দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ আত্মরতিতে ব্যস্ত এক যুবতী। পারিপার্শ্বিক ভাবনা লোপ পেয়েছে। মুখের অভিব্যক্তিতে কত অতৃপ্ত বাসনা ধুয়ে মুছে যাচ্ছে। ক্লান্ত, বিধ্বস্ত মুখে হাসি ফুটছে। বলিউডের ‘লাস্ট স্টোরিজ’ সিনেমায় স্বমেহন বা হস্তমৈথুনের দৃশ্য ঝড় তুলেছিল।
মহিলাদের হস্তমৈথুন নিয়ে সমাজে অনেক ট্যাবু আছে। তাতে লাভ না ক্ষতি সে নিয়ে নানা তর্ক-বিতর্কও আছে। কিন্তু যদি এমন অভ্যাস প্রাণ সংশয়ের কারণ হয়ে ওঠে তবে তাতে ক্ষতির পাল্লাই বেশি ভারী। এক তরুণী যৌনসুখ পেতে হস্তমৈথুনের সময়ে আস্ত একটা টর্চই ঢুকিয়ে ফেলেছিলেন যোনিতে। সেটা জরায়ুতে গিয়ে ৮ বছর আটকে ছিল। তারপর যা হল তা রীতিমতো চমকে দেবে।
কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে সেই মেয়েটিকে যখন নিয়ে আসা হয় তাঁর অবস্থা অত্যন্ত সঙ্কটজনক। দীর্ঘ ৮ বছর ধরে জরায়ুতে টর্চ বয়ে বেড়াচ্ছিলেন তিনি। মারাত্মকভাবে জুড়ে গিয়েছিল জরায়ু ও রেক্টাম। দলা দলা পচা মল বেরতে শুরু করেছিল জরায়ু দিয়ে। সেই সঙ্গে বমি, যোনি দিয়ে রক্তপাত। জটিল অস্ত্রোপচার করে মেয়েটির প্রাণ বাঁচান এনআরএসের ডাক্তারবাবুরা।
ডাক্তারদের কাছে সেই তরুণী স্বীকার করেছেন, তাঁর বয়স যখন ১৫ বছর তখন এই ঘটনা ঘটে। হস্তমৈথুন করার অভ্যাস তাঁর ছিলই। নানারকম জিনিস যোনিতে ঢোকাতেন তিনি। একদিন চরম উত্তেজনা পেতে একটি ছোটো টর্চ ঢুকিয়েছিলেন যোনিতে। কিন্তু সেটা বের করতে পারেননি। পিছলে তা ঢুকে যায় ভেতরে। লজ্জায় বাড়ির কাউকে ব্যাপারটা জানাতে পারেননি তিনি।
বয়ঃসন্ধির সেই ঘটনা বেমালুম চেপে গিয়েছিলেন। এরপরও নানাবিধ শারীরিক সমস্যা হয়েছিল, ঋতুস্রাব হয়ে গিয়েছিল অনিয়মিত, কিন্তু কাউকে কিছু জানাতে পারেননি তরুণী। এইভাবে কেটে যায় ৮ বছর। বিয়েও হয় মেয়েটির। সমস্যা শুরু হয় এর পরেই।
মেয়েটির পরীক্ষা ও অস্ত্রোপচার করেন এনআরএস গাইনি বিভাগের অধ্যাপক ডা. রুণা বল, প্লাস্টিক সার্জন ডা. অমিত রায় ও ডা. সৌরদীপ দত্ত। অ্যানাস্থেশিয়ার দায়িত্বে ছিলেন ডা. মানব সরকার, ডা. দেবানন্দ। ডাক্তারবাবুরা বলছেন, ৫ সেন্টিমিটার লম্বা ও ৩ সেন্টিমিটার চওড়া টর্চ ঢুকেছিল জরায়ুতে।
এমনভাবে সেটি জরায়ুতে আটকে ছিল যে তার সঙ্গে রেক্টাম বা পায়ুদ্বারও জুড়ে গিয়েছিল। ফলে জরায়ু দিয়ে পায়খানা বেরতে শুরু করেছিল। প্রায় চার ঘণ্টার অস্ত্রোপচারে টর্চটি বের করা হয়। জরায়ুও বাদ দিয়ে হয় মেয়েটির। ডাক্তারবাবুরা বলেছেন, এখনও আরও দুটি সার্জারি করতে হবে। এখনও সম্পূর্ণ বিপদ কেটেছে তা বলা যাচ্ছে না। দুঃখের ব্যাপার হল ভবিষ্যতে মেয়েটি আর মা হতে পারবেন না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে নারীর হস্তমৈথুন নিয়ে প্রকাশ্যে যতটা কথাবার্তা হয়, ভারতে তা একেবারেই হয় না বললে চলে। হস্তমৈথুনরত পুরুষকে দেখলে যতটা সমালোচনা হবে, স্বমেহনে ব্যস্ত নারী মানেই লজ্জার পারদ আরও চড়বে।
নিম্নরুচি, অপরাধী নানা তকমা সেঁটে দেওয়ার রেওয়াজ চলে আসছে সেই প্রাচীনকাল থেকেই। হস্তমৈথুন নিয়ে অনেক ভুল ধারণাও আছে সমাজে। তাই যে বিষয়টাকে গোপনীয়তার মোড়কে রাখা হয় তাই নিয়েই কৌতুহল আরও বাড়ে। ব্যাপারটা কী তা জানতে বুঝতে এবং অনুকরণ করতে গিয়ে ভুল করে ফেলে কমবয়সীরা।
এখনকার সময় স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, ট্যাব আর ইন্টারনেটের এত সুবিধার জন্যই এমন অনেক কিছু অভ্যাস করতে শুরু করে ছোটরা যার পরিণাম সম্বন্ধে তাদের ধারণাই নেই। বাড়ির বড়রাও খোলামেলা আলোচনা করতে দ্বিধাবোধ করেন। ফলে বিপদ ঘনিয়ে আসে অচিরেই।