দেশের সময় ওয়েবডেস্ক: কংগ্রেস উঠতে বসতে কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা করে। অথচ দেশের মানুষ কংগ্রেসকে পাত্তাই দেয় না। লোকসভায় দাঁড়িয়ে বক্তব্য পেশের সময় কংগ্রেসকে কার্যত এভাবেই নজিরবিহীন আক্রমণ করলেন নরেন্দ্র মোদী। রীতিমতো খতিয়ান তুলে ধরে তিনি বলেন, “নাগাল্যান্ড শেষবার ১৯৯৮ সালে কংগ্রেসকে ভোটে জিতিয়েছিল। ওড়িশায় ১৯৯৫ সালে শেষবার আপনারা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিলেন। গোয়ায় একই ঘটনা ঘটেছিল ১৯৯৪ সালে। ত্রিপুরায় শেষবার ১৯৮৮ সালে জনতার রায় কংগ্রেসের পক্ষে গিয়েছিল। উত্তরপ্রদেশ, বিহার, গুজরাটে শেষবার ১৯৮৫ সালে জিতেছিলেন আপনারা। আর পশ্চিমবঙ্গের মানুষ তো ১৯৭২ সালে শেষবার কংগ্রেসকে বেছেছিল! তামিলনাড়ুতে আপনারা শেষ সরকার গড়েছিলেন ১৯৬২ সালে। আমার প্রশ্ন হল, আপনারা যদি মাটির কাছেই থেকে থাকেন, তাহলে মানুষ এত বছর ধরে আপনাদের প্রত্যাখ্যান করছে কেন?
আগামী একশো বছরেও ক্ষমতায় আসার ইচ্ছে নেই কংগ্রেসের ৷ তাদের আচার, আচরণেই তা প্রমাণিত হচ্ছে৷ লোকসভায় দাঁড়িয়ে এ দিন এ ভাবেই কংগ্রেসকে তীব্র কটাক্ষ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ তাঁর অভিযোগ, করোনার সময়েও দু’ বছর ধরে নোংরা রাজনীতি করছে কংগ্রেস৷ গোটা বিশ্বে দেশের বদনামও কংগ্রেস করেছে বলে অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী৷
এ দিন লোকসভায় রাষ্ট্রপতির বক্তব্যের উপরে জবাবি ভাষণ রাখতে গিয়ে কংগ্রেসকেই নিশানা করেন প্রধানমন্ত্রী৷ কংগ্রেসকে গরিব, কৃষক বিরোধী বলেও আক্রমণ করেন নরেন্দ্র মোদী৷ তিনি বলেন, ‘আজকে দেশের গরিব মানুষ গ্যাস সংযোগ পাচ্ছেন, বাড়ি, শৌচালয় পাচ্ছেন৷ তাঁদের নিজস্ব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রয়েছে৷ কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে কিছু মানুষের ভাবনাচিন্তা এখনও ২০১৪ সালে আটকে রয়েছে৷’
কংগ্রেসকে বিঁধে প্রধানমন্ত্রী ব্যঙ্গাত্মক ভাবে আরও বলেন, ‘আপনারা আমার বিরোধিতা করতেই পারেন৷ কিন্তু ফিট ইন্ডিয়া মুভমেন্ট বা অন্যান্য প্রকল্পগুলির বিরোধিতা করছেন কেন? ফলে আপনারা যে এত বছর ধরে ক্ষমতায় নেই, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই! আপনাদের আচার আচরণ দেখে স্পষ্ট, আগামী একশো বছরেও ক্ষমতায় আসার ইচ্ছে নেই৷’
কংগ্রেসকে কটাক্ষ করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, তাদের আমলে তৈরি হওয়া ঝাড়খণ্ড, তেলেঙ্গানার মতো রাজ্যেও হারের মুখ দেখতে হয়েছে কংগ্রেস৷ নরেন্দ্র মোদির কটাক্ষ, এত বছর ধরে হারের পরেও কংগ্রেসের অহঙ্কার ঘোচেনি৷
প্রধানমন্ত্রীর মুখে এমন মন্তব্য শুনে তেড়েফুঁড়ে ওঠেন কংগ্রেস সাংসদ অধীররঞ্জন চৌধুরী। জবাবে, তাঁর সঙ্গে রীতিমতো হাসি, ঠাট্টা শুরু করে দেন মোদী। এমনকী, অধীরের উদ্দেশ্যে বলেন, যাঁদের নজরে পড়ার জন্য তিনি এত চেষ্টা করছেন, তাঁদের নজর ইতিমধ্যেই তাঁর উপর পড়েছে। তাই আর চেঁচামিতি করার কোনও প্রয়োজন নেই। একইভাবে প্রবীণ তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়কে নিয়েও মশকরা করতে ছাড়েননি প্রধানমন্ত্রী। সৌগতকে ‘দাদা’ সম্বোধন করে তিনি বলেন, “এই বয়সে এসেও ছেলেমানুষি করছেন” তৃণমূল সাংসদ। মোদ্দা কথা হল, বিরোধীরা প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের রাজনৈতিক বিরোধিতা করলেও ব্যঙ্গের মোড়কে মোদী সেই প্রতিবাদের ভাষাকেও লঘু করে দিয়েছেন।
মোদি সরকারকে কৃষক বিরোধী বলে গত কয়েকমাসে সুর চড়িয়েছিল কংগ্রেস সহ বিরোধীরা৷ এ দিন অবশ্য নাম না করে পাল্টা কংগ্রেসকেই কৃষক বিরোধী বলে তোপ দেগেছেন প্রধানমন্ত্রী৷ তাঁর আরও দাবি, ফ্রেট করিডরের মতো যে প্রকল্পগুলি কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের আমলে শুরু হয়েছিল, সেই প্রকল্পগুলির কাজেও ২০১৪ সালের পর থেকে গতি এসেছে৷ মোদীর প্রশ্ন, ‘এত বছর ক্ষমতায় থাকার পরেও কংগ্রেস কেন চারধামের রাস্তাকে সব ধরনের আবহাওয়াতে যাতায়াতের উপযোগী করার কথা ভাবল না?’
প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেছেন, করোনা অতিমারির মধ্যে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি যেখানে পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি ফিরে আসতে উৎসাহ দিয়েছে, সেখানে মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যে ক্ষমতায় থেকেও পরিযায়ী শ্রমিকদের উস্কানি দিয়েছে কংগ্রেস৷
কোভিডের তৃতীয় ওয়েভের (Third Wave) সময় দেশ জুড়ে বেড়েছে জিনিসপত্রের দাম। কিন্তু সোমবার সংসদের বাজেট অধিবেশনে (Budget Session) মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে কংগ্রেসকে বিঁধলেন প্রধানমন্ত্রী। এক্ষেত্রে ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুকে (Jawaharlal Nehru) উদ্ধৃত করেন তিনি। তাঁর কথায়, “প্রথম প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, যদি কোরিয়ায় কিছু ঘটে, এখানে জিনিসপত্রের দামের ওপরে তার প্রভাব বাড়ে। একবার ভেবে দেখুন, মূল্যবৃদ্ধি কী সাংঘাতিক সমস্যা।”
পরে তিনি বলেন, কোভিড অতিমহামারী সত্ত্বেও বর্তমানে মুদ্রাস্ফীতি ৫.২ শতাংশে বেঁধে রাখা গিয়েছে। কিন্তু ইউপিএ-র আমলে মুদ্রাস্ফীতি হয়েছিল ১০ শতাংশ।
এ দিন তাঁর সরকারের সাফল্যেরও বিশদে ব্যাখ্যা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী৷ দাবি করেছেন করোনা অতিমারির ধাক্কা সামলে কীভাবে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতিগুলির মধ্যে অন্যতম দ্রুত গতিতে বেড়ে চলেছে ভারত৷ নরেন্দ্র মোদির অবশ্য আক্ষেপের সুরে বলেন, দেশ যখন এত দ্রুত গতিতে উন্নতির পথে এগোচ্ছে, তখন সকাল থেকেই কংগ্রেস নেতারা তাঁর সরকারের বিরোধিতায় নেমে পড়েন৷ প্রধানমন্ত্রী যখন বক্তব্য রাখছেন, তখন বার বার প্রতিবাদে সরব হন অধীররঞ্জন চৌধুরী সহ কংগ্রেস সাংসদরা৷ নরেন্দ্র মোদি অবশ্য কটাক্ষ করে বলেন, ‘যাঁরা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেন না, তারা নিজেরাই ইতিহাসের গহ্বরে তলিয়ে যান!’
দিল্লি সরকারের সমালোচনা করে মোদী বলেন, তারা পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি ফেরার জন্য বাসের ব্যবস্থা করেছিল। উত্তরপ্রদেশে ও আরও কয়েকটি প্রদেশে প্রথমদিকে করোনা সংক্রমণ খুব তীব্র হয়নি। কিন্তু বিরোধীদের জন্য পরবর্তীকালে সংক্রমণ ব্যাপক বেড়ে যায়।
কিন্তু, ভোটের মুখে কংগ্রেসকে এমন নজিরবিহীন আক্রমণের কারণ কী? ওয়াকিবহাল মহলের ব্যাখ্যা, লড়াইয়ের আগেই কংগ্রেস কর্মীরা যাতে হতোদ্যম হয়ে পড়েন, তার জন্যই এদিন এতটা আক্রমণাত্মক ছিলেন মোদী। এমনিতেই কংগ্রেসের অন্দরে নেতৃত্বের টানাপোড়েন রয়েছে। কংগ্রেসের নিচুতলার কর্মীদের মনোবলও আর আগের মতো চাঙ্গা নেই। উপরন্তু, মোদী তাঁদের বুঝিয়ে দিলেন, কংগ্রেস নেতানেত্রীরা আদতে ক্ষমতায় ফিরতেই চান না। এই ধারণা একবার কংগ্রেস কর্মীদের অন্তরে গেঁথে গেলে গেরুয়া শিবিরের সুবিধা বাড়বে। সুকৌশলে মোদী এদিন সেই কাজটিই করেছেন।
মোদী বলেন, কেউ কেউ ভেবেছিল, অতিমহামারীর ফলে আমার ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। তিনি বিরোধীদের উদ্দেশে প্রশ্ন তোলেন, “এই দেশ কি আপনাদের নয়? দেশের মানুষের দুঃখ বা আনন্দ কি আপনাদেরও দুঃখ বা আনন্দ নয়?”