দেশের সময় লোকসভা নির্বাচনের প্রচার শেষ। আর রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামাতে চান না প্রধানমন্ত্রী। ভোট প্রচার শেষ হতেই তিনি বসেছেন ধ্যানে। কন্যাকুমারীর বিবেকানন্দ রকে একটানা ৪৫ ঘণ্টা ধরে ধ্যান করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ১ জুন সন্ধ্যায়, সপ্তম তথা শেষ দফার ভোটপর্ব মেটার পরই তিনি ধ্যান কক্ষ থেকে বের হবেন। ইতিমধ্যেই সাধারণ মানুষের মনে জেগেছে হাজারো প্রশ্ন। কেমন ধ্যান করবেন প্রধানমন্ত্রী, ধ্যানের সময়ে তিনি কি খাবেন? এই সমস্ত প্রশ্নেরই রইল উত্তর।
পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী সপ্তম তথা শেষ দফার ভোটের প্রচার শেষ করেই কন্যাকুমারীর উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সেখানকার বিবেকানন্দ রক মেমোরিয়ালের ‘ধ্যানমণ্ডপম’-এ ধ্যানে বসেন তিনি। তার পর প্রায় ১৫ ঘণ্টা পেরিয়ে যাওয়ার পর, শুক্রবার সকাল ১০টা নাগাদ প্রকাশ্যে এল মোদীর ধ্যানে বসার ছবি।
তামিলনাড়ুর কন্যাকুমারীতে বিবেকানন্দ রকে ধ্যানে বসেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ১৩১ বছর আগে এখানেই ধ্যানে বসেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ।
বৃহস্পতিবার সন্ধে ৬টা ৪৫ মিনিট নাগাদ ধ্যানে বসেন প্রধানমন্ত্রী। ১ জুন সন্ধ্যা পর্যন্ত ধ্যান করবেন তিনি। এই সময়ের মধ্যে তিনি একবারও ধ্যান মণ্ডপ থেকে বের হবেন না।
সূত্রের খবর, ধ্যানের সময় কোনও অন্ন গ্রহণ করবেন না প্রধানমন্ত্রী মোদী। সম্পূর্ণ তরল ডায়েটে থাকবেন তিনি। শুধুমাত্র ডাবের জল, আঙুরের জ্যুস ও অন্যান্য পানীয় পান করবেন।
বাকি কোনও খাবার খাবেন না। ৪৫ ঘণ্টার এই পুরো সময়টাই মৌন ব্রত পালন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এমনটাই সূত্রের খবর।
বৃহস্পতিবার তামিলনাড়ুর কন্যাকুমারীতে পৌঁছে প্রধানমন্ত্রী প্রথমে যান ভগবতী আম্মান মন্দিরে। রীতি মেনে সাদা ধুতি ও শাল গায়ে জড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী গর্ভগৃহে যান। সেখানে বিশেষ আরতি করেন। মন্দিরের প্রসাদও গ্রহণ করেন তিনি। এরপরই বিবেকানন্দ রকে ধ্যান মন্ডপে ধ্যানে বসেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।
বিজেপির ফেসবুক পেজ থেকে মোট চারটি ছবি প্রকাশ করা হয়। একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, গেরুয়া বসন পরে, হাতজোড় করে ধ্যানে বসেছেন মোদী। প্রধানমন্ত্রীর ধ্যানে বসার আরও তিনটি ছবিও প্রকাশ করা হয়েছে।
সূত্রের খবর, সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে ‘ধ্যানমণ্ডপম’-এ ধ্যানে বসেন মোদী। যদিও বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত তাঁর ধ্যানে বসার কোনও ছবিই প্রকাশ্যে আসেনি। শেষ দফা ভোটের আগে মোদীর এই ধ্যান নিয়ে সরব হয়েছিল সিপিএম এবং কংগ্রেস। প্রধানমন্ত্রীর ধ্যানমগ্ন হওয়ার ছবি যাতে টেলিভিশনে সম্প্রচারিত না হয়, সেই বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছিল তারা। তাদের বক্তব্য ছিল, প্রধানমন্ত্রীর ধ্যানমগ্ন হওয়ার ছবি প্রচারমাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হলে সপ্তম দফার ভোটে তা নির্দিষ্ট একটি দল (বিজেপি)-কে বিশেষ সুবিধা পাইয়ে দেবে।
কমিশনের আদর্শ আচরণবিধি যাতে ভঙ্গ না হয়, সেই কারণে এই সম্প্রচার বন্ধ রাখার আর্জি জানানো হয়। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও প্রশ্ন তোলেন ছবি তোলা প্রসঙ্গে। সে কারণেই কন্যাকুমারীতে ধ্যানমগ্ন মোদীর কোনও ছবিই প্রকাশ্যে আসেনি বলে মনে করছিলেন অনেকে। তবে জল্পনার অবসান ঘটিয়ে শুক্রবার সকালে প্রথম বারের জন্য প্রকাশ্যে এল ধ্যানমগ্ন প্রধানমন্ত্রীর ছবি।
আগামী ১ জুন, শনিবার লোকসভা নির্বাচনের শেষ দফার ভোটগ্রহণ। আট রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ৫৭টি আসনে ভোটগ্রহণ ওই দিন। ওই দফাতেই ভোট রয়েছে মোদীর কেন্দ্র বারাণসীতে। ৪ জুন ভোটগণনা। শেষ দফার ভোটের জন্য প্রচার শেষ হয়েছে বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায়। তার পরেই কন্যাকুমারী পৌঁছে যান মোদী।
প্রধানমন্ত্রীর দফতর সূত্রে খবর ছিল, ৩০ মে সন্ধ্যা থেকে ১ জুন সন্ধ্যা পর্যন্ত— দু’দিন বিবেকানন্দ রক মেমোরিয়ালে ধ্যান করতে চলেছেন মোদী। সে কারণে সৈকতে জারি করা হয়েছে নিরাপত্তা।
শনিবার পর্যন্ত সেখানে যেতে পারবেন না পর্যটকেরা। সাগরে কোনও বেসরকারি নৌকা চলবে না। কন্যাকুমারী জেলায় মোতায়েন করা হয়েছে ২,০০০ পুলিশ কর্মী। এর আগে দু’বার লোকসভা নির্বাচনের প্রচার শেষেও আধ্যাত্মিক সফরে বেরিয়েছিলেন মোদী। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের প্রচার শেষে গিয়েছিলেন কেদারনাথ। ২০১৪ সালে গিয়েছিলেন মহারাষ্ট্রের শিবাজির প্রতাপগড় দুর্গে।