর একার ভাবনা নয়। বহু ইতিহাসবিদ পণ্ডিত ব্যক্তিও এই ব্যাপারে তাদের সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।” তাই প্রতি বছরের মতো এবারও মহেন্দ্রনগরের বাড়িতে মহাশক্তির পূজা পাঠের পর নিতাই ধুতি পাঞ্জাবি পরিহিত নেতাজির প্রতিকৃতির সামনে সাষ্টাঙ্গে প্রনিপাত করে সুভাষের মঙ্গলকামনা করে প্রার্থনা জানাবেন,” ঠাকুর উনি যেখানেই থাকুন, ওনাকে ভাল রেখ, সুস্থ রেখ।”
ফলে পুজো পাঠের আয়োজনে কোনো খামতি নেই। মঙ্গলবার সকাল থেকেই তিন পুরোহিত সর্বেশ্বর চক্রবর্তী, সুমন ভট্টাচার্য ও পার্থ বন্দোপাধ্যায় ব্যস্ত চন্ডী পাঠ ও হোম যজ্ঞে। নিতাইও পুজোর উপাচারে কোনো ত্রুটি রাখেন নি। পুরোহিতের দক্ষিনা বাবদ ধুতি, ১০৮ টি বেলপাতা, নেতাজিকে উৎসর্গ করার জন্যে গোলাপ ফুল, হোম যজ্ঞের জন্য পাটকাঠি, কাঠ, বালি, ঘি, মধু , দুধ, অগরু, ভূজ্জির উপকরণ হিসেবে চাল , ডাল , কলা, আলু, লবণ সবেরই ব্যবস্থা রেখেছেন তিনি। পুরোহিতরা চন্ডী পাঠ, গণেশ, নবগ্রহের পূজো সেরে নেতাজির ছবির সামনে “যন্ত্র” একে তামার টাতে বালি, কাঠ, পাঠ কাঠি সাজিয়ে হোমাগ্নি করলেন।
একাশি বছরের সর্বেশ্বরের কথায়, ” আমার যজমানবৃত্তির অভিজ্ঞ্তা প্রায় পঞ্চাশ বছরের। এখানে আমরা নেতাজির মঙ্গল কামনায় শাস্ত্র মতে পূজো ও হোম করি । ” তার সংযোজন, ” নেতাজির একান্ত অনুগামী সোদপুরের চন্দ্রচুড় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিব প্রসাদ নাগ ১৯৪৮ সালে এই পুজোর পত্তন করেছিলেন। সেই মানুষটি গত হয়েছেন। তারপর হাল ধরেছেন শিবপ্রসাদের ছাত্র নিতাইবাবু ও তার বন্ধুরা। “
বলতে গেলে, নিতাইবাবুর বাড়িতে নেতাজির জন্মতিথি উপলক্ষ্যে শ খানেক নিমন্ত্রিতদের জন্যে ডান হাতের কাজটিও মন্দ থাকে না। এদিনের মেনুতে রয়েছে সরু চালের চালের ভাত, ফুল কপি দিয়ে মুগের ডাল, পনির, পাঁচ মিশালী সবজি, পাঁপড়, চাটনি ও শেষ পাতে নতুন গুরের পায়েস। নিতাই জানালেন, নেতাজির ১২৮ তম জন্ম তিথিতে সন্ধ্যায় জ্বলবে ১২৮ টি মোমবাতি।
তা ১২৮ বছর পরেও নেতাজি এখন জীবিত, এটাকে কি বিজ্ঞান সম্মত বলে মনে হয় নিতাইয়ের। এই প্রশ্নের উত্তর অবশ্য দিলেন পুরোহিত সর্বেশ্বর। তার কথায়, ” এটা আমাদের বিশ্বাস। আপ্ত বাক্য অনুযায়ী, বিশ্বাসে মিলায়ে বস্তু , তর্কে বহু দুর…”